শিক্ষার্থীদের আগ্রহ নেই পদচারী সেতু ব্যবহারে

সানোয়ার হোসেন, চৌদ্দগ্রাম।। 
নিরাপদে পারাপারের জন্য ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ৪৪ কিলোমিটার অংশে নির্মিত পদচারী-সেতু গুলো ব্যবহারে আগ্রহ নেই শিক্ষার্থীদের। উপজেলার বিভিন্ন বাজার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে নির্মিত পদচারী-সেতু গুলো ব্যবহারে আগ্রহ নেই কারো। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করেন সবাই। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পদচারী-সেতু গুলো বর্তমানে শুধু রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যানার টানানোর কাজে হয় ব্যবহার।
২০১১ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত হওয়ার পর চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ৪৪ কিলোমিটার অংশে দুর্ঘটনা রোধে ব্যস্ততম ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে সড়ক পারাপারের জন্য ৭টি পদচারী-সেতু নির্মাণ করা হয়। মিয়া বাজার কলেজ অংশে, কালিকাপুর ইউনিয়নের মিরশান্নী বাজার, চৌদ্দগ্রাম সরকারি কলেজ অংশে, চৌদ্দগ্রাম বালিকা বিদ্যালয় অংশে, জগন্নাথদীঘি ইউনিয়নের ফাঁসি বটগাছ, গাংরা রাস্তার মাথা, পদুয়া রাস্তার মাথা ও লাটিমী রাস্তার মাথায় পদচারী-সেতু নির্মাণ করা হয়।
গুরুত্ব বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হওয়ার কথা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের সামনের পদচারী সেতুটি। কিন্তু সেটিও অলস পড়ে আছে পদচারীর অপেক্ষায়। রোগী ও শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে পদচারী-সেতুর নিচ দিয়ে চলাচল করছেন আগের মতোই।
২০১৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সড়ক পারাপারের সময় চৌদ্দগ্রাম মাধ্যমিক পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী উম্মে রুমান মারজানা (১৩) কাভার্ড ভ্যানের চাপায় নিহত হয়। এরপর পদচারী-সেতুর জন্য আন্দোলনে নামে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা। আন্দোলনের মুখে ২০২০ সালে বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে আরও একটি পদচারী-সেতু নির্মাণ করা হয়।
চৌদ্দগ্রাম পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের সামনের পদচারী-সেতুর পাশের ঔষধ দোকানি মোঃ হোসেন বলেন, আন্দোলনের পর পদচারী-সেতু নির্মাণ হয়েছিল কিন্তু কাউকে চলাচল করতে দেখিনা।
পদচারী সেতু ব্যবহারে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করা হয় কি না জানতে চাইলে পদচারী সেতুর জন্য আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া চৌদ্দগ্রাম মাধ্যমিক পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা শাকিলা সুলতানা বলেন, আমরা নিয়মিত শ্রেণীকক্ষে ছাত্রীদেরকে পদচারী-সেতু ব্যবহারের জন্য বলছি কিন্তু শিক্ষার্থীরা আমাদের কথা শুনছেনা।
অসহায়ত্ব প্রকাশ করে একই কথা বললেন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘পদচারী-সেতু ব্যবহারে আমি নিজে প্রায়ই ছুটির সময় পদচারী-সেতুর নিচে গিয়ে দাঁড়াই, তাদেরকে বলি; কিন্তু এরপরও তারা সেতু ব্যবহার করেনা। আমাকে দেখে একটু দূরে গিয়ে সড়ক পার হয়। আমরা চলতি সপ্তাহে ম্যানেজিং কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা করেছি, প্রতিদিন শ্রেণীকক্ষে ও ছুটির সময় বিদ্যালয়ের মাইকে বলা হয়। এবং প্রতিদিন দারোয়ান ও বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী গিয়ে ছাত্রীদেরকে সেতু ব্যবহারের জন্য বলে।
চৌদ্দগ্রাম সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা কলেজের সামনের পদচারী-সেতু ব্যবহার না করার বিষয়ে কলেজের অধ্যাপক শিব প্রশাদ দাশ গুপ্ত বলেন, ‘একটু হেঁটে গিয়ে পার হওয়া লাগে বিধায় হয়তো শিক্ষার্থীরা এটা ব্যবহার করেনা। আমরা আগামীতে শ্রেণীকক্ষে এ বিষয়ে উৎসাহিত করবো।’
মিয়াবাজার হাইওয়ে থানা পুলিশ ফাঁড়ির অফিসার ইনচার্জ শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘দুই ঈদে ঝুঁকি বিবেচনায় আমরা তিন দিন করে মাইকিং করি। পদচারী-সেতু ব্যবহারে দুই পাশে বেরিয়ার নির্মাণ করতে হবে। ইতোমধ্যে আমাদের এসপি মহোদয় সড়ক ও জনপদের হেড অফিসে চৌদ্দগ্রামের ঝুঁকিপূর্ণ দুই জায়গা চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও মিয়া বাজার অংশে বেরিয়ারের নির্মাণের আবেদন করেছেন। উপজেলা আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে এই বিষয় উত্থাপন করেছি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জামাল হোসেন বলেন, ‘পদচারী-সেতু ব্যবহার নিয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। পদচারী-সেতু ব্যবহারে উৎসাহিত করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’
inside post
আরো পড়ুন