ইপিজেডে বদলে গেছে চারপাশ

সজিব মিয়া।।
কুমিল্লা নগরীর চর্থার পাশে ইপিজেড(রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা) স্থাপন হওয়ায় দুই যুগে বদলে গেছে স্থানীয় জীবন যাত্রা। এতে পরিবর্তন হয়েছে চারপাশের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা। খালি স্থান গুলো ভরে যায় বিভিন্ন দালান কোটা,দোকান-পাটে। বাড়তে থাকে মানুষের কর্মসংস্থান।
স্থানীয় ও ইপিজেড সূত্র জানায়,সরকার ১৯৯৯ সালের ৭ মার্চ ২৬৭ দশমিক ৪৬ একর জায়গায় নিয়ে ইপিজেড প্রকল্প শুরু করে। ২০০০ সাল থেকে তার রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ শুরু হয়। বর্তমানে এ ইপিজেডে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। যার মধ্যে ৮০ ভাগ মহিলা এবং ২০ ভাগ পুরুষ। এর সাথে উন্নয়ন হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।
সূত্র আরো জানায়, নিস্তব্ধ সড়ক। তার দুই পাশে ছিল জঙ্গল, দিন দুপুরেও ছিল না মানুষের আনাগোনা। বিকাল হলে শিয়ালের আওয়াজ বাতাসে ভাসতো। ভয়ে চলাচল ছিল না মানুষের। সে স্থানে আজ প্রায় ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সোহাগ জানান, ছোট বেলায় আমার বাবা মারা যায়। তারপর থেকে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো ছিল না। ইপিজেড হওয়ায় বাবার রেখে যাওয়া দশ গন্ডা জায়গায় আমি টিন সেট ঘরে সিঙ্গেল সিঙ্গেল রুম করি। তা ইপিজেডের শ্রমিকদেও নিকট ভাড়া দেই। তা থেকে যে অর্থ আসে তা দিয়ে আমার পরিবার খুব সুন্দর ভাবে চলে যাচ্ছে।
দোকানদার আবুল কালাম বলেন, ইপিজেড হওয়ায় পরে এখানে এসে একটি দোকান দেই। বর্তমানে আমার দোকানে আয় দিয়ে সংসার ভালো ভালো চলে যাচ্ছে। আমার ছেলে মেয়েদেরকে ভালো স্কুল এবং মাদ্রাসায় পড়াচ্ছি। ইপিজেডের পাশে আমার একটি বাড়িও রয়েছে, যা আমি শ্রমিকদের নিকট ভাড়া দিয়ে মাসে ভালো টাকা ভাড়া পাই।
শ্রমিক হাসান মিয়া জানান, পরিবারের বড় ছেলে। সদস্য ছয়জন। বাবা কৃষক হওয়ায় আমাদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারেননি। তাই আমি কাজের খোঁজে আসি ইপিজেডে। এক বড় ভাইয়ের সহযোগিতায় আমার চাকরি হয়। এখন সব মিলিয়ে বেতন পাই পনেরো হাজার, দুই ঈদে আবার বোনাসও পাই। আমার খরচের টাকা রেখে বাকি গুলো বাড়িতে পাঠিয়ে দেই, সে টাকা দিয়ে ছোট ভাই বোনের লেখাপড়াসহ পরিবার চলছে।
বকুল আক্তার জানান, আমার দুই ছেলেসহ পরিবারের সদস্য চারজন। স্বামীর পায়ে সমস্যা থাকার কারণে চলাচল করতে পারেন না। অল্প পুঁজিতে ইপিজেডে কর্মরত শ্রমিকদের খাওয়ানো জন্য মেস চালু করি। এতে অল্প কিছু দিনের মধ্যে ভালোই সাড়া মিলে। বর্তমানে আমার মেসে ত্রিশজন শ্রমিক দুই বেলা খাবার খায়। তারা মাস শেষ হলে বেতন পেয়ে আমার টাকা পরিশোধ করে। আমি বর্তমানে আমার পরিবার নিয়ে ভালোই আছি। পরিবারের সকল খরচ বাদ দিয়ে বাকি যে টাকা বাঁচে তা আমি আমার ছেলেদের জন্য সঞ্চয় করি।
ইপিজেডের সামনের সবজি বিক্রেতা মফিজ মিয়া জানান, আমার শারীরিক জটিলতার কারণে ভারী কোন কাজ কর্ম করতে ডাক্তার নিষেধ করেছেন। এলাকার একজনের সহযোগিতায় কিছু অর্থ নিয়ে ভ্যান গাড়িতে সবজি বিক্রয় শুরু করি। আজ দুই বছর হয়েছে ইপিজেডের সামনে সবজি বিক্রয় করি। সবজি বিক্রি করে যে টাকা পেয়ে থাকি তা দিয়ে আমার সংসার খুব সুন্দর চলছে। ছেলেমেয়েকে ভর্তি করিয়েছি স্কুলে।
স্থানীয় কাউন্সিলার রাজিবুর রহমান রাজিব বিদেশে অবস্থান করছেন। তার অফিস সচিব পাভেল হোসেন জানান, ইপিজেড হওয়াতে আমাদের এলাকার বেকার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। বাড়িওয়ালা পাচ্ছে ভাড়াটিয়া, খালি স্থান গুলোতে গড়ে উঠেছে বাড়িঘর ও দোকানপাট। দিচ্ছেন ভাড়া। সুন্দর ভাবে জীবন যাপন করছেন এই এলাকার মানুষ। আমাদের এলাকাসহ আশপাশের এলাকার বেকারত্ব সমস্যা দূর হয়েছে।