আমার প্রতিদিনই ভালোবাসা দিবস — মতিন সৈকত

 

আমার মা শাহানারা বেগম শতায়ু। আল্লাহর রহমতে মোটামুটি সুস্থ-সুন্দরভাবে বেঁচে আছেন। গ্রামের এবং আমাদের আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে মা সবচেয়ে প্রবীন। মা’র ছোট চার ভাই, চাচাত-জেঠাত ছোট অনেক ভাই-বোন মারা গেছেন। মা’র এক ছেলে  দুই মেয়ে এবং  তিন মেয়ের জামাই ও মৃত্যু বরণ করেন। মা বিধবা হন ১৯৯৭ সালে। আমার বাবা ছিলেন প্রখ্যাত সমাজ সেবক মোঃ কেরামত আলী।  লোকজন সন্মান করে কারি সাহেব বলে ডাকতেন। তিনি মসজিদ, মাদ্রাসা, ঈদগাহ, কবরস্থান প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি  দুঃস্থ মানুষের জন্য বাড়ি করার জায়গা দান করে গেছেন। বাবা ছিলেন অবস্থাপন্ন স্বচ্ছল গৃহস্থ। বাবা’র গড়া প্রতিষ্ঠান-ই আদমপুর আদর্শ কমপ্লেক্স। বাবা’র মৃত্যুর এক বছর পর আমি স্হানীয় প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনায় যোগ দেই। আমার উপার্জিত অর্থ বাবা’র হাতে তুলে দেওয়ার সময় পাইনি। বাবা’র  জীবদ্দশায় নব্বইয়ের দশকে  ঢাকায় এক মাস চাকরি করি। সে সময়ে দুই হাজার টাকা বেতন পাই। সে টাকা থেকে বাবা’র জন্য পাঞ্জাবি এবং বাড়ির কাজের লোকের জন্য শার্ট কিনেছিলাম। আমি  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধীনে ১৯৯৩ সালে বাংলা সাহিত্যে অনার্স-মাস্টার্স করে  ঢাকায় কর্মসংস্থান হওয়ার পরেও মা, মাটির টানে বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাইনি। বাড়ি থেকে-ই আমার  পড়াশোনা। বিশ্বিবদ্যালয়ে পড়ার জন্য ঢাকায় থাকলেও প্রতি সপ্তাহে বাড়িতে আসতাম। ছুটি-ছাটা ছাড়াও বাড়িতে ছিলাম। ছোটবেলা থেকেই আমি মা এবং বাড়িমুখি। বাবা আমাকে বেকার অবস্থায় ১৯৯৭ সালে উচ্চ শিক্ষিত সম্ভ্রান্ত চান্দিনা পৌরসভার  ধনাঢ্য কাজী পরিবারের মেয়ে শিরিন আক্তারের সাথে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ করে যান। আমার  স্ত্রী-র সারাজীবনের স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা ছিল বাসা-বাড়ি করে শহরে বসবাস করার কিন্তু আমি তার স্বপ্ন পুরনে সহায়তা করতে পারিনি। আমাদের দুই সন্তান রুবাইয়াত সিলমি জান্নাত এবং  ফায়সাল সাকির তাদের  মায়ের মত শহরে বসবাস করতে চেয়েছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে অসন্তোষ- আক্ষেপ-অভিযোগ আছে।  একমাত্র বড় ভাই প্রতিষ্ঠান প্রধান। তাঁর প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উন্নয়ন এবং সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি আমার বিয়ের অনেক আগে থেকেই বাসা ভাড়া করে থাকেন। মা, পাঁচ বোন, ভাগিনা-ভাগ্নি, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-পড়শীর দায়িত্ব পালনের জন্য আমি বাড়ি ছাড়িনি। এমনকি ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার জন্যও কোথাও বাসাও করিনি। তারা কষ্ট করে গ্রামে থেকে উচ্চ শিক্ষার জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন। আল্লাহ’র রহমতে  ইতিমধ্যে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। জামাই এমবিবিএস ডাক্তার।
স্ত্রী-সন্তানদের কষ্ট দিয়েছি। তারপরও মা-বোনদের জন্য সর্বোচ্চ দায়িত্ব কর্তব্য পালন করার চেষ্টা করছি।

আমার মা বার্ধক্যজনিত সমস্যা ছাড়া মোটামুটি সুস্থ আছেন। ইন্দ্রিয়গুলো কার্যকর আছে। কোন রকমের ওষুধ পত্র নিয়মিত লাগেনা। শরীরে শক্তি সামর্থ্য না থাকায় শয্যাশায়ী। কয়েক বছর যাবত বিছানায় প্রস্রাব-পায়খানা করেন। মা’কে বলে দিয়েছি কোন ইতস্তত করবেননা, পেট ভরে খাবেন, কাঁথা ভরে পায়খানা করবেন। কোন চিন্তা নাই। মা হাসেন। আমার নিত্যদিনের কর্মসূচি সকালে ঘুম থেকে জেগে ফজর নামাজ আদায় করে মায়ের প্রস্রাব-পায়খানার কাঁথা-কাপড় নিজ হাতে ধূয়ে-মুছে রোদে শুকানো। কতক্ষণ পর-পর বিছানা ঝাড়ু দিয়ে রুম মুছে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখি। নিজে ভাত মেখে তিন বেলা চামচ দিয়ে মুখে তুলে দেই। খাবার খাওয়ানোর পর হাত ভিজিয়ে মুখ ধুয়ে মুছে  দেই। অযু-তায়াম্মুম-গোছল করাই। নামাজের সময় হলে তাগাদা দিয়ে নামাজ আদায় করার চেষ্টা করি। সকালে শুকাতে দেয়া কাঁথা-কাপড় দুপুরে  ঘরে এনে ইতিমধ্যে ভিজিয়ে ফেলা কাঁথা-কাপড় পাল্টিয়ে নতুন করে শুকাতে দেই। ভিজাগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী আবার পুকুরের পানিতে নেমে ধুয়ে শুকাই। আবার  কাঁথা-কাপড় সন্ধ্যার আগে ঘরে এনে মায়ের বিছানা-পোশাক বদলাই। প্রতিদিন ৪/৫ বার কাঁথা-কাপড়- পোশাক পাল্টানো আমার নিয়মিত ভালোবাসা। শীত-গীস্মের সকালে বা দুপুরে হাটু পানিতে নেমে মায়ের পায়খানা করা কাঁথা-কাপড় দুই হাতে  কচলিয়ে যখন ধুয়ে মুছে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করি তখন মায়ের প্রতি অন্যরকম  একটি দায়িত্ববোধ এবং ভালোবাসায় শ্রদ্ধায় মন ভরে উঠে। আর আল্লাহর কাছে মায়ের জন্য সাহায্য  চাই যেনো দু- কালেই ভালো রাখেন। সব মা-বাবা-ই সন্তানের জন্য কঠোর কঠিন দায়িত্ব পালন করেন। মা হাসি মুখে  আমাদের জন্য কত কষ্ট করেছেন। সন্তানের নিয়মিত প্রস্রাব-পায়খানা দেখেও মা তৃপ্তি পেতেন। ধুয়ে মুছে আনন্দ অনুভব করে বলতেন এইতো আমার সন্তান। আল্লাহ আমার সন্তানকে যেনো দুধে-ভাতে রাখেন। সু-সন্তান করেন। অনেক বড় করেন। মানুষ করেন। বাবা-মা আমাদের দুই ভাই-কে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি কামিল  এম, এ সমমান পাশ করার পাশাপাশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুই জনকে বি এ অনার্সসহ এম পাশ করিয়েছেন।

আমার বড় ভাই অধ্যক্ষ এম এ লতিফ। লেখক, দার্শনিক, সংগঠক, রাজনীতিবিদ। একজন দেশ বরেণ্য ব্যাক্তি ছিলেন। ২০২১ সালে তিনি ইন্তেকাল করেন। আমাদের পাঁচ বোনের মধ্যে একজন  জন এম এ আরেকজন বি এ পাশ। বাকি তিনজন ও শিক্ষিত।

আমি আমার মায়ের পস্রাব-পায়খানার কাঁথা-কাপড় বালতি ভরে  নিয়মিত ধূয়ে শুকিয়ে, বিছানা ঝাড়ু দিয়ে পোশাক বদলিয়ে রুম মুছে নিজে খাবার খাইয়ে দিয়ে পরম তৃপ্তি অনুভব করে বলি আলহামদুলিল্লাহ।

বৃদ্ধ মা  তুচ্ছ প্রয়োজনে অথবা অ-প্রয়োজনে বা এদিকে থেকে ও দিকে কাঁধ  ফিরাতেও অনেক বার ডাক দেন। মিনিটে কয়েক বার ডাক দেন। মতিন, অ মতিন, মতিন, কইরে, ম-তিন, অ- ম-তিন। মতিন-রে।
মা, কি গো। আগো আসতেছি। আসতেছিতো।
নামাজটা শেষ করে আসি। চার রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করি। কখনো নামাজ ছেড়ে দিয়ে, খাবার ফেলে দিয়ে দ্রুত উড়ে যাই। কখনো তাড়াহুড়ো করে নামাজ শেষ করি। মাঝে মধ্যে মসজিদের জামাত ছেড়ে দিতে হয় মায়ের জরুরি খেদমতে। কখনো অফিসে বা জরুরি কাজে বেরুচ্ছি ঠিক এ সময়ে মা কাপড়-চোপড় নষ্ট করে ফেলছে। কিছুটা বিরক্ত হলেও  দ্রুত হাসিমুখে তাৎক্ষণিক দায়িত্ব পালন করে কাজে যাই।
মা ডাকেন। সাড়া দেই এই তো?  কি লাগবো? এইটা দে, দিছি। ঐ টা দে। নেন। মুড়ির ডিব্বার মুখ খুলে দে, বিস্কুট ভিজাইয়া দে। নখ কেটে দে। মাথায় তেল দে। নারিকেল তেলের শিশিটা কই? সরিষার তেলের বোতলটা কই? ব্যাথার ওষুধ দে, গ্যাসাটিকের ওষুধ দে, পেশারের ওষুধ দে, পানের কৌটা, পিকদানি, খিলাল, পানির গ্লাস, বোতল, গামছা, সুপারি, খায়ের, কত কি? আনন্দ সহকারে এগিয়ে দেই। আর কিছু লাগবো?
আবার ডাক দেন। দৌড়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করি কি গো? দেখিনা দি? এ মাত্র না? কাজ করে দিলাম।  আচ্ছা।
শিশু আর বৃদ্ধ মানুষের ক্ষুধা লাগে বেশি। খাওয়ার পরেও মন হয় খায় নাই। কি-গো ডাক দিছেন কেন? ভাত খাওয়াইতিনা? ভাত না আমি নিজে খাওয়ালাম। কোন সময়? কতক্ষণ আগে। অ-খাওয়াইছত?

আচ্ছা,আবার খাইবেন? আন। খাওয়ার সময় হওয়ার আগেই আবার ডাকাডাকি খাওয়াইতিনা? আগো ডাকাডাকি করা লাগত না। সময় হোক খাইয়ে দেব। মা যখন নিজে চলাচল করতে পারতেন তখন বড় বসত ঘরে ঘুমাতেন। ভাই স্বপরিবারে বাসায় বসবাস করায় ঘরটিতে মা থাকতেন। আমি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে যে ঘরে থাকতাম সে ঘরে মা-কে বার বার সব সময় থাকার জন্য  খাট নিদিষ্ট করে দিয়েছি। তখনো বিল্ডিং করার সুযোগ পাইনি। এক ঘরে মা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেননা। আবার স্বামী-র  ঘরে  অর্থাৎ আমার বাবা যে ঘরে সংসার-ধর্ম করে মারা গেছেন সে ঘরে থাকবেন। মা’র সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। মা রাতে একা থাকতে ভয় পান। আমাকে ডাকাডাকি করেন। আমার জন্য দরজা খুলে রাখেন। আমি স্ত্রী-ছোট সন্তানদেরকে আলাদা রেখে মা’র ঘরে ঘুমাতাম। এখনো মা’র সাথে পাশের রুমে কান খাড়া করে ঘুমাই। মা’র ডাকে সারা দিতে গিয়ে তড়িঘড়ি করে উঠতে গিয়ে ঘুমের চোখে হুড়মুড় করে পরে যাই। স্ত্রী সাবধান করে দেয় এত তাড়াহুড়োর কি আছে?  সারাক্ষণ-ই ডাকে। আস্তে আস্তে যাও। বলে আসবা রাতের বেলা ছেলে মেয়ের কাঁচা ঘুম যেন না ভাঙে। কে শুনে কার কথা? মা’র ডাকে আমরা বিরক্ত হই। অথচ   মা-বাবা যে আমাদের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন তার সিকি মাত্র মূল্যায়ন করিনা। উল্টো তাদেরকে দোষারোপ -দায়ী করি।

বার্ধক্য বয়সে মা’র  মনে কত জনের কত কথা মনে পড়ে? কত কিছু খেতে ইচ্ছে করে। সবসময় সবকিছু তাৎক্ষণিক মিলানো যায়না। সন্তান যতই চেষ্টা করে বাবা-মায়ের প্রতি কর্তব্য পালনে বারো আনাই বাকি থাকে। মাঝে-মধ্যে কিছু প্রতিবেশি এসে খোঁচায়, বিরক্ত করে। ভাত খাইছেননি? কিছু খাওয়াছেনি? কি খাইতে মন চায়? তারা ঠিক মত সেবা যত্ন করেনি? কি আনতাম? কারো কাছে কিছু খাওয়ার আকাঙ্খা ব্যাক্ত করলে নিজের কাছে লজ্জা লাগে। আগো আপনি ঘরে না চেয়ে অন্যের কাছে চাইলেতো খারাপ লাগে? মনে করব আমরা যত্ন করিনা। দেইনা। কারো কাছে কিছু চাইবেননা। যা লাগে আমি এনে দিব। জীবনের দীর্ঘ সময়ের কত কথা, কত অভিজ্ঞতা, কত স্মৃতি
মনে ভেসে বেড়ায়?  মনে মনে কত স্মৃতি আওড়ান। কত কথা বলেন। মাঝেমধ্যে ভয় পায়। কিগো ডাকেন কেন? আমরাতো ঘরেই আছি।
আল্লাহর রহমতে আমার দাদা-দাদিও মোটামুটি দীর্ঘ হায়াত পেয়েছেন। দাদা-কে বন্ধু ভাই বলে ডাকতাম। দাদা ৮১ সালে মারা যান।  দাদি শেষ বয়সে চোখে দেখতেননা। বার্ধক্যে যখন অচল হয়ে গেছেন। ঘরের কোনে একটি রুমে মালসাতে প্রস্রাব-পায়খানা করতেন। আমার মা-বোনেরা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করতেন। আমি তখন শিশু। টু-থ্রিতে পড়ি। মাঝে মধ্যে পস্রাব-পায়খার মালসা লেট্রিনে নিয়ে পরিস্কার করে  ধুয়ে আগের জায়গায় এনে রেখে দিতাম। মা-বোনেরা মাঝে মধ্যে এ কথা নিয়ে এখনো আলাপ করেন। তখন কাজ করার মত বাড়িতে অনেক লোক ছিল। এসব করতে আমাকে কেউ বলেনি। আমি স্বাচ্ছন্দ্যে করতাম। দাদি মারা যান ১৯৭৪ সালে বন্যার সময়।
আগো, আপনিতো সারাদিন শুইয়া থাকেন, ঘুমান। দিনে ডাকাডাকি করলে সারে। রাতে-তো আমাদেরকে ও ঘুমাইতে হয়। মা সারাদিন কে রাত মনে করে ঘুমান। রাতকে দিন মনে করে জেগে থাকেন। আমরা যখন ঘুমাইতে যাই, মা তখন জেগে থাকেন। সবে মাত্র রাত ১১-১২টা ঘুমাতে গেলাম। মা শুরু করলেন ডাহুকের ডাকাডাকি। হুড়োহুড়ি করে হাজির হলাম। ঘরের অনান্য সদস্যদের ঘুমের ব্যাঘাত। কি গো? একটু পানি খাওয়া।
আগো – রাতে এতো ডাকাডাকি করলে কেমনে ঘুমাবো? পানি খাওয়া শেষে ঘুমাতে আসলাম। আবার ডাকাডাকি। কাচা ঘুম ভেঙে গেলো। একবার ঘুম ভাঙ্গলে ঘুম আসেনা। ভাবি মায়ের কয়েকটা ডাকে বিরক্ত হই। মা যে আমার জন্য কত রাত-কত বছর নির্ঘুম কাটিয়েছেন। কই? একদিনও অসন্তুষ্ট হননি। মা, মা-ই। মায়ের বিকল্প দুনিয়ায় নেই। যতক্ষণ ঘরে থাকি ততক্ষণ মায়ের ডাকে উড়ে যাই। আমি যতক্ষণ ঘরে না থাকি-ততক্ষণ আমার স্ত্রী দায়িত্ব পালন করে। আমি ঘরে ফিরে সাচ্ছন্দ্যে সে দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে সচেষ্ট হই।

 

আমাদের ৪০০/৫০০ মণ বোরোধান সহ মরিচ, আলু, মাসকলাই, বোট,সরিষা নানা রকম ফসলে বাড়ি ভর্তি থাকত। স্বায়ী দুইজন বছর চুক্তি কাজের লোকের পাশাপাশি মৌসুমি কাজের লোকে ১০/১২ জন এবং মসজিদের ইমাম-গৃহ শিক্ষক, অতিথি,  মুসাফির, কাজের মহিলা মিলে বাড়িতে উৎসব লেগে থাকত। গরু-বাছুর-ছাগল, হাঁস-মোরগে ছড়াছড়ি। মা, গৃহস্থালি সামলে ছেলে মেয়েদের মানুষ করেছেন। আমাদের ঘর ছিল লঙ্গরখানার মত। রাধা শেষে খাওয়া, খাওয়া শেষে রাধা। তখনকার সময়ে মানুষের খাদ্য সংকট ছিল প্রবল। মানুষ দলে দলে বেড়াতে আসত। আসলে বাড়ি যেতে চাইতোনা। যে কয়দিন থাকতে পারল সে কয়দিন অন্তত পেট ভরে খেতে পারত। বাবা ছিলেন মেহমান এবং দান-খয়রাত প্রিয়। মানুষ ধরে নিয়ে আসতেন ভাত খাওয়াতে। আলাদা বড় বৈঠক খানা ছিল সেখানে  ৩/৪ টি বড় চৌকি। সন্মানের সাথে থাকা খাওয়ার চমৎকার সুযোগ।  বাবা ছিলেন দাদা-দাদির একমাত্র সর্বশেষ জীবিত সন্তান। বাবার সাথে মা ছিলেন সহযাত্রী। মা ঘরের সব কাজ সামাল দিতেন। কত মানুষকে যে আমার বাবা মা খাইয়েছেন থাকার জায়গা দিয়েছেন তা কিংবদন্তি হয়ে আছে।
আমি সামাজিক দায়িত্ব পালনে এবং এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে দিনের বেশির ভাগ সময়ে বাড়ির বাইরে সময় ব্যায় করছি। এখন বাড়িতে মায়ের পাশে থাকার জন্য বাইরে সময় দিতে পারিনা। সম্প্রতি দুই দিন ব্যাপি ১১-১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ জাতীয় পরিবেশ সন্মেলনে অংশ গ্রহনের জন্য রেজিষ্ট্রেশন করেছিলাম। সংগঠক হিসাবে বক্তব্য দেয়ার ও কথা ছিল।  নিজের খরচে  সন্মেলনে পড়ার জন্য তিনটি  টি-শার্ট করেছিলাম। মায়ের খেদমত করার জন্য বিশেষ করে  শীতের দিন পায়খানা-পস্রাবের কাপড়-কাঁথা ধোয়া-শুকানো ও মুখে খাবার  তুলে  খাওয়ানো এবং পরিচর্যার জন্য শেষ পর্যন্ত সন্মেলনে যাইনি।
মা-বাবর প্রতি আমাদের ভালোবাসা যেনো চিরস্থায়ী হয়।

আমরা যেনো আমাদের সন্তানদের-কে সু-সন্তান হিসেবে গড়তে পারি আল্লাহ যেনো তাওফিক দান করেন।  রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগিরা।

লেখক: রাষ্ট্রীয় পুরস্কার প্রাপ্ত কৃষি পরিবেশ সমাজ উন্নয়ন সংগঠক।