৫০ হাজার টাকায় আত্মসমর্পণ করে নকল আসামি আবু হানিফ!

 

জেলা প্রশাসনের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি

মহিউদ্দিন মোল্লা।।

কুমিল্লায় মাদক মামলায় আসামি আনোয়ার হোসেনের পরিবর্তে ৫০ হাজার টাকা চুক্তিতে আত্মসমর্পণ করে আবু হানিফ। চুক্তি অনুয়ায়ী তাকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। ৪০ হাজার টাকা পরে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। তদন্ত কমিটির প্রধান কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আরিফুল ইসলাম সরদার বুধবার এই তথ্য জানান।
তিনি জানান, টাকার বিনিময়ে আবু হানিফের আত্মসমর্পণের ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। কমিটির আহŸায়ক তিনি। অপর সদস্যরা হলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ শাহরিয়ার মিয়াজী ও কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর।
সূত্র জানায়, গত বছরের ৩০ জুলাই ভোরে জেলার আদর্শ সদর উপজেলার আড়াইওরা এলাকা থেকে দুই কেজি গাঁজা উদ্ধারের ঘটনায় দুইজনকে আসামি করে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন জেলা গোয়েন্দা শাখার এসআই নন্দন চন্দ্র সরকার। এ মামলায় হেলাল মিয়া নামে এক মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার হলেও পলাতক ছিলেন জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের গঙ্গানগর গ্রামের মৃত তৈয়ব আলীর ছেলে মো. আনোয়ার হোসেন। মামলাটির তদন্ত শেষে উভয়কে অভিযুক্ত করে ওই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. সহিদুল ইসলাম। চলতি বছরের ২৬ জুলাই এ মামলায় আনোয়ার হোসেন পরিচয়ে আবু হানিফ আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে বিচারক আবেদন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠান।

এদিকে জেলে যাওয়া যে ব্যক্তি আনোয়ার হোসেন পরিচয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন প্রকৃতপক্ষে তিনি জেলার বরুড়া উপজেলার বড় হাঙ্গিনা গ্রামের মৃত মনু মিয়ার ছেলে মো. আবু হানিফ।

কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ জানান, একটি সূত্র জানায় এই আসামি আনোয়ার হোসেন নয়। আবু হানিফকে জিজ্ঞাসা করলে সে স্বীকার করে। সে টাকার বিনিময়ে নকল আনোয়ার সেজেছে। পরে তা আদালত ও প্রশাসনকে জানাই।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আরিফুল ইসলাম সরদার জানান, বুধবার আবু হানিফের সাথে কারাগারে গিয়ে কথা বলেছি। হানিফ জানায়,সে মূল আসামি আনোয়ার হোসেনের ভারত সীমান্তবর্তী গঙ্গানগর গ্রামের বাড়িতে তার চাচাতো ভাই অসীম ও শরীফের বাসায় থেকে রাজমিস্ত্রির কাজ করতো। তারা দুইজন মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। তাদের কথায় সীমান্তে বিজিবির গতিবিধি খেয়াল রাখতো। একদিন অসীম ও শরীফদের ফেলে যাওয়া মাদকসহ তাকে বিজিবি গ্রেফতার করে।]

 

সে জামিনে বেরিয়ে এলে অসীম ও শরীফ জেলগেট থেকে তাকে আবার তাদেও বাড়িতে নিয়ে যায়। হানিফ আর এখানে থাকবে না জানালে তারা বলে তাকে টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে এনেছে। ১০হাজার টাকা তার হাতে দিয়ে বলে- শেষ একটা কাজ করে দিতে। কাজ শেষে আরো ৪০হাজার টাকা দিবে। তাদের চাচাতো ভাই আনোয়ার আরেকটি মামলার আসামি। তার বদলে আদালতে জামিন চাইবে। জামিন হয়ে যাবে। না হলে অল্প কিছু দিনের মধ্যে জামিন করে আনবে। গত সোমবার জামিন শুনানিকালে বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হলে মামলার জামিন শুনানি মুলতবি করা হয়। তিনি বলেন,আমরা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট প্রতিবেদন জমা দেব। আদালত ও পুলিশ প্রশাসন পরবর্তী কার্যক্রম সম্পন্ন করবে।