উৎকোচ নিয়ে খতিয়ান দেয়ার অভিযোগ এসিল্যান্ড তহশিলদারের বিরুদ্ধে
প্রতিনিধি:
উৎকোচ নিয়ে নামজারি খতিয়ান দেয়ার অভিযোগ উঠেছে লাকসাম উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সিফাতুন নাহার ও ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে রোববার (২৯ ডিসেম্বর) কুমিল্লা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট এ বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন এক ভুক্তভোগী।
উৎকোচ নিয়ে বিদ্যুৎগতিতে নামজারি খতিয়ান প্রদান, উচ্চ আদালতের রায়-ডিক্রির অবমাননা, ক্ষমতার অপব্যবহার, সময় ক্ষেপন, সাধারণ জনগণকে হয়রানিসহ নানা বিষয়ে লাকসাম উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সিফাতুন নাহার ও ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কুমিল্লা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবরে অভিযোগ করেন পৌরসভার উত্তরকুল গ্রামের মৃত জহিরুল হকের ছেলে মোরশেদ আলম রাসেল।
লিখিত অভিযোগে মোরশেদ আলম রাসেল জানান, তার পিতা জহিরুল হক ১৬/০৬/২০০০খ্রী. তারিখের ১০৯১৮নং রেজিস্ট্রিকৃত দলিলে তার পিতা নুরুল হক হতে ২৯৫ নং উত্তরকুল মৌজার বি.এস চুড়ান্ত ২২২ নং খতিয়ানের ৫১২ নং দাগের ৮ শতকসহ মোট ৯০ শতক জমির মালিক হয়ে ভোগদখল করেন। বিগত ২১/১২/২০০৩ তারিখে ২০৯০১ নং দলিলে অহিদুর রহমান ও মহরম আলীর নিকট ৫১২ দাগের ৬ শতক জমি বিক্রি করেন। বাকি ২ শতক তার পিতা কারো নিকট বিক্রি করেনি। পিতার মৃত্যুর পর তারা উত্তরাধিকার সূত্রে জমির মালিক ও ভোগদখল করে আসছিলেন। কিন্তু রহস্যজনকভাবে তাদেরকে কোন নোটিশ না দিয়ে অবৈধভাবে অর্থিক দুর্নীতির মাধ্যমে ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম ও উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি সিফাতুন নাহার ১২৩৩০/২৩-২৪ নং নামজারি মোকদ্দমার মাধ্যমে ওই ২ শতক জমি মোসাঃ পারুল আক্তারের নামে ৮৬৮ নং নামজারি খতিয়ান দেন।
অভিযোগে আরো উল্লেখ করেন, পারুল আক্তারদের দায়ের করা একাধিক দেওয়ানী মোকদ্দমা খারিজ হলেও লাকসাম ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের উৎকোচ প্রদানের মাধ্যমে এ নামজারি খতিয়ান সৃষ্টি করেন। এ বিষয়ে কুমিল্লার জজ আদালতে দায়ের করা দেওয়ানী ৭০/২০০৪ নং মোকদ্দমা ও সর্বশেষ পারুল আক্তারদের করা ২৬৪/২০২১ নং মোকদ্দমা গত ২৯/০১/২০২৩ ইং তারিখ দোতরফাসূত্রে খারিজ হয়। তারপরে কৌশলে দুর্নীতির মাধ্যমে গত ২৮ মে জমির নামজারির আবেদনের মাত্র ৮ কার্যদিবসের মধ্যে ৯ জুন তারিখে অবিশ্বাস্যভাবে বিদ্যুৎগতিতে অবৈধভাবে ৮৬৮ নং নামজারি খতিয়ান তৈরি করে। বিষয়টি জানতে পেরে এসিল্যান্ড লাকসাম বরাবর এ নামজারি খতিয়ান বাতিলের জন্য গত ৩ জুলাই লিখিত আবেদন করলে তিনি ব্যবস্থা নিতে সময়ক্ষেপন করেন। শুনানিতে অভিযোগকারীর সাথে সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে আচরণ করেনি। এসিল্যান্ডকে সর্বশেষ ২৬৪/২০২১ নং দেওয়ানী মোকদ্দমায় রায়ের কপি দাখিল করে ওই খতিয়ান বাতিলের আবেদন করলেও এসিল্যান্ড অবৈধভাবে আর্থিক লাভবান হয়ে রহস্যজনক কারণে তাদেরকে হয়রানি করতে উচ্চ আদালতের রায়-ডিক্রিকে উপেক্ষা করে আপিল চলমান উল্লেখ করে প্রায় ৫ মাস পর গত ১৮ নভেম্বর বির্তকিত ৮৬৮ নং নামজারি খতিয়ান বাতিল না করে বহাল রাখেন এবং এ খতিয়ানের খাজনা আদায় ও নামজারি স্থগিত করেন। যা উচ্চ আদালতকে অবমাননার শামিল। সরকারি কর্মকর্তা হিসাবে ক্ষমতার অপব্যবহারের ফলে স্থানীয় সরকারের সুনাম ক্ষুন্ন করছেন। এসিল্যান্ড ও তহশিলদারের দুর্নীতির কারণে ভুক্তভোগী ও তার অসহায় পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত ও হয়রানির শিকার হয় উল্লেখ করে, লাকসাম উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সিফাতুন নাহার, ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন জানান ভুক্তভোগী মোরশেদ আলম রাসেল।
অভিযোগের বিষয়ে লাকসাম উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সিফাতুন নাহার বলেন, দলিল থাকায় আইন অনুযায়ী খারিজ দেয়া হয়েছে। আর মামলার বিষয়টি বাদী গোপন করেছেন। বর্তমানে ওই জমিটি বেচা-বন্ধ রাখা হয়েছে। আদালতে মামলার আপিল নিষ্পত্তি হলে যিনি রায় পাবেন তার নামে খারিজ দেয়া হবে।
অপর অভিযুক্ত তহশিলদার সাইফুল ইসলাম অভিযোগের বিষয়ে সাক্ষাতে কথা বলবেন বলে মোবাইল ফোনের লাইন কেটে দেন। পরে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।