‘আল্লাহকে সব বলে দেব’

inside post
মনোয়ার হোসেন রতন।।
হে আল্লাহ,
আজ আর চুপ থাকতে পারি না। শব্দ হয়ে কাঁদে হৃদয়, অশ্রু হয়ে ঝরে যন্ত্রণার জল। আমার বুক ফেটে যাচ্ছে, রক্ত চিৎকার হয়ে আকাশ ছুঁতে চায়, আর আমি—একজন অসহায় মানবসন্তান, আপনার দরবারে দাঁড়িয়ে আপনাকে বলছি সব। এ শুধু ফরিয়াদ নয়, এ এক জ্বলন্ত হৃদয়ের আর্তনাদ, এ এক উম্মাহর গুমরে গুমরে ওঠা নীরব বিদ্রোহ।
হে রব্বুল আলামিন,
যারা আমাদের নিধন করছে, যারা পবিত্র ভূমিকে রক্তস্রোতে ভাসিয়ে দিয়েছে, যারা কোরআনের পাতা চাপা দেয় ধ্বংসস্তূপের নিচে, যারা শিশুর লাশ নিয়ে রাজনীতি করে, যারা গর্ভবতী মায়ের ছিন্নভিন্ন দেহে সভ্যতার বিজয় খোঁজে—তাদের বিচার আমি আপনার কাছেই দিলাম। আপনি তো ন্যায়ের মালিক, আপনি তো সর্বজ্ঞানী। আপনি জানেন, আমরা কিছুই চাইনি—শুধু একটু বাঁচার অধিকার, একটু আশ্রয়, একটু শান্তি।
কিন্তু তাও আমাদের দেয়নি তারা।
আমাদের কেঁড়ে নিয়েছে মা-বাবা, ভাই-বোন, সন্তান, স্বপ্ন, ভূমি, ভোরের আযান, এমনকি আকাশের দিকে তাকিয়ে হাত তোলার স্বাধীনতাও। আজ আমাদের কণ্ঠস্বর রুদ্ধ, চোখ রক্তাভ, শরীর ক্ষতবিক্ষত—তবু আমরা নির্ভর করে আছি শুধু আপনার করুণা ও প্রতিশ্রুতির উপর।
হে আল্লাহ,
আপনি বলেন, “অবিচারকারীদের আমি একসময় ধ্বংস করে দেই।”
তবে কেনো আজো তারা দম্ভ করে হাঁটে? কেনো আজো দখলদার ঘুরে বেড়ায় আপনার বানানো জমিনে বিজয়ীর বেশে?
আপনার সৃষ্টি ফিলিস্তিনের শিশুরা যখন কাঁদে, তাদের কান্না কি আপনার আরশ কাঁপিয়ে তোলে না?
যখন কোনো মা সন্তান হারিয়ে আর্তনাদ করে, আপনি কি মুখ ফিরিয়ে নেন?
হে প্রিয় নবীজী (স.)
আমরা আপনার উম্মত। আজ আপনাকে মনে পড়ে, উহুদের রক্তাক্ত যোদ্ধা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন আপনি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন, আপনিই শিখিয়েছেন, “জুলুমকে প্রশ্রয় দেওয়া, জালিমকে সাহায্য করার মতো অপরাধ।”
তবে আজকের উম্মাহ কি সেই শিক্ষা ভুলে গেছে? আজ মুসলিম বিশ্বের নেতারা কেনো অন্ধ, বধির, নিরব? আপনি যদি থাকতেন—আপনি কি দেখতে পারতেন শিশুদের ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহ? আপনি কি চুপ থাকতে পারতেন কোরআনের পবিত্র পাতা জ্বলে যাচ্ছে দেখে?
হে আল্লাহ,
আমি আজ আপনার কাছেই বিচার দিলাম
এই সভ্যতার, এই নীরব বিশ্বের, এই ভন্ড জাতিসংঘের, এই মুনাফিক আরব নেতৃত্বের, যারা তেল আর প্রাসাদের মায়ায় বন্দি হয়ে গেছে।নআপনি বলেন, “ঈমানদাররা এক দেহের মতো, এক অঙ্গ আহত হলে পুরো শরীর ব্যথিত হয়।” তবে কোথায় সেই দেহ? কোথায় সেই ঈমান?
আজ আমি বলছি আপনার কাছেই—
মানুষ নামধারী কিছু জানোয়ার এ পৃথিবীকে নরক বানিয়েছে। তারা আপনার নামে শপথ করে কিন্তু মানুষের উপর জুলুম করে,
তারা ফতোয়া দেয়, তারা মিথ্যা ভাষণে মসজিদ কাঁপায়, অথচ গাজার একটুকরো ধ্বংসস্তূপের নিচে শিশুর হাহাকার তাদের স্পর্শ করে না।
হে আল্লাহ,
আজ আমি সব বলে দিচ্ছি আপনাকে—
এই পৃথিবীর নির্লজ্জ নেতাদের কথা,
এই তথাকথিত শান্তিকামী রাষ্ট্রগুলোর মুখোশ উন্মোচনের কথা, এই মিডিয়ার পক্ষপাতদুষ্টতা, এই অবমাননা, অপমান, অবিচারের ইতিহাস, যা লেখা হচ্ছে আমাদের রক্তে, আমাদের চোখের জলে।
আমরা তো বাঁচতে চেয়েছিলাম।
তবু আমাদের বলেছে, আমাদের অস্তিত্বই অপরাধ। তারা আমাদের বুকে গুলি চালিয়ে বলে, “তোমরা সন্ত্রাসী!” তারা আমাদের ঘর ধ্বংস করে বলে, “এটি আত্মরক্ষা!” তারা কাঁদে এক পোষা কুকুরের জন্য, অথচ নিঃশব্দ থাকে হাজারো শহীদের পাশে দাঁড়িয়ে। এই কি সভ্যতা? এই কি মানবতা?
হে মহান রব,
আপনি তো “আর-রহমান”, আপনি তো “আল-আদল”। তবে এই অবিচারের কি শেষ নেই? আপনার নবী (স.) যখন তায়েফে রক্তাক্ত হয়ে ফিরলেন, তখন আপনি চাইলে আকাশ ভেঙে শাস্তি আনতে পারতেন,
কিন্তু আপনি ধৈর্য ধরেছিলেন—কারণ আপনি করুণাময়।তবে এবার, হে আল্লাহ,
এবার আপনি সেই গজব নামান,
যাতে বোঝে তারা—জুলুম চিরস্থায়ী নয়, ক্ষমতা অনন্ত নয়।
হে আল্লাহ,
আপনার কাছে একটাই চাওয়া—আমাদের চোখের জলকে আপনি গোনেন, আমাদের হারানো স্বজনদের রক্তকে আপনি শহীদের মর্যাদা দিন, আর যারা এই বর্বরতার নীরব দর্শক—তাদের মুখোশ খুলে দিন সবার সামনে। আমরা সব বলে দিলাম আপনাকে
আপনি বিচার করুন। আপনি জবাব দিন।
আর আপনি জাগিয়ে দিন সেই দিন—
যেদিন কোনো ফারাওনের সিংহাসন থাকবে না, থাকবে শুধু সত্যের আলো। আপনার দয়া, এবং আমাদের মুক্তি।
পরিশেষে হে আল্লাহ তোমাকে বলি, যে শব্দে হৃদয় কাঁদে, সে শব্দের বিচার হয়না আদালতে—সে উঠে যায় আরশে, আর একদিন সেই আরশ থেকেই ফিরে আসে বিচার, বদলা এবং বিজয় নিয়ে ইনশাআল্লাহ।
আরো পড়ুন