অনলাইন ক্লাসে আগ্রহ নেই কুমিল্লার শিক্ষার্থীদের

 

উপস্থিতি ৪০ ভাগের কম, অ্যান্ড্রয়েড সেট নেই

জুম ক্লাস সম্পর্কে ধারণা নেই শিক্ষক – ছাত্রের

বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও ইন্টারনেটের ধীরগতি

তৈয়বুর রহমান সোহেল
দিন দিন অনলাইন ক্লাসে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে শিক্ষার্থীরা। গত বছরের তুলনায় এ বছর অনলাইন ক্লাসের সংখ্যা তুলনামূলক বৃদ্ধি পেলেও ক্লাসে অংশগ্রহণ করছে না শিক্ষার্থীরা। অপরদিকে সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ায় অনলাইন ক্লাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষার্থীরা। যার কারণে মানসিক বিষণ্নতায় ভুগছে তারা।

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কুমিল্লা অঞ্চল সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা জেলায় ১১৫টি কলেজ, ৪৬টি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ৬০৮টি মাধ্যমিক স্কুল ও ৩৮৪টি মাদ্রাসা রয়েছে। গত মে মাসে জেলায় উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে তিন হাজার ৬৬০টি, মাধ্যমিক পর্যায়ে ৩১ হাজার ১৮৫টি অনলাইন ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়। গ্রামের প্রতিষ্ঠানের তুলনায় শহরের প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্লাস বেশি হয়।

মাউশি কুমিল্লা অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর সোমেশ কর চৌধুরী জানান, ‘প্রতিমাসের তথ্য হালনাগাদ করে শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠাচ্ছি। প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে যেভাবে তথ্য পাঠানো হচ্ছে, তার ওপর ভিত্তি করে আমার কাছে মনে হচ্ছে অনলাইন ক্লাসের সংখ্যা বেড়েছে।’
তিনি আরও জানান,‘ অনলাইন ক্লাস বাড়লেও শিক্ষার্থীরা পূর্বের মতো ক্লাসে অংশগ্রহণ করছে না। শিক্ষক ও অভিভাবকরা আমাদেরকে প্রতিনিয়ত এ তথ্য দিচ্ছেন। অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা একেবারেই কমে গেছে।’

অনুসন্ধানে জানা যায়, মাউশিতে যে তথ্য সরবরাহ করা হয়, তা প্রতিষ্ঠান প্রধানরা প্রেরণ করে থাকেন। সেখানে যে তথ্য দেওয়া হয়, তার সবটুকু সঠিক নয়। গ্রামের বেশকটি স্কুল ও কলেজে খবর নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘ দেড় বছর সময়েও জুম ক্লাস সম্পর্কে ধারণা অর্জন করতে পারেননি শিক্ষক ও ছাত্ররা। তারা ভিডিও রেকর্ড করে তা ফেসবুকে আপলোড করে দিচ্ছেন। এতে মনিটরিংয়ের সুযোগ থাকছে না। জানা যাচ্ছে না শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির সংখ্যা। ওইসব ক্লাসকেও অনলাইন ক্লাস হিসেবে ধরা হচ্ছে। এছাড়া অনেক অভিভাবকের অ্যান্ড্রয়েড সেট কেনার সামর্থ্য নেই। এদিকে শহরের হাতেগোনা কিছু প্রতিষ্ঠান জুম ক্লাসের আয়োজন করছেন। কিন্তু তাতে উপস্থিতি অনেক কম।
জেলার সর্বোচ্চসংখ্যক শিক্ষার্থীর প্রতিষ্ঠান কুমিল্লা মডার্ন হাইস্কুল। যেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছয় হাজারের কিছু বেশি। ওই স্কুলের একাধিক শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিটি শ্রেণিতে যদি ৭০জন শিক্ষার্থী থাকে, তার মধ্যে অনলাইন ক্লাসে ঢুকছেন ২০-২৫জন। নিয়মকানুন মানার দিক থেকে কুমিল্লার যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কঠোরতা প্রদর্শন করে, তার মধ্যে অন্যতম এ প্রতিষ্ঠান। তারপরও শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসে আগ্রহী করে তোলা সম্ভব হচ্ছে না।

অভিভাবকরা জানাচ্ছেন, তারা নিজেরাও অবসাদে ভুগছেন। এটা সবার জন্যই একধরনের দুর্যোগ। কতদিন সন্তানদের চাপে রেখে অনলাইন ক্লাস করানো যায়-এমন প্রশ্ন তুলেছেন তারা। পশাপাশি বিদ্যুৎ সমস্যা ও ইন্টারনেটের ধীরগতি তো আছেই।

এদিকে গভীর সংকটের মুখে পড়েছে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা। একে তো ক্লাসে উপস্থিতির নামগন্ধ নেই, তার ওপর ফেব্রুয়ারি ও মার্চ থেকে শিক্ষকরা তাদের অনলাইনে ক্লাস নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। টুকটাক কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ক্লাস নিলেও তার সংখ্যা কম।
আয়েশা আক্তার নামে এক অভিভাবক জানান, আমার সন্তান এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন নেওয়া হয়। নিয়মিত ক্লাস এবং মনিটরিং করে শিক্ষকরা। শিক্ষাবর্ষের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ফেব্রুয়ারি থেকে বেতন নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। বেতন বন্ধ করার পর ক্লাসও বন্ধ করে দেয় শিক্ষকরা! সন্তানের ভবিষ্যত কী, পরীক্ষা আদৌ হবে কি-না, তা নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় আছি।

নাজমা বেগম নামে অপর এক অভিভাবক জানান, প্রতিষ্ঠান বন্ধ। ছেলে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। তাই ঝুঁকি নিয়ে হলেও কিছু গৃহশিক্ষক রাখি ছেলের জন্য। কিন্তু কতদিন এভাবে বেতন দিয়ে শিক্ষক রাখা যায়? সামর্থ্য কুলিয়ে না ওঠায় আবার সবাইকে বিদায় করে দিই।