আখাউড়া স্থলবন্দরে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি

 

মোঃ ফজলে রাব্বি,আখাউড়া ।।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে কোন ভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না লাগেজ পার্টির রমরমা ব্যবসা। লাগেজ পার্টির তৎপরতা আগের চেয়ে কয়েক গুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। কোটি কোটি টাকার সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে দিন দিন এই ব্যবসা যেন স্থলবন্দরে বৈধ হয়ে উঠেছে লাগেজ পার্টি ব্যবসায়ীদের কাছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে অফিস সহকারী সবাই যেন লাগেজ ব্যবসার সাথে সম্পর্কিত। স্থলবন্দরের কাস্টমস, বিজিবি, ইমিগ্রেশন, বিজিবি গোয়েন্দা ও শুল্ক গোয়েন্দা কে ম্যানেজ করে চলছে এই ব্যবসা।

জানা যায়, স্থলবন্দরের আশেপাশে বসবাসকে কাজে লাগিয়ে অনেকে এই ব্যবসাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। কয়েকটি পরিবার এই ব্যবসার সাথে জড়িয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক বনে যায় অল্প সময়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দৈনিক ৪০০/৫০০ জন যাত্রী আখাউড়া চেকপোষ্ট দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এদের মধ্যে কিছু কিছু ভারতীয় নাগরিক এবং বাংলাদেশী যাত্রী ভারত থেকে বিপুল পরিমাণে ভারতীয় কাপড় এ চেকপোষ্ট দিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসছে। পরে এসব কাপড় ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বড় বড় শহরে নিয়ে যায়। অধিকাংশ সময় টেক্স (রাজস্ব) না দিয়ে চলে যায় ওই যাত্রীরা। স্থলবন্দর এলাকার ১০/১৫ জনের একটি গ্রুপ আছে তারাও এ ব্যবসা করে। কেউ কেউ চুক্তিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে ‘ম্যানেজ’ করে টেক্স কমিয়ে দিয়ে লাগেজ পার্টিকে সহযোগিতা করে। আবার অনেক সময় যাত্রী নিজেও কর্মকর্তাদের খুশি করে টেক্স কমায়। এতে করে সরকার বছরে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

কাস্টম্স সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে ৫৯৯ জন যাত্রীর জব্দকৃত মালামাল থেকে ১ কোটি ১১ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা টেক্স (রাজস্ব) আদায় করেছে কাস্টম্স কর্তৃপক্ষ। ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত ৩৯০ জন যাত্রীর জব্দকৃত মালামাল থেকে ৩৮ লক্ষ ২৯ হাজার ৯৯৯ টাকা টেক্স আদায় করা হয়েছে। কাস্টম্স কর্তৃপক্ষ কঠোর ও নিয়ম অনুযায়ী এ টেক্স আদায় করলে বছরে কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হতো।

একটি সূত্রে জানা যায়, আখাউড়া স্থলকাস্টমস স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নাজমুল হক এর নেতৃত্বে রাজস্ব কর্মকর্তাদের সহকারীরা (সিপাহী) এসব ব্যবসায়ীদের সরাসরি সহযোগীতা করে থাকেন মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে। অভিযোগ রয়েছে, প্রায় সময়ই এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা টাকার বিনিময়ে চেকপোস্ট থেকে আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত এসব লাগেজ পৌছে দেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লাগেজ ব্যবসার সাথে জড়িত ভারতীয় এক নাগরিক বলেন, বাংলাদেশের কাস্টম্স কর্মকর্তারা প্রথমে মৌখিকভাবে বড় অঙ্কের টাকা টেক্স দিতে বলে। ১/২ ঘন্টা পরে তাদের কে টাকা (ঘুষ) দিলে তারাই আবার টেক্স অনেক কমিয়ে দেয়।

খবর নিয়ে জানাযায়, ভারতের কলকাতা থেকে বিভিন্ন ধরনের মেয়েদের থ্রি-পিস, শাড়ি, ওড়না, ব্লাউজ, টি-শার্ট, পাঞ্জাবী, প্যান্ট এবং ভারতীয় কসমেটিক্স, চকলেট, হরলিক্স, প্রাণীজ ওষুধ, বেল্ট সহ অনেক নামীদামী পোশাক ভারতের আগরতলা স্থলবন্দর হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ঢাকা-চট্রগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে যায়। এতে করে সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে লাগেজ ব্যবসায়ীরা। এই স্থলবন্দরের সাথে দেশের বিভিন্ন জেলার সহজ যোগাযোগ মাধ্যম থাকায় লাগেজ ব্যবসায়ীদের কাছে জনপ্রিয় রোড হল এই স্থলবন্দর ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আখাউড়া স্থলকাস্টমস স্টেশনের ডেপুটি কমিশনার আবু হানিফ মোহাম্মদ আবদুল আহাদ বলেন, লাগেজ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কাস্টমস কর্মকর্তারা টাকা নেয় বিষয়টি সত্য নয়। যদি এরকম কেউ করে থাকে প্রমান পেলে তার বিরুদ্দে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই বিষয়ে মুঠো ফোনে জানতে চাইলে সুলতানপুর ৬০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে.কর্ণেল আশিক হাসান উল্লাহ বলেন, লাগেজ পার্টি থেকে বিজিবি সদস্যরা টাকা নেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। এমনটি আমার কোন সদস্য করে থাকলে তার প্রমান পেলে ওই সদস্যের বিরুদ্দে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।