কাগজের নৌকায় আমিও যাত্রী!

।। হুমায়ুন কবির।।

‘কাগজের নৌকা’ বইটি না পড়লে, অনেক কিছুই জানা হতো না। বিশেষ করে “মফস্বল সাংবাদিকতা” কতটা বিপদসংকুল আর ক্যারিয়ার হিসাবে নেয়া কতটা ভয়াবহ। লেখক হিসাবে মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী একাধারে একজন খ্যাতিমান সাংবাদিক,লেখক,নেতা এবং সর্বোপরি একজন সেনাবাহিনীর কমকর্তা ( লেফটেন্যান্ট) ছিলেন।
বইটি থেকে জানতে পারি ১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান ভাগ,যাকে আমরা ‘বঙ্গভঙ্গ’ নামে জানি। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ (পূর্ব পাকিস্তান) ও পশ্চিম পাকিস্তান নামে দুটি দেশের জন্ম হয়। সাংবাদিক হিসাবে খুব তিনি খুব সার্থক। দুটি দেশকে ভাগ হতে দেখেছেন। দেখছেন ২৫শে মার্চের কাল রাত আর মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের আনন্দ। তিনি ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রইলেন। তিনি খুব ভাগ্যবান। কেউ চাইলেও এ অর্জন করে দেখাতে পারবে না।
তিনি স্বপ্ন দেখতেন একটি পারিবারিক পত্রিকার। যার নাম আমার ‘আমোদ’ পত্রিকা। এই রেকর্ডটিও তার। যার খবর সংগ্রহ করা, কম্পোজিট করা, টাইপ রাইটারে লিখা তারপর সেই বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করা। তারপর প্রত্যেকটা গ্রাহকের নিকট পত্রিকা পৌঁছে দেওয়া এসবই করেছেন ফজলে রাব্বীর পরিবার। যার কারণে সবাই সব জানে। মা লিখছেন। তো বাবা খবর সংগ্রহ করছেন। ছেলে টাইপ রাইটারে লিখছেন। মেয়ে ছবি তুলছেন। আরেক মেয়ে বিজ্ঞাপন দেখছেন। তো আরেক মেয়ে পোস্ট অফিসে যাচ্ছেন, যাতে গ্রাহকরা সঠিক সময়ে আমোদ পত্রিকা পান ঘরে বসে। কি অপূর্ব সিনক্রোনাইজেশন?
“এডিটর এন্ড টিচার্স আর টু রিমেইন পিওর” কথাটিকে যথার্থ মূল্যায়ন করেছেন। এই বিদগ্ধ সাংবাদিক ফজলে রাব্বী।
বইটি থেকে জানতে পারি, আমেরিকার রাষ্ট্রদূত এসেছিলেন কুমিল্লাতে রানীর বাজারের একটি ফ্যাক্টরি পরিদর্শনে। তার ইন্টারভিউ নেয়ার সময় তিনি তাকে বলেছিলেন,”হি ইজ আ গুড ডগ”। কথাটা শুনেই রাগে লাল হয়ে যেই বলতে যাব। পাশ থেকে কালেক্টর সাহেব বলেন, “হি হেজ আ গুড নোজ, হি ক্যান সেন্স অনিথিং ভেরি ফাস্ট”। তার কথা শুনে মৃদু হাসি আসল।
তিনি বিভিন্ন দেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন যেমন: ভারত, ফ্রান্স, আমেরিকা, লন্ডন, হল্যান্ড, বেলজিয়াম এবং চীন। আগে ‘বরিবার’ সাপ্তাহিক বন্ধ ছিল তার শক্ত লেখনীতে তা ‘শুক্রবারে’ সাপ্তাহিক সরকারিভাবে বন্ধ ঘোষণা হয়। যা উল্লেখযোগ্য।

সাপ্তাহিক আমোদ কুমিল্লার নিজেদের একটি খবরের কাগজ। যে কোন দেশের পাড়া আর মহল্লা কেমন চলে? তার জন্য একটি পত্রিকা সমাজের দর্পণ হিসেবে কাজ করে। কারণ দর্পণ দেখলেই বোঝা যায়, সমাজ কেমন চলছে?

একটি লোকাল পত্রিকা যখন দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রবেশ করে, পুরস্কার অর্জন করে নিয়ে আসে। তখন এর মান নিয়ে কোন প্রশ্ন চলেনা। ১৯৮৫ সালে জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন ইউনেস্কো এশিয়ার কয়েকটি সংবাদপত্রের সাথে আমাদের “আমোদ”কেও একটি “Successful Asian Community Newspaper” হিসাবে স্বীকৃতি দেয়।
কুমিল্লার যেমন শচীন কর্তা। তিনি যেখানে গান করেন কেন না, মনে হয় ওই তো আমাদের কুমিল্লার ছেলেটা গান গাইছে। ঠিক তেমনি আমার কুমিল্লার প্রাণের পত্রিকা আমাদ-এর নাম বিশ্ব দরবারে যেখানেই উচ্চারিত হয় শুধুই আমার “আমোদ”। তিনি লিখেছেন-সবশেষে আল্লাহর নিকট এটাই প্রার্থনা করি, আমি নিজে যেমন সব সময় সত্য পথে থেকে অভাবের সাথে যুদ্ধ করে এ পর্যন্ত টিকে থেকেছি, আমার উত্তরসুরিরাও যেন তেমনি ভাবে কোন অন্যায় অবিচারের কাছে নতি স্বীকার না করে মাথা উঁচু করে “আমোদকে” চালিয়ে নিয়ে যেতে পারে সবাই দোয়া করবেন। তার কাগজের নৌকা থেকে জানতে পারি। এভাবেই পিছনের পৃষ্ঠা উল্টাতেই চোখ বন্ধ করে ভাবি, কি ডেডিকেশনটাই না ছিল? আমরা কি পারব এই ডেডিকেশন দিতে একটি লোকাল পত্রিকাকে আন্তর্জাতিক রূপ দিতে?
লেখক:ট্রান্সকম গ্রুপের সাবেক কর্মকর্তা। মিথিলাপুর,বুড়িচং।