সম্পাদকীয়; ভিক্ষা কোন পেশা নয়, কাউন্সিলিং দরকার

কুমিল্লায় মৌসুমি ভিক্ষুক

কুমিল্লায় রমজান মাসে মৌসুমি ভিক্ষুক বেড়ছে। ভিক্ষুক আর ভিক্ষাজীবীর কারণে নগর জীবনে চলাচল কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সরকারি তালিকায় কুমিল্লায় ভিক্ষুক সংখ্যা পাঁচ হাজার ৬৯১ জন। জেলা সমাজসেবা বিভাগ বলছে, কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসন কর্মসূচি বন্ধ রয়েছে। এনিয়ে সাপ্তাহিক আমোদ পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
সংবাদে উল্লেখ করা হয়,জেলা প্রশাসনের তালিকার সূত্রমতে, আদর্শ সদরে ১৬৩, দেবিদ্বার ৭১৬, বরুড়া ২৭১, ব্রাহ্মণপাড়া ২০৭, চান্দিনা ৮০৭, চৌদ্দগ্রাম ২২৫, দাউদকান্দি ২০৯, হোমনা ৩২১, লাকসাম ২৪৬, মুরাদনগর ৯২৩, নাঙ্গলকোট ২৭২, মেঘনা ৯৪, মনোহরগঞ্জ ১৭৪, সদর দক্ষিণ ৩৩৮, তিতাস ৩৫, বুড়িচং ২৮৭, লালমাইতে ৪০৩জন ভিক্ষুক রয়েছে। এ হিসাব ২০১৯ সালের ভিক্ষুক পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান কর্মসূচির জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির। তবে ভিক্ষুক, ভিক্ষাজীবী ও ভিক্ষুকদের প্রকৃত সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি বলে মনে করেন জনপ্রতিনিধিরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর পদুয়ার বাজার, টমছমব্রিজ, কান্দিরপাড়, ছাতিপট্টি মসজিদ, দারোগা বাড়ি মাজার এলাকায় ভিক্ষুক সংখ্যা বেশি। রাণীর বাজার, মসজিদুল কো’বা, আদালত পাড়া, পুলিশ লাইন, জেলা মডেল মসজিদ, কুমিল্লা হাউজিং এলাকায় নতুন ভিক্ষুকদের দেখা মিলে। এছাড়াও বাসা-বাড়ি, দোকানে দোকানে ভিক্ষুকদের দেখা যায়।
কান্দিরপাড় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে ভিক্ষা করেন রমিজা বেগম। রোটারি ক্লাব থেকে পাওয়া হুইল চেয়ারে তার একমাত্র ভরসা। রমিজা বলেন, কান্দিরপাড় ভিক্ষা করি ১১ বছর। রোজায় নতুন নতুন লোক পয়দা হয়। তারার কারণে আমরা চলতে পারি না।

 

নগরীর টমছমব্রিজ আর. এস ফার্মেসির পরিচালক মো. শরীফ বলেন, দিনে ৮০-১০০ জন ফকির আসে রমজানে। সবাইকে পাঁচ টাকা করে দেওয়া সম্ভব নয়। এছাড়াও বিভিন্ন মাদরাসা ও এতিম খানার হুজুররা রমজানে দানের জন্য আসে।
মসজিদুল কো’বার সামনে দু’শিশুকে নিয়ে ভিক্ষা করছেন এক নারী। তিনি জানান, বড় বোন রেল স্টেশনে ভিক্ষা করে। আমি বাসা বাড়িতে কাজ করি। মাসে মাসে ঋণ হয়ে গেছে। রোজায় ভিক্ষা করলে যাকাত ফেতরার টাকায় ঋণটা দিতে পারবো।
ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও ধর্মীয় আলোচক ড. হেদায়েত উল্লাহ জানান,ভিক্ষুক পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা আমরা অনেক শুনেছি। এগুলোতে কোনও কাজ হবে না। সরাসরি ভিক্ষাবৃত্তিকে নিষিদ্ধ করতে হবে। ভিক্ষাবৃত্তি যেমন কোনও পেশা নয়, তেমনি ভিক্ষা দেওয়ার নামে কোনও একজনকে করুণা করাও কোনও সুনাগরিকের কাজ নয়।

পবিত্র কোরআনে আছে ভিক্ষুকদের কড়া ভাষা ব্যবহার করো না। নবীজীর শিক্ষা হলো, ভিক্ষা না করা। দান করার জন্য ইসলাম উৎসাহিত করেছে। তবে ভিক্ষা করার জন্য নয়। বর্তমানে ট্রেডিশনাল মার্কেটিং পর্যায়ে যে ভিক্ষাবৃত্তি এটা একপ্রকার বাণিজ্য। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোঃ আমিনুল ইসলাম (টুটুল) বলেন, ২০২০ সালে আমরা উদ্যোগী হয়েছিলাম কুমিল্লা শহরকে ভিক্ষুক মুক্ত করবো। তালিকার হিসাবে সদরে ভিক্ষুক ১৬৩ জন। আর চলতে গেলে দেখা যায় শহরে হয়তো হাজার ভিক্ষুক আছে। তাদের কাউন্সিলিং দরকার। এটা আত্মমর্যাদার বিষয়। ভিক্ষা কোন পেশা নয়। এ কালচার থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।

 

কুমিল্লা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক জেড.এম.মিজানুর রহমান খান বলেন, ভিক্ষুক পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান কর্মসূচি বন্ধ। জেলায় পাঁচ হাজার ৬৯১ জন ভিক্ষুকের তালিকা আছে। সেটা ২০১৯ সালের। এখন হয়তো আরো বেড়েছে।

 

আমরা জানি, ভিক্ষা কোন পেশা নয়। এটা আত্মমর্যাদার বিষয়। যারা সবল হয়েও ভিক্ষা করেন তাদের কাউন্সিলিং দরকার। এ কালচার থেকে তাদেরকে বের করতে হবে। অন্যদিকে যারা সত্যিকার দুস্থ তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।