এক ব্যথিত মুসলিমের খোলা চিঠি

মুসলিম বিশ্ব নীরবতা ভাঙো:
প্রিয় মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানগণ,
আপনাদের রাষ্ট্রপতির আসন, সিংহাসন, পদবী—সব আজ তুচ্ছ, যদি তা একটি নির্যাতিত জাতির কান্নার কাছে নত না হয়। আমি আপনাদের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে নয়, উম্মাহর ভাই হিসেবে ডাকছি। গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে শুধু শিশু ও মা নয়—চাপা পড়ে আছে মানবতা, বিবেক, ইসলামী সংহতি, আর আপনাদের নীরব আত্মা।
আজ ইসরায়েল, এই সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র, শুধু ফিলিস্তিন নয়—বিশ্ব মানবতা, আন্তর্জাতিক আইন, শিশুবান্ধব পৃথিবী এবং ন্যায়ের শেষ আশ্রয়স্থল জাতিসংঘকে পদদলিত করছে। এবং দুঃখজনকভাবে, আপনারা—মুসলিম বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রপ্রধানেরা—এই বর্বরতার পাশে দাঁড়ানো তো দূরে থাক, মুখ খুলতেও ভয় পাচ্ছেন। এমনকি এক ফোঁটা অশ্রু ফেলার অভিনয়ও আপনাদের কাছে দুর্লভ হয়ে উঠেছে।
গাজা শুধু একটি শহরের নাম নয়, এটি এক রক্তাক্ত বিবেকের নাম, এক জ্বলন্ত প্রতিচ্ছবি, যে প্রতিচ্ছবিতে মুসলিম বিশ্ব নিজের মুখ লুকাতে লজ্জিত। ইসরায়েল যখন হাসপাতাল বোমা মারে, শিশুদের মাথা উড়িয়ে দেয়, নারীকে ধর্ষণ করে হত্যা করে—তখন বিশ্ব বলে ‘সন্ত্রাস’, অথচ আপনারা বলেন ‘আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি’। এই উদ্বেগ এখন কফিনে বন্দি শহীদ শিশুদের কাছে নিছক প্রহসন!
আজ আবারও ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এই যুদ্ধ শুধু দুটি রাষ্ট্রের সংঘর্ষ নয়—এটা হচ্ছে দুঃসাহসী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বিপন্ন মানবতার যুদ্ধ। এবং আপনারা যদি এ যুদ্ধে ন্যায়বিচারের পক্ষে না দাঁড়ান, তবে ভবিষ্যতের ইতিহাস আপনাদের আরেকজন মীরজাফর, আরেকজন আবু লাহাব হিসেবেই মনে রাখবে।
মুসলিম উম্মাহর ৫৭টি রাষ্ট্র যদি একটিমাত্র কণ্ঠে “প্রতিরোধ” শব্দটি উচ্চারণ করতো, তাহলে ইসরায়েলের অমানবিক আগ্রাসন একদিনও স্থায়ী হতো না। অথচ এই নীরবতা, এই নিষ্ক্রিয়তা, এই আত্মবিক্রয়—আপনাদের মুখোশ খুলে দিয়েছে। আপনারা কি শুধু মঞ্চে ইসলামিক ব্রাদারহুড বলার জন্যই শপথ নিয়েছেন? উম্মাহর পাশে দাঁড়ানোর জন্য নয়?
আপনাদের কাছে আমরা অস্ত্র চাই না, যুদ্ধও চাই না। আমরা চাই—আপনারা অন্তত একবার গর্জে উঠুন। ইসলাম আপনাদের ধন-সম্পদে নয়, আপনাদের প্রতিবাদে মহৎ হবে। আজ যারা গাজায় শহীদ হচ্ছে, তারা বলে যাচ্ছে—“আমাদের জীবদেহে না হোক, শহীদি রক্তে হয়তো কোনো একদিন তোমাদের হৃদয়ে আলো জ্বলবে।”
ইসরায়েল আজকের আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর সন্ত্রাসী রাষ্ট্র, যার পৃষ্ঠপোষকতা করছে তথাকথিত ‘গণতান্ত্রিক’ পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ। তারা একে একে ধ্বংস করে দিয়েছে ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেন, আফগানিস্তান—এবং আজ গাজা। কাল হয়তো মক্কা-মদিনাও আর untouchable থাকবে না।
এই চিঠি শুধুই আবেগ নয়, এটি এক সতর্কবার্তা। যদি আপনারা আজ চুপ থাকেন, তাহলে কাল আপনাদের রাষ্ট্রের শিশুদের জন্য আর কেউ কাঁদবে না। গাজার জন্য আজ কথা বলুন, প্রতিরোধ করুন, নয়তো ইতিহাসের রক্তপাত একদিন আপনার দরজায় এসে দাঁড়াবে।
স্মরণ রাখবেন—ইতিহাস নীরবতা ভুলে না।
একজন ব্যথিত মুসলিম
স্বপ্নহীন রাতের সাক্ষী হয়ে লিখলাম—
মনোয়ার হোসেন রতন
