কুমিল্লায় মেডিকেলে রিপ্রেজেন্টেটিভদের দৌরাত্ম্য, দালাল চক্রের কাছে জিম্মি মানুষ

 

আবু সুফিয়ান রাসেল।।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। বহি:র্বিভাগে ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভদের দৌরাত্ম্য। অন্তঃবিভাগে দালালদের পদচারণা। দুই চক্রের কাছে জিম্মি সাধারণ মানুষ। পরিচালক জানিয়েছেন, অভিযোগ পেলে তাদের পুলিশে দেওয়া হবে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, পাঁচশ শয্যার এ হাসপাতালে এখন রোগী ভর্তি আছে ৮৪২ জন।  রবিবার বহি:র্বিভাগে টিকিট বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৫১৯টি। রিপ্রেজেন্টেটিভ আর দালালদের খপ্পরে পড়ে সাধারণ রোগী ও তার স্বজনরা অনেকেই বিরক্ত হন। পড়েন বিভ্রান্তিতেও।

সরেজমিনে দেখা যায়, রোববার সকাল ১১ থেকে ১টা পর্যন্ত হাসপাতালে রিপ্রেজেন্টেটিভদের ব্যাপক উপস্থিতি। রোগী দেখার মূল সময়ে ডাক্তার ভিজিট করছে ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভরা। এ সময়ে ডাক্তারদের উপহার গ্রহণ করতেও দেখা গেছে।

চান্দিনার বাতাকান্দি গ্রাম থেকে মাওলানা আবু নোমান ছেলেকে নিয়ে এসেছেন এ হাসপাতালে। ভোগান্তির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, দুর্ঘটনা শিশু ছেলে মোস্তফিজুর রহমানের হাত ভেঙে যায়। এ হাসপাতালে ১১দিন ভর্তি ছিল। তখন ওয়ার্ডের ভিতরে প্রবেশ করে দালালরা তাদের ডায়াগনিস্টক সেন্টারে পরীক্ষা করানোর জন্য বলে। আবার ওষুধ দোকান থেকে কম দামে ওষুধ কেনার জন্য বলে। টাকা পরে দিলেও হবে এমন কথাও বলে। তারাই অতিরিক্ত দামে ওষুধ বিক্রি করে। ছাড়পত্র দেওয়ার পর গত ১৫দিন বাড়ি থেকে আনা নেওয়া করে বহি:র্বিভাগে ডাক্তার দেখাই। ডাক্তার দেখিয়ে বের হতেই রোগীকে ঘিরে ধরলেন ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভরা। তারা ছবি তুলে। এসব কাজে রোগীর কষ্ট বাড়ে। আমাদেরও ভোগান্তি হয়।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে এখানের একজন কর্মকর্তা বলেন, হাসপাতালের সামনে আটটি ডায়াগনিস্টিক সেন্টার রয়েছে। প্রতিটি সেন্টারের দালালরা এখানে কাজ করে। যে ডায়াগনিস্টক সেন্টারে রোগী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে ডাক্তার ৪০ শতাংশ কমিশন ভোগ করেন। প্রতি মাসের প্রথম সাপ্তাহে ডাক্তারদের এ কমিশন দেওয়া হয়। দেখা যায়, একজন ৩০ থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত কমিশন বিল পেয়ে থাকেন। ওষুধ কোম্পানিও ডাক্তারদের বড়বড় অনুষ্ঠানে টাকা নিয়ে সহযোগিতা করে। যার কারণে দালাল ও রিপ্রেজেন্টেটিভদের কিছু বলতে লজ্জা পায় ডাক্তাররা।

বাংলাদেশ মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ এসোসিয়েশন (ফারিয়া) কুমিল্লা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. রমিজুল হক ভূঁইয়া বলেন, প্রতিটি ওষুধ কোম্পানি তাদের প্রতিনিধিদের মাসিক বিক্রির টার্গেট দেয়। যদি তা না করতে পারে, বেতন কমে যায়। কখনও চাকরিও চলে যায়। যার কারণে ডাক্তারদের কাছে বারবার যেতে হয়। কথা বলতে হয়। যেহেতু মার্কেটে নতুন নতুন প্রোডাক্ট আসছে, তাই ডাক্তারদের নিকট সে বার্তা পৌঁছানোর জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিছু রিপ্রেজেন্টেটিভ নিয়ম ভঙ্গ করে কাজ করে সে কোম্পানির টার্গেট পূরণ করার জন্য। আর ছবি তোলার বিষয়টি হলো আমার কোম্পানির ওষুধ ডাক্তার লিখছে কিনা, তা কোম্পানির নিকট প্রমাণ হিসাবে ছবি দিতে হয়।


কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিচালক ডা. মো. মহিউদ্দিন বলেন, রোববার ও বৃহস্পতিবার রিপ্রেজেন্টেটিভদের ভিজিটিং টাইম। সেটা হবে ১ টার পর। আর দালাল আগের তুলনায় অনেক কমেছে। যদি আমরা অভিযোগ পাই, সাথেসাথে পুলিশের হাতে দিয়ে দেবো। রোগীদের সাথে প্রতি মাসে আমরা একবার সভা করে থাকি। এছাড়াও হাসপাতলে অভিযোগ বক্স আছে, যে কোন অভিযোগে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।