টাউনহলের দিন মজুরদের নিতে আসে নাই কেউ
![](https://amodbd.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
মাহফুজ নান্টু।
আরো পড়ুন:
রোববার বিকেল থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ঘূর্নিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে কুমিল্লায় সোমবার দিন শুরু হয়েছে বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে। এমন বৃষ্টিতে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষজন। বৃষ্টি উপলক্ষে যেখানে খিচুড়ী ডিম ভাজি কিংবা গোশতের ছবিতে সয়লাব সোশাল মিডিয়া সেখানে কুমিল্লা নগরীর নিম্ন আয়ের মানুষজন প্রানন্তকর চেষ্টা করছেন দিনের খাবারটির ব্যবস্থা করার জন্য । বৃষ্টি উপেক্ষা কেউ তরকারি বিক্রির ভ্যান নিয়ে বেড়িয়েছেন কেউবা কোদাল ও ঝুড়ি। তবে বৃষ্টির কারনে কেউ আসে নি আজ। জুটেনি কাজ। তাই না খেয়ে না খেয়েই দিন পার করতে হবে তাদের। তাদের আজ মন খারাপ।
সোমবার সকাল ৮ টায় নগরীর কান্দিরপাড় গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির মধ্যে কোদাল ঝুড়ি নিয়ে বসে আছেন জনা বিশেক দিন মজুর। তাদের কেউ কাজ পান নি। শার্ট প্যান্ট পড়া কাউকে দেখলেই এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে ভাই লোক লাগবো নি? এমন প্রশ্নের উত্তরে যখন লাগবে না বলে তখন মন খারাপ করে এদিক ওদিক তাকিয়ে থাকেন তারা। তাদের এমন অসহায় চোখ খোঁজে কোন মানুষকে যারা তাদেরকে কাজে নিবেন।
নগরীর ধর্মপুরে থাকেন নীলফামারীর তোহাব মিয়া। দিন মজুরের কাজ করেন। কান্দিরপাড় এসেছেন। একপাশে কোদাল ও ঝুড়ি রেখে বসে আছেন। একদিন কাজ করলে যা আয় করেন তা থেকে খাবার ও ভাড়া দেয়া শেষে ২ শ টাকা থাকে। এই টাকা জমিয়ে বাড়িতে পাঠান। তোহাব বলেন, মোর কোন জমি জিরাত নেই। সক্কাল থেকে বসে আছি। কেউতো হামোক নিলো না। আইজ গা বেচি খামো তার কোন উপায় নেই।
তোহাব মিয়ার মতই অবস্থা তাইজুল ইসলাম, মানিক বেওয়াসহ আরো দশ পনের জনের। তারা আঞ্চলিক ভাষায় বললেন, এমনি কার্তিকের সময়টা অভাবের। এই সময় রংপুর দিনাজপুর, নীলফামারীসহ উত্তরবঙ্গের বহু জেলা থেকে কুমিল্লাসহ দেশের দক্ষিনাঞ্চলে আসেন কাজের খোঁজে। এ সময় কাজ না পেলে উপোস কাটে তাদের দিন।
সোমবার সকাল ১০ টায় নগরীর চর্থা ইপিজেড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভ্যানে তরকারি, কেউ বা বাদাম বুট, শিশুদের কাপড় নিয়ে এসেছিলেন। বৃষ্টির তোড়ে পলিথিন মুড়িয়ে দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন।
ফেরীওয়ালা সিরাজুল ইসলাম বলেন, খবরে দেখলাম কাইলও বৃষ্টি অইবো। আমডার মতো গরীব মানুষডির হইছে জালা। আইজ বেচা হইতো না। কাইলও হইতো না। পুঁজি ভাইঙ্গা খাওন লাগবো।
জমার টাকা তোলা নিয়ে দূঃচিন্তায় সাত্তার মিয়া বলেন, ১৫০ টাকা জমা। তারপর যা আয় হয় তা দিয়া চাউল ডাউল কিনতে হইবো। সহালে বাইর অইছি। অহনো জমা টেহাডাও তুলতাম পারছি না। রাস্তাঘাডো মানুষ নাই। আল্লায় জানে দিনডা কেমনে যাইবো।
সকাল সকাল শাক সবজি নিয়ে বসে থেকেও ক্রেতার দেখা পান নি সাইদুল ইসলাম। আক্ষেপ নিয়ে সাইদুল বলেন, রইদ হউক আর মেঘ। আমডার মত গরিবডির অইছে মরণ। বেচা না অইলে তরকারীডি পচবো। কত টেকা লস অইবো কেউ কি আর খোঁজ খবর রাখবো।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং নিয়ে কুমিল্লায় দূঃচিন্তার কিছু নেই নেই বলে জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান। তিনি বলেন, আবহাওয়ার খবর রাখছি প্রতিনিয়ত। আমরা ৬০০ শুকনো খাবার মজুদ করে রেখেছি। প্রয়োজনে আমরা বিতরণ করবো।
ছবিঃ বৃষ্টির তোড়ে পলিথিন মুড়িয়ে রেখেছেন নিম্ন আয়ের মানুষজন। ছবিগুলো কুমিল্লা ইপিজেডের সামনে থেকে তোলা।