কসবায় অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া প্রভাষককে এমপিও দেয়ার চেষ্টা

 

রেজুলেশন টেম্পারিং,স্বাক্ষর জালিয়াতি

প্রতিনিধি।।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া প্রভাষককে এমপিও (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) দেয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কলেজ অধ্যক্ষ অবৈধ সুবিধা নিয়ে এই নিয়োগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এদিকে শনিবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) কুমিল্লা অঞ্চলের দাবি এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া স্থগিত রয়েছে।

অধ্যক্ষ তসলিম মিয়া

জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৫ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা মহিলা ডিগ্রি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগ পরীক্ষা হয়। ৩৬ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেন মো. আলাউদ্দিন ও সাড়ে ৩৫ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় হন তাইফুর রহমান।
প্রথম হওয়া আলাউদ্দিন জানান, ১০ দিন পর তিনি জানতে পারেন দ্বিতীয় হওয়া তাইফুর রহমানকে নিয়োগের চূড়্ন্তা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে ম্যানেজিং কমিটি। কলেজ অধ্যক্ষ তসলিম মিয়া তাকে (আলাউদ্দিন) জানান, নিয়োগ কমিটি ভগ্নাংশ নম্বরের সাথে আরও আধা যোগ করে দুইজনকেই যুগ্মভাবে প্রথম দেখান। বিষয়টি নিয়ে ২৮ নভেম্বর মাউশির কুমিল্লা অঞ্চলের পরিচালকের বরাবর আবেদন করেন আলাউদ্দিন। ওই বছরের ৭ ডিসেম্বর তৎকালীন পরিচালক প্রফেসর হারাণ চন্দ্র দেবনাথের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সরেজমিন তদন্ত শেষে তাইফুর রহমানের নিয়োগের বিষয়টিকে অবৈধ উল্লেখ করে ২০১৭ সালের ০২ ফেব্রুয়ারি একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। এতে বলা হয়, সাড়ে ৩৫ নম্বরকে ৩৬ দেখানোর সুযোগ নেই। তাই দ্বিতীয় হওয়া তাইফুর রহমানের নিয়োগ কোনোভাবেই সঠিক হতে পারে না। আলাউদ্দিন অভিযোগ করেন বড় ধরনের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে তাকে বঞ্চিত করে অন্যজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া নিয়োগ কমিটির রেজ্যুলেশন টেম্পারিং করে তার বিরুদ্ধে নৈতিক স্থলনের মিথ্যা অভিযোগ লেখা হয়েছে। কারণ তিনি তো এখানে চাকরিই করেননি, তাহলে অনৈতিকতার প্রশ্ন কীভাবে আসে।
ম্যানেজিং কমিটির সদস্য এনামুল হক বাবুল বলেন, সেখানে তার স্বাক্ষর জালিয়াতি করা হয়েছে। এতে অধ্যক্ষের কারসাজি রয়েছে। অধ্যক্ষ অবৈধ সুবিধা নিয়ে আলাউদ্দিনকে নিয়োগ বঞ্চিত করেছেন।
ম্যানেজিং কমিটির সদস্য খোকন রায় বলেন, আলাউদ্দিনের চারিত্রিক বিষয়টি রেজ্যুলেশনে ছিলো না। এটা পরে ছোট অক্ষরে সংযুক্ত করা হয়েছে।
কসবা মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ তসলিম মিয়া বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়টি ৮ বছর অতিবাহিত হয়েছে। সেখানে কোনো আর্থিক লেনদেন হয়নি। নৈতিক অবক্ষয়, রেজুলেশন টেম্পারিং ও স্বাক্ষর জালিয়াতির বিষয়ে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করে তদন্ত কমিটির সদস্য ও মাউশির কুমিল্লা অঞ্চলের গবেষণা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম বলেন, প্রতিবেদন আলাউদ্দিনের পক্ষেই রয়েছে। তবে নিয়োগের বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। তারপরও যেহেতু বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, তাই এমপিও’র বিষয়টি স্থগিত রয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)-এর কুমিল্লা অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর সোমেশ কর চৌধুরী বলেন- বিষয়টি আমরা অবগত। কিন্তু ম্যানেজিং কমিটি যেহেতু আলাউদ্দিনকে নিয়োগ দেয়নি, তাই সেটি দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়। অবশ্য অনিয়মের বিষয়টি জানতে পেরে এমপিও স্থগিত রেখেছি। তবে আদালতের নির্দেশনা পেলে নিয়োগের বিষয়েও পদক্ষেপ নেয়া যাবে বলে তিনি জানান।