রোবট উৎসবে মেতেছে কুমিল্লার শিক্ষার্থীরা


অফিস রিপোর্টার।।
কুমিল্লায় এর আগে উল্লেখযোগ্য তিনটি রোবট তৈরি করেছে শিক্ষার্থীরা। দুইটি করেছে কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তা হচ্ছে সিনা ও ব্লুবেরি। একটি করেছে বেসরকারি ব্রিটানিয়া বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তা হচ্ছে মিয়া-১। সে ধারায় কুমিল্লায় এখন একাধিক রোবট তৈরির উৎসবে মেতেছে শিক্ষার্থীরা। কুমিল্লা রোবটিক্স ও প্রোগ্রামিং ক্লাবের উদ্যোগে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের ল্যাবে চলছে ১২০জন শিক্ষার্থীর প্রশিক্ষণ। এছাড়া জেলা প্রশাসনের ল্যাবে চলছে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ।
ল্যাব দুইটি পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের ল্যাবে গ্রুপ করে শিক্ষার্থীরা প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছে। তাদের চোখে মুখে সৃষ্টি সুখের উল্লাস। প্রশিক্ষক কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জুয়েল নাথের লেকচার তারা মনোযোগ সহকারে শুনছে। ল্যাবে ৫ম থেকে ১০ শ্রেণীর শিক্ষার্থী রয়েছে। রয়েছে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। বাইরে অভিভাকরা ঘুরাফেরা করছেন। জেলা প্রশাসনের ল্যাবে গিয়ে দেখা যায়, থ্রিডি প্রিন্টারে চলছে রোবটের বডি প্রিন্ট। প্রশিক্ষকের সাথে সেন্সর নিয়ে কাজ করছেন শিক্ষার্থীরা।
জেলা প্রশাসনের আইসিটি শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার কানিজ ফাতেমা বলেন, কুমিল্লা রোবটিক্স ও প্রোগ্রামিং ক্লাবের প্রতিষ্ঠা করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান মহোদয়। কুমিল্লা নগরীর ১৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাত শতাধিক শিক্ষার্থীকে নিয়ে প্রথমে তিনদিনের কর্মশালা করা হয়েছে। তার থেকে বাছাই করে ১২০জন শিক্ষার্থী নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদী প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রত্যেক উপজেলায় কুমিল্লা রোবটিক্স ও প্রোগ্রামিং ক্লাবের উদ্যোগে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
কুমিল্লা হাই স্কুলের ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মাহমুদা বিন মহসিন বলেন, প্রশিক্ষণে অনেক কিছু শিখতে পারছি। এই এক নতুন অভিজ্ঞতা। আশা করছি এই কর্মশালার মাধ্যমে ভালো কিছু করতে পারবো।
মাহমুদার মতোই আনন্দিত কুমিল্লা আলীয়া মাদ্রাসার ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মো. ইমাম হোসেন।
শিরিন আক্তার নামের এক অভিভাবক বলেন, আমার মেয়ে জিনাত আক্তার ১০ শ্রেণীতে পড়ে। সে ছোট বেলা থেকে প্রযুক্তির বিষয়ে আগ্রহী। এই কর্মশালায় এসে সে খুবই খুশি।
প্রশিক্ষক দলের প্রধান সঞ্জিত মন্ডল বলেন, কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ের ৫জন শিক্ষার্থী প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছি। আমরা ১২০জন শিক্ষার্থী নিয়ে কাজ করছি। শিক্ষার্থীদের অনেক আগ্রহ। তাদের থেকে ভালো ফলাফল আসবে বলে আশা করছি।
কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ নার্গিস আক্তার বলেন, অনেক শিক্ষার্থী প্রযুক্তির অপব্যবহারের দিকে ঝুঁকেছে। এরকম কার্যকরী প্রশিক্ষণ তাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা সময়টা কাজে লাগাতে পারবে।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ড. আবু জাফর খান বলেন, জেলা প্রশাসনের এটি ব্যতিক্রম উদ্যোগ। যা শিক্ষার্থীদের উপকারে আসবে। জেলা প্রশাসনের মতো আমরাও শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রযুক্তি নির্ভর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেবো।
কুমিল্লা রোবটিক্স ও প্রোগ্রামিং ক্লাবের সভাপতি কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ৪১সালের উন্নত বাংলাদেশ ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ উদ্ভাবক সৃষ্টির লক্ষে আমরা কাজ করছি। সে নিরিখে কুমিল্লা রোবটিক্স ও প্রোগ্রামিং ক্লাব গঠন করা হয়েছে। নগরীর শিক্ষার্থীদের নিয়ে কর্মশালা চলছে। উপজেলায়ও এই কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হবে। ১০০জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে রোবটিক্স ও প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। বিজয়ী পাঁচজনকে ল্যাপটপ প্রদান করা হবে। এছাড়া তাদের নিয়ে একটি রোবট তৈরি করা হবে। তা ১৭ মার্চ উদ্বোধনের পরিকল্পনা রয়েছে। সেটি জেলা প্রশাসনে স্থাপন করা হবে। রোবটটি অনুসন্ধান ডেস্কের কাজ করবে।