আমরা সবাই আল আমিন, বলতেই কেঁদে উঠেন মা!

আবদুল্লাহ আল মারুফ।।
‘আমরা সবাই আল আমিন। আপনার এক আল আমিন নেইতো কি হয়েছে আমরা কত আল আমিন আছি দেখুন।’ এসব কথা শুনেই ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠেন আল আমিনের মা। জড়িয়ে ধরেন উপস্থিত যুবকদের। সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন পরিবেশ। আল আমিন আন্দোলনে নিহত হয়েছিলেন। তার বাড়ি কুমিল্লার বরুড়ার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামে।

ঈদের দিন (৩১ মার্চ) সকাল ১০টায় ঈদের নামাজ পড়ে ঈদগাহ্ মাঠ থেকে নিহত আল আমিনের বাড়িতে তার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যান ওই ইউনিয়নের ছাত্রদল নেতারা। সঙ্গে নিয়ে যান সেমাই, চিনি, তরমুজসহ নানা ধরণের জিনিসপত্র। বাড়িতে ঢুকতেই সবাই বলে উঠে আমরা সবাই আল আমিন। আমরা সবাই আল আমিন। এসময় তার মা দূর থেকে এসে সবাইকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
জানা গেছে, সাইমন ইসলাম আল আমিন কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর মধ্যপাড়ার মো. বাবুল ও মনোয়ারা বেগম দম্পতির মেজো ছেলে। তিনি সাভারের রেডিও কলোনি এলাকায় ভাড়া বাসায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। একই এলাকার একটি ফ্যাক্টরিতে নতুন কাজ পেয়েছেন। বাবা গাজীপুরে কাজ করতেন। ১৯ জুলাই কারফিউর দিনে নামাজ পড়ে বাসায় ফেরার সময় ঢাকার সাভারের রেডিও কলোনিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় সাইমন ইসলাম আল-আমিন (২৩)। ২০ জুলাই তার লাশ দাফন করা হয় নানাবাড়ি বরুড়া উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামে। সেখানে তাকে কোনও ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি ফেরদৌস তানিব, সাধারণ সম্পাদক সাহিদুল ইসলাম শাকিল, সিনিয়র সহসভাপতি আল আমিন, সহসভাপতি আবু ইউসুফ, দেলোয়ার হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান বনি ও নোমান হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আতিকুল ইসলামসহ ইউনিয়ন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
সভাপতি ফেরদৌস তানিব ও সাধারণ সম্পাদক সাহিদুল ইসলাম শাকিল জানান, আন্দোলনের কারণে ফ্যাসিবাদ পালিয়েছে। দেশের মানুষ শান্তিতে জীবন যাপন করছে। যারা আন্দোলনে আহত ও নিহত হয়েছে এতে তাদের অবদান অস্বীকার করার মতো নয়। আমরাও আল আমিনের বয়সী। আমরাও শহিদ হতে পারতাম। তাই আল আমিনের শোকাতুর মায়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি।
এসময় তারা জানান, গতরাতে আমাদের নেতারা এসে আল আমিনের বাবা মায়ের শপিং করার জন্য আর্থিক সহযোগিতা করেছে। আজকে আমরা এসেছি। আমরা আল আমিনসহ আহত ও নিহতদের পাশে আছি।
আল-আমিনের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, আমাদের বাসা সাভারের রেডিও কলোনি এলাকায়। মসজিদ আমাদের বাসা থেকে সামান্য দূরে। রাস্তা পার হয়ে যেতে হয়। ছেলেটা রাস্তা পার হয়ে জুমার নামাজ পড়তে যায়। নামাজ শেষে ফিরছিল বাসায়। নামাজ শেষে বাসা থেকে গুলির শব্দ শুনে বের হই। সামনেই রাস্তার মোড়ে পাম্পের সামনে লোকজন জড়ো হয়ে আছে। আমি দেখে চলে আসি। আমার মনটা কেমন কেমন জানি করছিল। এরপরেও আবার বাসায় ফিরি। কিছুক্ষণ পর তার এক বন্ধু কল দিয়ে বললো, আল-আমিন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তখন মনে হয়েছিল মানুষ আমার ছেলেকে পড়ে যেতে দেখেই দূরে গিয়ে জড়ো হয়েছিল। আমি বাসা থেকে বের হতে হতে আরেকটা কল আসে, হাসপাতাল থেকে করা অচেনা ওই নম্বরে বলছিতেছিল, খালাম্মা আল-আমিন মারা গেছে। এ সময় চারদিকে আর্তনাদের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। আমি দৌড়ে হাসপাতালে গিয়ে দেখি পাখিটার রক্তাক্ত শরীর পড়ে আছে। যেন হাসতেছিল আমাকে দেখে।
আল আমিনের বাবা মো. বাবুল বলেন, ঘটনার পর আমাকে কেউ একজন কল দিয়ে বলেন, আপনার ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। আরেকজন এই নম্বরেই বলেন মারা গেছে। আমি তখন আমার কর্মস্থল গাজীপুরে। আমি বিশ্বাস করিনি। কারণ, সকালে আল-আমিনের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমার ছেলেটা আমাকে কত অনুরোধ করে বলেছিল যেন বের না হই। আমিও বের না হওয়ার ওয়াদা করি। কিন্তু আমি বের না হলেও আমার ছেলেটাকে আর দেখা হলো না। পরে তার লাশ নিয়ে বাড়ি আসলাম।