রাজ কর্মচারীর বেতনে পৌনে চারশ’ বছরের মসজিদ

মহিউদ্দিন মোল্লা।
কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার বড় শরীফপুর। এই গ্রামে ১৬৫৭সালে নির্মিত হয় একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ। এটি শরীফপুর শাহী জামে মসজিদ নামে পরিচিত। মসজিদটি এখনও আগের মতো রয়েছে। পৌনে চারশ’ বছরেও এটির সৌন্দর্য নষ্ট হয়নি। চুন সুরকীর মসজিদটি দেখতে প্রতিদিনই সেখানে মানুষ ভিড় জমান। অনেকে এসে নামাজ পড়েন। তিন জেলার মোহনায় এই মসজিটির অবস্থান। পাশে চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলা। কিছু দূরে নোয়াখালীর চাটখিল।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়,মসজিদের বাইরের দৈর্ঘ্য ১৪.৪৮মিটার ও প্রস্থ ৫.৯৪ মিটার। মসজিদের উপরে তিনটি গম্ভুজ রয়েছে। গম্ভুজে পদ্মফুলের নকশা রয়েছে। মসজিদের সামনের দেওয়ালে ফার্সি ভাষায় শিলালিপি রয়েছে। সেখানে উল্লেখ আছে জনৈক হায়াতে আবদুল করিম মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। হায়াতে আবদুল করিমের পরিচয় নিয়ে দুইটি মত রয়েছে, একটি হচ্ছে তিনি নাটেশ্বর নামের এক রাজার কর্মকর্তা ছিলেন। আরেকটি মত তিনি শাহ সৈয়দ বাগদাদী নামের একজন দরবেশের মুরিদ ছিলেন। এছাড়া মসজিদ নির্মাণ নিয়েও বিভিন্ন মত রয়েছে।
শরীফপুর গ্রামের নুরে আলম বলেন,শাহ শরীফ পীর সাহেব এই এলাকায় আসার আগে তার একজন প্রতিনিধি পাঠান। তার নাম হায়াতে আবদুল করিম। তিনি এসে তৎকালীন রাজা নাটেশ^রের কোষাগারে চাকরি নেন। এক সময় রাজাকে বলেন- তিনি মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। তার নামাজের জন্য একটা জায়গা দেয়ার আবেদন করেন। রাজা তখন মসজিদ নির্মাণ করে দেন। তার বেতন থেকে রাজা সেই টাকা সমন্বয় করেন।
হাজীপুরা গ্রামের এনামুল হক চৌধুরী বলেন,তিনি প্রবীণদের নিকট শুনেছেন-মসজিদের স্থানে একজন দরবেশের আগমন ঘটে। তিনি এখানে তাঁবু বানিয়ে থাকতেন। তিনি ইসলামের বাণী প্রচার করতে থাকায় মানুষ দলে দলে মুসলিম হতে থাকে। এটি শুনে নাটেশ^র রাজার সৈন্যরা আসেন তাকে সরিয়ে দিতে। তারা এসে দরবেশকে আর চোখে দেখতে পান না। তবে এলাকাবাসী দরবেশকে দেখতে পান। এই ঘটনার পর ওই এলাকায় মুসলিম হওয়ার সংখ্যা আরো বাড়তে থাকে। এরপর এখানে একটি মসজিদ নির্মাণ হয়। এটির নেতৃত্বে ছিলেন-হায়াতে আবদুল করিম।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি মোতাহার হোসেন চৌধুরী বলেন, বড় শরীফপুরের এই মসজিদটি দেখতে প্রতিদিনই সেখানে মানুষ আসেন। এই মসজিদের ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। মসজিদের ভেতরে বাইরে মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক মানুষ নামাজ পড়তে পারেন। এখানে নামাজ পড়ে শান্তি পান বলে মুসল্লিরা জানান।
কুমিল্লাস্থ মনোহরগঞ্জ জনকল্যাণ সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন,জেলা সদর থেকে মসজিদটি ৪০কিলোমিটার ও উপজেলা সদর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই মসজিদের একদিকে ডাকাতিয়া নদী,অন্যদিকে নরহ খাল। অপরদিকে মনোহরগঞ্জ-হাসনাবাদ সড়ক। পেছনে রয়েছে বিশাল নাটেশ্বর দিঘি। একটু অদূরে মাজার শরীফ। এখানে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠতে পারে।
প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের সাবেক আঞ্চলিক পরিচালক ড. আতাউর রহমান বলেন,এটি জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাচীন মসজিদ। এটি বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় সংরক্ষিত। এখানে একটি প্রত্ন পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
