অবশেষে মহাসড়ক থেকে সরছে বর্জ্যের ভাগাড়

 

inside post

প্রতিনিধি।।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা অংশের শুরুতে নাটাপাড়া এলাকায় পৌরসভার ময়লার ভাগাড়। দেখে মনে হতে পারে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মহাসড়ক হয়ে যাতায়াত করা যাত্রীদের বিষাক্ত ধোঁয়া ও দুর্গন্ধে অভ্যর্থনার আয়োজন। দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইনখ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামের ডিভাইডার ও দুই পাশে বর্জ্য স্তুপ ফেলে চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা ও বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীরা। সড়কের কয়েকটি স্থান ও সড়ক সংলগ্ন খাল যেন মৃত পশু, মৃত হাঁস-মুরগি আর ময়লা-আবর্জনা ফেলার ভাগাড় হয়ে উঠেছে। বর্জ্য পরিশোধনাগার ব্যবস্থা না থাকায় মারাত্মক পরিবেশ দূষণসহ দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। হুমকির মুখে জীব বৈচিত্র্য। পরিবেশ দূষণ রোধ ও জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক মোঃ জামাল হোসেনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অবশেষে মহাসড়ক থেকে সরছে বালুজুড়ি খাল সংলগ্ন সেই ভাগাড়। সোমবার পৌর এলাকার নাটাপাড়া মৌজায় ভাগাড়ের জন্য জায়গা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। পৌর প্রশাসকের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সাংবাদিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।


জানা গেছে, ২০০২ সালে পৌরসভায় উন্নীত হওয়ার পর থেকে গত ২৩ বছরে পৌরসভার নিজস্ব ময়লার ভাগাড় নেই। শুরু থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নাটাপাড়া(বর্তমান ইফাদ মোটর্স ইন্ডাস্ট্রি) অংশে বর্জ্য ফেলে। সেখানে স্থানীয়রা বাঁধা দিলে পৌর কর্তৃপক্ষ মহাসড়কের বালুজুড়ি খালের অংশে বর্জ্য ফেলা শুরু করে। ধীরে ধীরে মহাসড়কের দুই পাশ হয়ে ওঠে ময়লার ভাগাড়। ধোঁয়া ও দুর্গন্ধে বিষাক্ত হয়ে ওঠে জনজীবন। পাশে অবস্থিত পলিটেকনিক্যাল কলেজ, ব্রাক অফিস, অফ-বিট হোটেলসহ স্থানীয়দের বাঁধায়ও আর সরেনি এই ময়লার ভাগাড়: বন্ধ হয়নি বর্জ্য ফেলা। নিজস্ব জায়গা নেই বলে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে পৌর কর্তৃপক্ষ।
মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম অংশ সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, চৌদ্দগ্রামের বালুজুড়ি ও মিয়াবাজারে মহাসড়কের ডিভাইডার ও দুই পাশে কাঁচাবাজারের ময়লা-আবর্জনা ও বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য ফেলার কারণে স্তূপ তৈরি হয়েছে। এসব স্তূপে প্রতিনিয়ত মহাসড়কের দুই পাশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা অধিকাংশ হোটেল রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য, পঁচা শাক-সবজি, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠাসহ নানা ধরনের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। আবার কোথাও রাস্তার পিচের ওপর আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এসব ময়লার ভাগাড়ে পশু-পাখি ও কুকুর-বিড়াল খাবারের উচ্ছিষ্ট ভক্ষণ করার সময় এলোমেলো করে মহাসড়কে ছড়িয়ে ফেলছে। সড়কের ওপরের এসব ময়লা-আবর্জনা যানবাহনের চাকায় পিষ্ট হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এবং এসব ময়লা ধুলায় পরিণত হয়ে বাতাসে উড়ছে। বিশেষ করে বাতাসে ময়লা-আবর্জনা ও বিষাক্ত ধুলা উড়ে আশপাশের বাড়িঘরসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ছে। দুর্গন্ধে মহাসড়কে চলাচলকারী হাজার হাজার যানবাহনের চালক, যাত্রী ও পথচারীরা সমস্যায় পড়ছেন। সড়কের পাশের এলাকা বিশেষ করে পৌরসভার ১নং ও ৯নং ওয়ার্ড বাসিন্দারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। মহাসড়কের এসব স্থান দিয়ে চলার সময় নাকে রুমাল চেপে চলতে হয়। এক কথায়-মানুষের পরিবেশ ও স্বাস্থ্য অধিকার ঝুঁকির মুখে পড়ছে।
চৌদ্দগ্রাম পলিট্যাকনিকেল কলেজের সদ্য বিদায়ী অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে থেকে ময়লার ভাগাড়টি সরানোর জন্য ইতোপূর্বে বেশ কয়েকবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু সরাবে বলে আর কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়নি কেউ। বর্তমান ইউএনও ময়লার ভাগাড়টি সরানোর ব্যবস্থা করায় সকলের উপকার হবে।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক মোঃ জামাল হোসেন বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহনে দেশের বিভিন্নস্থান ও বিদেশের মানুষও যাতায়াত করে। মহাসড়ক ও পলিটেকনিক্যাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে ময়লার ভাগাড় হওয়ায় মানুষ দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এ ময়লার ভাগাড় সরাতে সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে সোমবার পৌর এলাকার নাটাপাড়ায় সরকারি জায়গায় নির্দিষ্ট করা হয়েছে। শিগগিরই মহাসড়কের পাশ থেকে ময়লা স্থানান্তর করা হবে।

আরো পড়ুন