৯০সালের পর কুমিল্লায় যত মন্ত্রী
মহসীন কবির।।
দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হওয়ার পর প্রতিটি মন্ত্রিসভাতেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মন্ত্রী পেয়েছে কুমিল্লা। তবে এই প্রথমবারই সবচেয়ে কম মাত্র একজন নেতা ঠাঁই পেয়েছেন সরকারের মন্ত্রিসভায়। তিনি কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসন থেকে টানা চারবারের নির্বাচিত এমপি ও একাদশ মন্ত্রিসভার স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। ১১টি আসনের প্রায় ৪৭ লাখ ভোটার অধ্যুষিত বৃহত্তর এই জেলায় মাত্র একজন মন্ত্রী পেয়ে কিছুটা মনোক্ষুন্ন কুমিল্লাবাসী। কারণ সব সরকারের মন্ত্রিসভাতেই এ জেলার সম্মানজনক অবস্থান ছিলো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৯০ এ এরশাদের পতনের পর ৯১ সালের ৫ম সংসদের প্রধানমন্ত্রী হন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সে সরকারে কুমিল্লা থেকে পূর্ণ মন্ত্রী হন তিন নেতা। এর মধ্যে হোমনার এমকে আনোয়ার (বাণিজ্য), দাউদকান্দির ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন (বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ),মুরাদনগরের ব্যরিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া(গৃহায়ন ও গণপূর্ত) এবং কুমিল্লা সদরের কর্নেল (অব.) আকবর হোসেন বীর প্রতীক (পরিবেশ ও বন) মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। ৯৬’র ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ সংসদেও মন্ত্রী ছিলেন এমকে আনোয়ার এবং ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ৯৬ সালের ১২ জুনের ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২১ বছর পর বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ। তখন প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়া শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় কুমিল্লা থেকে স্থান পান (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আসনের এমপি প্রয়াত অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু। তিনি দায়িত্ব পান আইন মন্ত্রণালয়ে। অবশ্য এর বাইরেও প্রতিমন্ত্রী মর্যাদায় হুইপ হন (চৌদ্দগ্রাম) আসনের এমপি মুজিবুল হক এবং সেই সংসদের শেষ পর্যায়ে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন তৎকালীন কুমিল্লা-৬ (চান্দিনা) আসনের এমপি প্রয়াত অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ।
২০০১ সালের ১ অক্টোবর ৮ম জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চার দলীয় জোট সরকারের মন্ত্রিসভায়ও স্থান পান কুমিল্লার চার নেতা। তারা হলেন তৎকালীন (হোমনা-মেঘনা) আসনের এমপি এমকে আনোয়ার (প্রথমে শিল্প পরে কৃষি ), (দাউদকান্দি) আসনের এমপি ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন (স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ), কুমিল্লা (সদর) আসনের এমপি কর্নেল (অব.) আকবর হোসেন বীর প্রতীক (নৌ পরিবহন) এবং (চান্দিনার) এমপি অ্যাডভোকেট রেদোয়ান আহমেদকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন বেগম খালেদা জিয়া।
২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার দ্বিতীয় মন্ত্রিসভায় কুমিল্লা থেকে স্থান পান দুই নেতা। এতে টেকনোক্র্যাট কোটায় আইনমন্ত্রী হন ব্রাহ্মণপাড়ার সন্তান ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। একই সরকারের শেষদিকে রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব পান চৌদ্দগ্রামের এমপি মুজিবুল হক মুজিব।
পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার তৃতীয় মন্ত্রিসভায়ও স্থান পান মুজিবুল হক। সেবারও তিনি রেলমন্ত্রী হিসেবে বহাল ছিলেন। একই সাথে পরিকল্পনামন্ত্রী করা হয় কুমিল্লা-১০ আসন থেকে নির্বাচিত এমপি আ হ ম মুস্তফা কামালকে (লোটাস কামাল) । সর্বশেষ ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের পর শেখ হাসিনার চতুর্থ মন্ত্রিসভায়ও স্থান পান কুমিল্লার দুই নেতা। এর মধ্যে কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসনের এমপি তাজুল ইসলাম স্থানীয় সরকারে ও কুমিল্লা-১০ (নাঙ্গলকোট) আসনের এমপি আ হ ম মুস্তফা কামালকে দায়িত্ব দেয়া হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ে। তবে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ের পর শেখ হাসিনার পঞ্চম মন্ত্রিসভায় কুমিল্লার মতো একটি বৃহত্তর জেলা থেকে মাত্র একজন মন্ত্রী পেয়ে মোটেই খুশি হতে পারছেন না জেলাবাসী। বিশেষ করে এলাকার রাস্তাঘাট ও অবকাঠামোখাতের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে এ বিষয়টি আরও বিবেচনার দাবি জানান তারা। কান্দিরপাড়ের খন্দকার হক টাওয়ারের ব্যবসায়ী মাহমুদুল হাসান বলেন, কম মন্ত্রী পেয়ে আমরা দুঃখ পেয়েছি। এটি আমাদের রক্তক্ষরণ করেছে।
কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবুল হাসানাত বাবুল বলেন, সব সরকারের মন্ত্রিসভায়ই কুমিল্লার সম্মানজনক অবস্থান ছিলো। কিন্তু এবার মাত্র একজন মন্ত্রী পেয়ে কিছুটা আশাহত হয়েছে এ জেলার মানুষ। তবে প্রধানমন্ত্রী চাইলে এখনও বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারেন।