রণক্ষেত্র সরাইলের পরমানন্দপুর
পুলিশ-মহিলাসহ অর্ধশতাধিক আহত
রাবার বুলেট-টিয়ারশেল নিক্ষেপ
এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ধান শুকানোর খলার দখল ও মাটি কাটাকে কেন্দ্র করে দু’দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষে পুরো গ্রাম পরিণত হয়েছে রণক্ষেত্রে। আহত হয়েছেন মহিলা, পুলিশসহ অর্ধশতাধিক। তন্মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় পাঁচজনকে পাঠানো হয়েছে ঢাকায়। পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ছোড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনাসহ আটক করেছে ২০ জনকে। উভয় পক্ষে থমথমে অবস্থা থাকায় পরবর্তী সংঘাত এড়াতে এলাকায় মোতায়েন রয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সকালে জেলার সরাইল উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়নের পরমানন্দপুর গ্রামের সোনাউল্লাহ্ হোষ্ঠি ও বুইল্লার গোষ্ঠির লোকদের মধ্যে টানা তিন ঘন্টাব্যাপী চলে এই সংঘর্ষ। স্থানীয় চান্দালের মাঠের এই সংঘর্ষে সোনাউল্লাহ্ গোষ্ঠির পক্ষে গ্রামের খাঁ বাড়ি ও কৈবর্ত্য বাড়ির লোকজন এবং বুইল্লার গোষ্ঠির পক্ষে বুদ্ধির গোষ্ঠি, বড়বাড়ি ও উজিরবাড়ির লোকজন যোগদান করায় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় এলাকাবাসী এবং পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গ্রাম্য আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পরমানন্দপুর গ্রামের সোনাউল্লাহ্ গোষ্ঠির কাঞ্চন গ্রুপ এবং বুইল্লার গোষ্ঠির জিয়াউল আমিন গ্রুপের মধ্যে পূর্ব বিরোধ ছিলো। এই বিরোধের জেরে বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টার দিকে কাঞ্চন গ্রুপের মান্নান মিয়ার সঙ্গে জিয়াউল আমিন গ্রুপের রশিদ মিয়ার ধান শুকানোর খলা দখল ও মাটি কাটা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এই খবর পেয়ে দুই গোষ্ঠীর লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পরমানন্দপুর চান্দালের মাঠে মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এসময় সোনাউল্লাহ্ গোষ্ঠির পক্ষে খাঁ বাড়ি, কৈবর্ত্য বাড়ির লোকজনও যোগ দেয়। অপরদিকে বুইল্লার বাড়ির সাথে যোগ দেয় বুদ্ধির গোষ্ঠী, বড়বাড়ি ও উজিরবাড়ির লোকজন। এতে পুরো গ্রামই দু’ ভাগে বিভক্ত হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের নেতৃত্ব দেন সোনাউল্লাহ্ গোষ্ঠীর কাঞ্চন মিয়া এবং বুইল্লার গোষ্ঠির পক্ষে জিয়াউল আমিন। সকাল ছয়টা থেকে নয়টা পর্যন্ত টানা তিন ঘন্টাব্যাপী চলমান সংঘর্ষে পুলিশ, মহিলাসহ ৫০ জনেরও বেশী আহত হয়। তন্মধ্যে গুরুতর আহত ওসমান মিয়া (৫৫), কাঞ্চন মিয়া (১৬), টাক্কাবালি (১৬) জিয়াউর রহমান (১৬) এবং মন মিয়াকে (৩০) আশঙ্কাজনক অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। অন্য আহতদের সরাইল উপজেলা হাসপাতাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতাল এবং পর্শ্ববর্তী কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়। সকাল ৯টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে লাঠিপেটা করাসহ রাবার বুলেট, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। ঘটনাস্থল থেকে আটক করে ২০ জন দাঙ্গাবাজকে। উভয় পক্ষের মাঝে থমথমে অবস্থা বিরাজমান থাকায় পরবর্তী সংঘাত এড়াতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এদিকে পুলিশের পাঁচ সদস্য আহতের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দাঙ্গাবাজদের আসামি করে সরাইল থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলমান বলে থানা সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
সরাইল থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ‘পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ১৪ রাউণ্ড রাবার বুলেট ও তিন রাউণ্ড টিয়ারশেল ছোড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হয়। ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়েছে ২০ জন দাঙ্গাবাজকে। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় পুলিশের পক্ষে মামলার প্রস্তুতি চলমান। পরবর্তী সংঘাত এড়াতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’