ইকবাল নারী নির্যাতন ও ইকরাম ছিনতাইয়ের আসামি

পূজা মণ্ডপে কোরান রাখা ইকবাল ও ও ৯৯৯ এ কল করা ইকরামের বিরুদ্ধে আগে থেকেই মামলা রয়েছে বিভিন্ন থানায়। ইকবালের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন ও ইকরামের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের মামলা রয়েছে।
মামলা থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতয়ালী মডেল থানার ওসি আনওয়ারুল আজিম।
কুমিল্লায় পূজা মণ্ডপে কোরান রাখা ইকবালের বিরুদ্ধে কোতয়ালী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা রয়েছে। ২০১৮ সালে ১১ নভেম্বর মামলাটি দায়ের করা হয়। বর্তমানে মামলাটি আদালতে বিচারাধীন।
ইকবাল নগরীর ১৭ নং ওয়ার্ড বসবাস করেন। তার বাবার নাম নূর আহম্মদ আলম। সুনির্দিষ্ট কোন পেশা নেই ইকবালের। কখনো বাসের হেলপার, কখনো রাজমিস্ত্রির সহকারীর কাজ করেন। তবে বিভিন্ন মাজারে তার অবাধ যাতায়াত রয়েছে।
এদিকে পূজামণ্ডপে কোরান পাওয়ার ঘটনার দিন সকালে ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে পুলিশের কাছে ঘটনা জানানো ইকরামের বিষয়ে জানা যায়, নগরীর বজ্রপুর এলাকার বাসিন্দা মোঃ রেজাউল হোসেন ওরফে ইকরাম অটোরিকশা চালক বিল্লাল হোসেনের ছেলে। কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ ও চুরি ছিনতাইয়ে জড়িত বলে জানান ওই এলাকার বাসিন্দারা। এসব ঘটনায় ইকরামের বিরুদ্ধে কুমিল্লা ও ফেনীতে চুরি ছিনতাই এবং অন্যের জায়গা দখলের অভিযোগে দুটি মামলা রয়েছে।
মামলা দুটির মধ্যে একটি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল একটি মামলাটি হয় । অভিযোগ রয়েছে চুরি ছিনতাই ও অন্যর জায়গা দখলের অভিযোগে মামলাটি করা হয়। এছাড়া ফেনীর মামলাটি হয় ২০১৮ সালের ১২ মার্চ। বিশেষ ক্ষমতা আইনে ওই মামলাটি দায়ের করা হয়।

মুখ খুলছেনা ইকবাল

কুমিল্লা নগরীর নানুয়ার দিঘির পাড়ের একটি অস্থায়ী পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ রাখার ঘটনায় ইকবাল হোসেনকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও ঘটনার পেছনে কার ইন্ধন রয়েছে, তা স্বীকার করছে না সে। এ ঘটনায় ইকবালসহ চারজন সাতদিনের রিমান্ডে আছেন। একটি সূত্র জানায়,ইকবালের আচরণে মনে হয় সে অনেক ট্রেইনড।
সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরে মণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ ইকবালই রেখেছে-এমন প্রমাণ পায় পুলিশ। ঘটনার আটদিন পর গত বৃহস্পতিবার রাতে তাকে কক্সবাজার থেকে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনার দিন থেকে পুলিশ হেফাজতে ছিল ৯৯৯-এ কল করা ইকরাম। এর দুইদিন পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয় মসজিদের সহকারী খাদেম হুমায়ুন ও ফয়সালকে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, যেহেতু সরাসরি ইকবালের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাই তাকে প্রাধান্য দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ইকরামকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে কেউ ইন্ধনদাতাদের ব্যাপারে মুখ খুলছে না।
এর আগে রোববার রাতে মামলাটি কোতয়ালি থানা থেকে সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। ইকবালকে সাথে নিয়ে দারোগা বাড়ি মাজার পুকুরের পাশে একটি ঝোপ থেকে হনুমানের গদাটিও উদ্ধার করে পুলিশ।
গণজাগরণ মঞ্চ কুমিল্লার সমন্বয়ক খায়রুল আনাম রায়হান বলেন,কুমিল্লার কোন মামলা সিআইডিতে যাওয়ার অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। বিশেষ করে সিআইডিতে যাওয়ার পর তনু হত্যার মামলাটির কোন অগ্রগতি হয়নি। কুমিল্লার সাম্প্রতিক ঘটনার মামলা সিআইডিতে নেয়া হয়েছে। আমরা চাই না সেটিও ফ্রিজআপ হোক। আমরা চাই প্রকৃত ইন্ধনদাতা শনাক্ত হোক।
সিআইডি কুমিল্লার পুলিশ সুপার শাহ মো. রেজোয়ান জানান, ঘটনার গভীরে কাদের ইন্ধন ছিল, তাদের টার্গেট করে তদন্ত চলছে। ইকবালকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলেও সোমবার বিকেল পর্যন্ত কারও নাম স্বীকার করেনি সে। ইকরামসহ বাকি দুইজনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য-গত ১৩অক্টোবর নগরীর নানুয়ার দিঘির পাড়ের অস্থায়ী পূজামণ্ডপে হনুমানের মূর্তির কোলের ওপর পবিত্র কোরআন শরিফ পাওয়ার ঘটনার পর থেকে সারাদেশে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।