আটার রুটিতে রোজগার
আল-আমিন কিবরিয়া |
সিরাজ মিয়া। বয়স ৬৫ বছর। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত রুটি বিক্রি করেন ৩৫ বছর। এ রুটি বিক্রির রুজিতেই চলে তার সংসার। গুণগতমান ভালো ও খেতে সুস্বাদু হওয়ায় দেবিদ্বারসহ দূর দূরান্তের ভোজন রসিকদের কাছে সিরাজের রুটি তরকারির নামডাক রয়েছে ব্যাপক।
কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া আঞ্চলিক সড়ক৷ এ সড়ক ধরে চলার পথে পড়বে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার জাফরগঞ্জ বাজার। এ বাজারের ছোট্ট একটি টিনের ছাউনির নিচে রুটি বিক্রি করেন সিরাজ। বাজার থেকে আধা কিলোমিটার দূরে জাফরগঞ্জ গ্রামেই তার বাড়ি।
জাফরগঞ্জ বাজারের জরাজীর্ণ একটি টিনের ছাউনি। এ ছাউনির নিচেই রুটি বিক্রি করছেন সিরাজ মিয়া। তিনিসহ এ ছোট্ট দোকানে কর্মরত চারজন। দোকানের দুই পাশে বিছানো দুটি খাট। এ খাটে বসে মনের আনন্দে আটার রুটি খাচ্ছেন জাফরগঞ্জসহ দূর দূরান্তের আসা লোকজন। রুটির সাথে খেতে পাওয়া যায় বিভিন্ন রকমের সবজি তরকারি, দুধ মালাই ও দুধ চা।
দেখা যায়, রুটি বেলে গরম তাওয়াতে সেঁকে দিচ্ছেন সিরাজের একমাত্র ছেলে রাব্বী। আর এ রুটি তাওয়া থেকে তুলে তরকারির সাথে ভোজন রসিকদের পরিবেশন করছেন দুইজন কর্মচারী। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে দুধ মালাই ও দুধ চা বানিয়ে দিচ্ছেন সিরাজ।
জাফরগঞ্জ বাজারে গিয়ে কথা হয় সিরাজ মিয়ার সাথে। কাজের ফাঁকেই জানান ব্যর্থতা-সাফল্যের গল্প। তিনি বলেন, দুই স্ত্রী, চার কন্যা, এক ছেলে ও স
তিনিসহ তার আটজনের সংসার। রুটি বিক্রির টাকাতেই চলে সবার ভরণপোষণ। বিক্রি হয় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। সব খরচের পর থেকে যায় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা।
কাভার্ডভ্যান চালক আব্দুল গণি মিয়া। বাড়ি সিলেটের গোয়াইনঘাটে। সিলেট-চট্টগ্রামে মালামাল বহন করে আসা-যাওয়ার পথে প্রায় সময় রাতের নাশতা করেন সিরাজের এই দোকানে। গুণগত মান ভালো হওয়ায় এ রুটি তরকারি খেতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তিনি।
দেবিদ্বার উপজেলা সদর থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে সিরাজের রুটির দোকানে এসেছেন সজীব মিয়া। তিনি বলেন, এ রুটি ও তরকারি অনেক মজাদার। আমিসহ আমার বন্ধুরা প্রায় অবসর সময় রাতে এখানে খেতে আসি।
জাফরগঞ্জের স্থানীয় অটো চালক আবুল হোসেন বলেন, এখানে দূর দুরান্ত থেকে বহু লোকজন আসে। সিরাজ মিয়ার আটার রুটি খেতে সবাই পছন্দ করেন।
সিরাজ আরো বলেন, ৩৫ বছর আগে এই দোকানটি তার ভাই চালাতেন। ভাইয়ের সাথে সিরাজ নিজেও তখন থেকেই রুটি বিক্রি করতেন। রুটি বিক্রির টাকায় বাবা-মা নিয়ে চলতো তাদের সংসার। পাঁচ বছর পর মৃত্যু হয় সিরাজের বড় ভাইয়ের। তখন থেকেই পরিবারের হাল ধরতে এ দোকানের ভার তুলে নেন তার কাঁধে।