করোনাকালে অনলাইন শিক্ষায় মাইল ফলক ভিক্টোরিয়া কলেজ

 

# চার’শ কোটি টাকার প্রকল্পে বদলে যাবে ক্যাম্পাস


# সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে প্রাণবন্ত শিক্ষার্থীরা


# তৈরি হয়েছে তিন হাজারের বেশি ভিডিও ক্লাস


আবু সুফিয়ান রাসেল।।

করোনাকালীন সময়ে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে এগিয়ে আছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ। একই সাথে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে শতবর্ষী এ বিদ্যাপিঠ। চট্টগ্রাম বিভাগের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহের মধ্যে সর্বপ্রথম ডিজিটাল স্টুডিও স্থাপন করেছে এ কলেজ। পাঠক্রম ভিত্তিক তিন হাজারের অধিক ভিডিও ক্লাস রয়েছে কলেজের অফিসিয়াল ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলে। মহামারীর এ সময়ে কলেজের বহুমুখী শিক্ষা কার্যক্রমে প্রাণবন্ত ছাত্র-ছাত্রীরা। এছাড়া চার’শ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে আলোচনা চলছে। সেটি বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে ক্যাম্পাস।

ভিডিও কনফারেন্সে কলেজে অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. রুহুল আমিন ভূঁইয়া।

#স্থাপন করা হয়েছে ডিজিটাল স্টুডি


সূত্র জানায়, দেশে করোনা প্রাদুর্ভাবের পূর্বে গত মার্চের শুরুতে লিফলেট বিতরণ ও জনসচেতনতা কার্যক্রম উদ্বোধন করে ভিক্টোরিয়া কলেজ। কলেজের রসায়ন বিভাগের থেকে তৈরি ২৫০ গ্রামের দুই হাজার বোতল হ্যান্ড সেনিটাইজার বিতরণ করা হয় শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাধারণ মানুষের মাঝে। কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক, ডিগ্রি শাখা ক্যাম্পাস, তিনটি মসজিদ ও ছাত্রাবাস সমূহে জীবানু প্রতিরোধক স্প্রে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। উভয় ঈদে কার্মচারীদের মাঝে কলেজ প্রশাসন, বিভাগ ও সামজিক সংগঠনের মাধ্যমে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ ও আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে। এডিস মশা বিস্তার ঠেকাতে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। জুম অ্যাপের মাধ্যমে একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং নিয়মিত চলছে। ভিক্টোরিয়া পরিবারের সদস্যদের প্রাণবন্ত রাখতে অনলাইন ভিত্তিক সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বেশ সাড়া ফেলেছে। করোনা রোগীদের জন্য কুমিল্লা সেনানিবাস ও জেলা প্রশাসনের নিকট ভবন হস্তান্তর করা হয়েছে। মেরামত করা হয়েছে সাতটি ভবন।
গত মার্চে শিক্ষক-কর্মচারীদের এক দিনের বেতন প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান করা হয়েছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে ডেক্স ক্যালেন্ডর, ওয়াল ক্যালেন্ডর, বার্ষিক বন্ধন, অনলাইনে বঙ্গবন্ধুর উপর চিত্রাঙ্গন, রচনা, স্ব-রচিত কবিতা ও অসমাপ্ত আত্মজজীবনী পাঠ প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা হয়েছে।


 

#ডিজিটালাইজেশনে এগিয়েছে কয়েক ধাপ


কলেজের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের  স্নাতকোত্তর শ্রেণির ছাত্র মহিউদ্দিন আকাশ মন্তব্য করেন, কলেজের ভিডিও ভিত্তিক অনলাইন ক্লাস, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম আমাদের প্রাণবন্ত করেছে। এ সময়ে অনলাইনে বিশেষ কিছু উদ্যোগ কলেজকে বহুগুণ এগিয়ে দিয়েছে। পুরাতন কলেজ হিসাবে একমাত্র ওয়েব সাইট আরও সমৃদ্ধ করার প্রয়োজন মনে করি।

এ বিষয়ে শিক্ষক পরিষদ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, করোনা যুদ্ধের এ সময়ে প্রতিটি কাজ ছিলো চ্যালেঞ্জিং। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বিশ্ব মানবতার মা শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি ডিজিটালাইজেশনে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ডিজিটালাইজেশনের এ অগ্রগতি না হলে কোভিড-১৯ এর আক্রমণে বাংলাদেশ স্থবির হয়ে যেতো। অধ্যক্ষ মহোদয়, উপাধ্যক্ষ মহোদয় ও সহকর্মীদের সহযোগিতায় অনেক কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ সময়ে ডিজিটালাইজেশনে এগিয়েছে কয়েক ধাপ। ই-বন্ধন মোবাইল অ্যাপ চালু করার বিষয়ে একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি, দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারবো।

কলেজ উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আবু জাফর খান বলেন, এ বিশ্ব সংকটে কলেজের প্রায় প্রতিটি কাজ অনলাইনের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়েছে। এক দশক আগে প্রধানমন্ত্রী যে জিডিটাল বাংলাদেশের যাত্রা শুরু করছেন, তার সুফল এটি। এ কলেজের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি, ডিগ্রি ও ২০ টি বিভাগের  স্নাতক  -স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রায় তিন হাজার ভিডিও ক্লাস অনলাইনে দেওয়া হয়েছে। অফিসিয়াল ফেসবুক পাতায় ভিডিও ক্লাস লাইভ প্রচার করা হচ্ছে।

অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. রুহুল আমিন ভূঁইয়া জানান, ই-নোটিশ প্রেরণ, ই-নথির প্রচলন, ইলেকট্রনিক পদ্বতিতে ছুটিসহ আমরা চেষ্টা করছি সকল কার্যক্রম অনলাইনে করার। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় আট কোটি টাকার প্রজেক্ট প্রক্রিয়াধীন। যার মাধ্যমে মাল্টিপারপাস রুম, কম্পিউটার ল্যাব, ল্যাংগুয়েজ ক্লাব, স্মার্ট বোর্ড স্থাপন করা হবে। এছাড়াও কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.ক.ম বাহউদ্দিন বাহার মহোদয়ের আন্তরিক সহযোগিতায় কলেজের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে চারশত কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। যা বাস্তবায়িত হলে ভিক্টোরিয়া কলেজের অবকাঠামো ও একাডেমিক কার্যক্রমে আমূল পরিবর্তন সাধিত হবে।