লিফট বন্ধ, সিঁড়িতে আস্তরে খানাখোঁদল, ভোগান্তিতে রোগীরা

 

আবু সুফিয়ান রাসেল।।

পঞ্চাশ উর্ধ্ব আক্কাস আলী হাসপাতালে এসেছেন নাঙ্গলকোট থেকে। বয়সের ভারে পারছেন না হাঁটতে। তাই একমাত্র নাতি এমদাদ রোগী বহনের ট্রলি দিয়ে দাদাকে তুলছেন দ্বিতীয় তলার অর্থোপেডিক্স বিভাগে। পুরাতন ভবনের লিফট বন্ধ। তাই একমাত্র উপায় ট্রলি উঠানোর সিঁড়ি। দাদার চিৎকার শুনে দাদাকে জড়িয়ে ধরে নামালেন ট্রলি থেকে। পরে নিজে কোলে নিয়েই উঠালেন দ্বিতীয় তলায়। আবার প্রসূতির চিৎকার আর স্বজনদের আহাজারি, তৃতীয় তলা থেকে নামানো হচ্ছে একজন মাকে। অন্যদিকে, খানাখোঁদল সিঁড়ি তাই সন্তানকে কোলে করে চতুর্থ তলায় মেডিসিন বিভাগে তুলছেন এক বাবা। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র এটি।

পাঁচশ’ শয্যার এ হাসপাতালের বর্হিবিভাগে এক হাজারের অধিক রোগী ভর্তি থাকেন। জরুরি বিভাগ, অপারেশন থিয়েটার, মেডিসিন বিভাগ , প্রসূতি বিভাগ ,অর্থোপেডিক্স বিভাগসহ বেশীর ভাগ আন্তঃবিভাগ পুরাতন ভবনে অবস্থিত। পুরাতন দেয়ালের আস্তর খসে পড়ার সাথে সাথে ট্রালি ব্যবহারের সিঁড়ির আস্তরও খসে পড়ছে । রোগী বহনের ট্রলি ব্যবহারের একমাত্র সিঁড়ির বেহাল দশায় ভোগান্তি বেড়েছে। আবার কিছু ট্রলি নষ্ট। কিছু আছে একচাকা অকেজো। কুমেক হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে।

নাঙ্গলকোট উপজেলার ঢালুয়া গ্রামের মো. এমদাদুল হক জানান, সিঁড়িতে বয়োবৃদ্ধ দাদাকে তুলতে গিয়ে অনেক ভোগান্তি হয়েছে। সিঁড়িতে উপরে উঠানো সম্ভব না। লিফট বন্ধ। ট্রলিতে তুলতে গেলে এ হাসপাতালের ট্রলি ব্যবহারের একমাত্র সিঁড়িটি বেহাল অবস্থা। তাই কাঁদে ভর করে দাদাকে উপরে তুলতে হবে।

হাসপাতালের একজন র্কমচারি জানান , এ হাসপাতাল তৈরির পর প্রথম ভবন এটি। পূর্বে রং করা হয়েছে, সিঁড়ির মেরামত করা হয়নি।
বরুড়ার ঝলম গ্রামের নাছরিন বেগম অভিযোগ করেন, টাকা না দিলে ট্রলি পাওয়া যায় না। প্রতিবার ট্রলির জন্য ১০০ টাকা দিতে হয়। অনেক সময় টাকা দিয়েও সময় মতো ট্রলি পাওয়া যায় না। আয়ারা টাকার জন্য বারবার বলে। এক্সরে, এমআরআই করানোর জন্য রোগীকে বাহিরে নিতে হয়।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. মহিউদ্দিন জানান, এ ভবনটি দেখাশোনার দায়িত্ব গণপূর্ত বিভাগের। বিষয়টি আমরা চিঠির মাধ্যমে তাদের অবগত করেছি। সংষ্কার কাজ শুরু হবে দ্রুত। নতুন সংস্কারে এ সমস্যা থাকবে না। একই সাথে ট্রলি বহনের সিঁড়িতে লাইটের ব্যবস্থা করা হবে। যেন রাতে সমস্যা না হয়। ট্রলি ব্যবহারের জন্য টাকা নেওয়ার বিষয়ে রোগী বা স্বজনদের থেকে অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রোগীদের সেবা দিতে আমরা দিনরাত শ্রম দিয়ে যাচ্ছি। অল্প কিছু খারাপ মানুষের কারণে হাসপাতালের বাদনাম হচ্ছে।