গ্রামে অধ্যাপকের বিশ্ব নাগরিক গড়ার চেষ্টা

মহিউদ্দিন মোল্লা।।
পশ্চিম পেরুল। সবুজ ছায়া ঢাকা গ্রাম। গ্রামটি কুমিল্লা লালমাই উপজেলায় অবস্থিত। গ্রামের বাতাসে ভাসে ধানের ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ আর পাখির কলকাকলি। এই গ্রামে একজন অধ্যাপক বিশ্ব নাগরিক গড়ার চেষ্টা করে চলেছেন। তিনি বিনামূল্যে গ্রামের শিক্ষার্থীদের ইংরেজিসহ বিভিন্ন বিষয়ে পড়ান। গণপাঠাগার চালু করেছেন। মায়ের নামে ঊষা স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে প্রতি বছর শিক্ষা বৃত্তি ও দুঃস্থদের সহায়তা দেয়া হয়। গ্রামে একটি মহাশশ্মান প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি অধ্যাপক অম্লান কুসুম রায়।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়,ফয়েজগঞ্জ থেকে পশ্চিমে সবুজ মাঠের মাঝ দিয়ে গ্রামে একটি সড়ক প্রবেশ করেছে। সড়কের শেষ প্রান্তে পশ্চিম পেরুল। গ্রামের প্রথমে মণ্ডল বাড়ি। বাড়ির প্রথমে বসন্ত-কৌশল্যা নিবাস। বাড়িতে ঢুকে হাতের বাম পাশে দুইতলা শ্রীধর ভবন। নিচতলায় ছেলেদের পড়ানোর কক্ষ ঊষা স্মৃতি পাঠাগার। এখানে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা। উপরের তলায় বড় বোনের নামে দেবিকা স্মৃতি গ্রন্থাগার। সেখানেও পড়ানো ও পাঠাগার নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ৭০বছর বয়সের শিক্ষক অম্লান কুসুম রায়। তাকে বয়স ছুঁতে পারেনি। যেন এখনও ৪০এর ঘরে রয়েছেন। তাকে সহযোগিতা করছেন তার স্ত্রী আলীশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক অনিতা দত্ত। এছাড়া তারা ফসল উৎপাদন ও বাগান করা নিয়ে সময় কাটান।
৫ম শ্রেণীর আবু বকর সিদ্দিক ও ৮ম শ্রেণীর সায়ন্ত সাহা বলেন,স্যারের কাছে আমরা ইংরেজিসহ বিভিন্ন বিষয় পড়ি। তিনি সহজ করে ইংরেজি পড়ান। তার কাছে পড়ে আমাদের রেজাল্ট ভালো হচ্ছে। আমাদের মতো অনেকে স্যারের কাছে বিনামূল্যে পড়েন।
অনিতা দত্ত বলেন, অম্লান কুসুম রায় তার স্বপ্ন পূরণে গ্রামে এসেছেন। জীবিকা ও শিক্ষা ছাড়া শহরে থাকার খুব প্রয়োজন দেখি না। গ্রামে স্বজনদের সাথে সুন্দর সময় কাটে। আমাদর কাজে প্রবাসী ছেলে প্রতীক রায় ও মেয়ে নীরা রায়ও সহযোগিতা করেন।
অম্লান কুসুম রায় বলেন, আমাদের সন্তানরা মেধাবী। বিশ্ব মঞ্চে নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা তাদের রয়েছে। রয়েছে অফুরন্ত সম্ভাবনা। তারা ইংরেজির দুর্বলতার কারণে এগিয়ে যেতে পারেন না। তাদের এগিয়ে দিতে চেষ্টা করছি। জন্ম এই গ্রামে। বাবা শ্রীধর কান্তি রায় রেলওয়েতে চাকরি করতেন। সে সুবাদে চট্টগ্রামে শৈশব ও যৌবন কাল কেটেছে। চাকরির কারণে বিভিন্ন শহরে গিয়েছি। ২০১৫সালে অবসর নিয়েছি। শহরের জীবন তখন থেকে আর টানে না। নিজেকে বন্দি মনে হয়। এই গ্রামে আমার নাড়ি পোতা। গ্রামের মানুষের জন্য কিছু করার আগ্রহ রয়েছে। এছাড়া গ্রামের মতো এত বড় সবুজ ক্যাম্পাস কোথায় পাওয়া যাবে? এছাড়া এখানে প্রাণভরে বিশুদ্ধ বাতাসে শ্বাস নেয়া যায়।

inside post
আরো পড়ুন