২৪‘র ক্ষত শুকায়নি ২৫‘র চোখ রাঙ্গানি !

সানোয়ার হোসেন,চৌদ্দগ্রাম।
গত বছর স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার ক্ষতি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মানুষ। এর মধ্যে চলতি বর্ষায় চোখ রাঙ্গাচ্ছে বন্যা। কৃষি, মৎস্য, ডেইরি, পোল্ট্রিসহ অবকাঠামো খাতের ক্ষত ও ক্ষতি এখনো ভোগাচ্ছে উপজেলার মানুষদের। পুনর্বাসন ও সহায়তা হিসেব হলেও ক্ষতির হিসেব বেহিসেবী। পূঁজি হারিয়ে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে দিকভ্রান্ত উদ্যোক্তারা। ক্ষতবিক্ষত গ্রামীণ সড়কগুলোয় চলাচলের সময় ঝাঁকুনি প্রতিদিন স্মরণ করায় ভয়াবহতা। যার ফলে এবার একটু ভারী বৃষ্টিতেই আতঙ্কিত হচ্ছেন উপজেলার মানুষ। তবে সম্ভাব্য বন্যার আশঙ্কা থেকে এবার উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। পরিচালনা করছে বন্যা ও জলাবদ্ধতা প্রতিরোধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জামাল নেতৃত্বে খাল খনন ও পরিষ্কার কার্যক্রম।
জানা গেছে, গত বছর আগস্টের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তাদের অনেকেই ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি এখনো। এরমধ্যে এবারের ভারী বৃষ্টি ও আবহাওয়া পূর্বাভাস চিন্তিত করে তুলেছে তাদের। গত বছর আমন রোপন করতে না পারা কৃষকরা জৈষ্ঠ্যমাসের শেষে বীজতলার আমনের চারা বপন করার কথা। তারাও আছেন অনিশ্চতায়।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যানুযায়ী গত বছর উপজেলায় আমন রোপনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮১৯০ হেক্টর। চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৫১৩৫৪ মেট্রিক টন। বন্যার পূর্বে রোপন করা হয়েছিল ৮১৮৫ হেক্টর জমিতে, যার মধ্যে ৭৭৭৫ হেক্টর জমির চারা পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে। পুনরায় রোপন হয় (প্রায়) ১০৯১৪ হেক্টর। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ক্ষতিগ্রস্থ ছয় হাজার কৃষককে প্রণোদনার আওতায় প্রত্যেককে পাঁচ কেজি করে বীজ ধান, বিশ কেজি সার ও বিকাশের মাধ্যমে নগদ এক হাজার টাকা প্রদান করে।
ক্ষতিগ্রস্ত গবাদিপশু ও পোল্ট্রি খাতের ক্ষতি ছিল বড় অংকের। রাতের আঁধার ও দিনের আলোতে চোখের সামনে খামার থেকে ভেসে গেছে হাঁস, মুরগি, গরু। মুহূর্তেই নিঃস্ব হয়ে যান ব্রয়লার মুরগীর খামারীরা। উপজেলা প্রাণীসম্পদের দেয়া তথ্যমতে বন্যায় উপজেলায় ১৬৯টি ভেড়া, ৫৬৮০টি ছাগল, ১০৫৪৬টি ছাগল, ২টি মহিষ, ৫১০টি হাঁস, ৬০১২২৫টি মুরগি মারা গেছে। কোটি কোটি টাকা ক্ষতির বিপরীতে সর্বস্বান্ত খামারীদের সহায়তা হিসেবে দেয়া হয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ২৫০ জনকে ২১০ ব্যাগ ভুসি মিক্স দেয়া হয়। বিভিন্ন এনজিও ও ডেইর ফার্মারস এসোসিয়েশনের অর্থায়নে আনুমানিক ১ হাজার জন খামারিকে রেডি ফিড, ভূসি, সাইলেজ ও খড় প্রদান করা হয়েছে। ৬৫ জন খামারিকে মুরগি প্রদান করা হয়েছে।
তবে গতবারের বন্যা এখনো উপজেলার মানুষদের প্রতিদিন স্মরণ করায় সড়কে চলাচলের সময় কলিজা নাড়ানো ঝাঁকুনিতে। তবে বছর ঘনিয়ে এলেও গত বন্যায় সৃষ্ট খানাখন্দ ও ভাঙ্গা সড়ক উদ্যোগ নেয়নি উপজেলা প্রশাসন।
তবে গত বন্যায় শতভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মৎস্য চাষিরা। বন্যার সময় মৎস ও পানিসম্পদ উপদেষ্টা বন্যাকবলিত চৌদ্দগ্রাম পরিদর্শনকালে ক্ষতিগ্রস্তের সহায়তার আশ্বাসের বিপরীতে উপজেলা মৎস্য ও পানিসম্পদ অফিস ১০০ জন মৎস চাষিকে ১০ কেজি করে মাছেন পোনা বিতরণ করে। যেখানে ক্ষতির পরিমাণ ১১১ কোটিরও বেশি। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এখনো অনেক খামারীর জলাশয় ও পুকুর খালি পড়ে আছে।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা প্রশাসক মোঃ জামাল হোসেন বলেন, বন্যার আশঙ্কায় পানির প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে পৌর এলাকায় বালুজুরি, মিতল্লা ও সর্পনোলা খাল খনন ও পরিষ্কার অভিযান পরিচালনা করা হয়। উপজেলা জুড়ে সেবা দিতে গঠন করা হয়েছে স্বেচ্ছাসেবক টিম।
এদিকে শুরুতেই এমন কার্যক্রমে আশার আলো দেখছেন পৌর এলাকার ২৬ গ্রামের বাসিন্দারা।
