আমোদ সেই সাদামাটাই রয়ে গেল!

।।এবিএম আতিকুর রহমান বাশার।।
দেশের প্রাচীনতম পত্রিকাগুলোর একটি অন্যতম পত্রিকা ‘সাপ্তাহিক আমোদ’। কুমিল্লা তথা দেশের আলো ছড়ানো দক্ষিণ এশিয়ার সফল পত্রিকার স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ‘সাপ্তাহিক আমোদ’। আজ তার ৭০ তম (প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী) জন্মদিন। এ শুভক্ষণে আমার পক্ষ থেকে আমোদ পত্রিকার প্রয়াত সম্পাদকের প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা ও আমোদ পরিবারের অন্যান্য সবার প্রতি জানাই শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা।
যতদূর শুনেছি ‘আমোদ’ পত্রিকার নামকরণ করা হয়েছিল মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী স্যারের বন্ধুদের সাথে একটি খেলার মাঠে আড্ডায় বসে। একদিন খেলার মাঠে বসেই তাঁর বন্ধু সুলতানুর রহমানের পরামর্শে পত্রিকার নাম ঠিক করলেন ‘আমোদ’। এভাবে ‘আমোদ’-ই হয়ে গেল কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম ক্রীড়া বিষয়ক সাপ্তাহিকীর নাম।
১৯৮৫ সালে জাতিসংঘের অঙ্গ সংগঠন ইউনেস্কোর মূল্যায়নে,-দক্ষিণ এশিয়ার ৫টি আঞ্চলিক পত্রিকার মধ্যে একসময়ের এক আনা মূল্যের চার পৃষ্ঠার এ ‘আমোদ’ পত্রিকাটি সম্মানার অন্তর্ভুক্তিতে স্বীকৃত হয়েছিল। আমোদ স্থান করে নিয়েছে এদেশের প্রথম সারির পত্রিকা সংবাদ, ইত্তেফাক ও অভজারভারের পাশাপাশি।
১৯৫৫ সালের এ দিনে অর্থাৎ ৫ মে কুমিল্লা শহরের চৌধুরী পাড়া থেকে ফজলে রাব্বীর প্রকাশনায় এবং সম্পাদনায় সাপ্তাহিক আমোদ’র যাত্রা শুরু হয়। ক্রীড়াপ্রেমীদের আনন্দ- উচ্ছাসের প্রতীক আমোদ। পত্রিকাটির জন্মটা ছিল খেলা-ধূলার খবর প্রচারে। জন্ম থেকে পত্রিকাটি পোষাক- আশাকে, চলনে বলনে একেবারে সেই সাদা মাঠাই রয়ে গেল। এক সময় পত্রিকাটি নিউজ প্রিন্টে সাধু ভাষায় প্রকাশ হত। যুগের পরিবর্তনের ধারায় সাধু ভাষা থেকে চলিত ভাষায় প্রচলন শুরু হয়। তেমনি রঙিন আবরণে শুরু হলেও সেই পুরনো আভায়ই থেকে গেল। নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে প্রতিযোগিতার মাঠে টিকে থাকতে হয়েছে আমোদকে।
আমোদের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী ১৯৯৪ সালের ২৮ নভেম্বর মারা যান। তার মৃত্যুর পূর্ব থেকেই অর্থাৎ ১৯৮৫ সাল থেকে আমোদের দায়িত্ব নেন তার সহধর্মিণী শামসুননাহার রাব্বী ও ছেলে বাকীন রাব্বী। পারিবারিক ভিত্তিতে পত্রিকা চালানোর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আমোদ। তার স্ত্রী, ছেলে এবং ৩ মেয়ে মিলে সংবাদ সংগ্রহ থেকে শুরু করে প্রুফ দেখা, প্রেস চালানো, পত্রিকা বাইন্ডিং এবং পেস্টিং এর কাজও করেছেন। প্রথমদিকে বৃহত্তর নোয়াখালী এবং সিলেটেও আমোদ-এর সার্কুলেশন ছিল। মানুষের ব্যক্তিজীবনের সুখ-দুঃখের সঙ্গে জাতীয় জীবনের বিশেষ মুহূর্তেও আমোদ কান্ডারীর ভূমিকা পালন করেছে। বিশেষ করে ৬৯-এর গণঅভ্যূত্থান, ৭০-এর নির্বাচন, ৭১-এর অসহযোগ আন্দোলন তথা মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে।
আমোদ সম্পাদক মোহাম্মদ ফজলে রাব্বীর পত্রিকায় এক সময় সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন তাহের উদ্দিন ঠাকুর, অনিল কর্মকার এবং মোবারক হোসেন খানের মতো সুনামধন্য ও বিজ্ঞজনেরা। বর্তমানে পত্রিকাটি পরিচালনা করেন ফজলে রাব্বীর ছেলে বাকীন রাব্বী, যিনি বর্তমানে এটির প্রকাশক এবং প্রধান সম্পাদক। ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মহিউদ্দিন মোল্লাহসহ এক ঝাঁক তরুণ প্রকাশক ও সম্পাদক পর্ষদের পরামর্শক্রমে ‘আমোদ’র সার্বিক দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
এখন পত্রিকাটি ক্রীড়াঙ্গনের একক নয়, সাধারণে পদার্পণ করেছে। খেলাধূলার পাশাপাশি আনন্দ- উচ্ছাস, সমস্যা- সংকট, সম্ভাবনা নিয়ে নানামূখী খবর পরিবেশনে এক অনবদ্য অবদান রেখে চলেছে।
আমার সাংবাদিকতা জীবনে ৪৮ বছরে অনেক সম্পাদকের সাথে কথা হয়েছে। তবে সাপ্তাহিক আমোদ-এর সম্পাদক মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী স্যার এবং দৈনিক রুপসী বাংলার সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল ওহাব স্যারের সাথে নিউজ নিয়ে কথা বলতে যেয়ে তিরস্কার শুনতে হয়েছে। তিরস্কার এ কারণে.- যে এ দু’টো পত্রিকা তখন কোন ক্রাইম রিপোর্ট খুব একটা প্রকাশ করতেন না। ধমক দিয়ে বলতেন,- আমরা কি এসব নিউজ ছাপি ? পরবর্তীতে ৯০’র দশকের শুরুতে কুমিল্লায় সাংবাদিক তৈরির ইনস্টিটিউট খ্যাত ‘সাপ্তাহিক নিরীক্ষণ’ ও ‘সাপ্তাহিক কুমিল্লা’ প্রতিষ্ঠার পর ক্রাইম রিপোর্ট প্রচার শুরু হয়।
আমি আমোদ-এর ৭০তম জন্মদিনে পত্রিকাটির নিষ্কন্টক পথ চলা ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। পত্রিকাটির প্রসার- পরিধির সাথে সাপ্তাহিক আমোদ থেকে দৈনিক ‘আমোদ’ পত্রিকা হিসেবে প্রকাশের আকাংখা ব্যক্ত করছি। আরো ব্যাপক মানুষের মধ্যে তার পূর্বের ধারা অব্যাহত রেখে বিস্তৃতি কামনা করছি।
লেখক:সিনিয়র সাংবাদিক,দেবিদ্বার।