কাঠমিস্ত্রির জোগালি পড়ছেন ঢাকা মেডিকেলে!

হাসিবুল ইসলাম সজিব ।।
শেখ রেজাউল। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্র। গত ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে(ঢামেক) ২৫০ আসনের শেখ রেজাউল ১৫৬তম হয়েছে। সে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার নবীনগর গ্রামের শেখ আলামিনের ছেলে।
হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান শেখ রেজাউল। বাবা কাঠমিস্ত্রি। পরিবারের সদস্য পাঁচজন। তার মধ্য সে বড় ছেলে। মা হ্যাপি আক্তার গৃহিণী। বাবার অল্প আয়ে পরিবার চালানো ছিল দুঃসাধ্য। তার সাথে বাকি বোন গুলোও লেখাপড়া করতো। তাই পড়াশোনা পাশাপাশি রেজাউল বাবার সাথে অন্য বাড়িতে কাঠমিস্ত্রির জোগালি দিতেন। দিন দিন পড়াশোনা পাশাপাশি রেজাউলের পারিবারিক খরচ বাড়তে থাকে। এক সময় তার বাবার পক্ষে লেখাপড়ার ব্যয়বহন করা অসম্ভব হয় পড়ে। ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় দেয় এবং তার মেরিট স্কোর-২৮৩.২৫। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ২০২৩ সালে এইচএসসিতেও জিপিএ ৫ পায়। তার লেখাপড়ার খরচ দরিদ্র ফান্ড এবং শিক্ষকদের টাকা দিয়ে চলে।
শেখ রেজাউল জানান, আমি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। আমাদের পরিবারের অবস্থা ছিলো নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো। আমার ইচ্ছা ছিলো বড় হয় ডাক্তার হবো। আমার মতো হতদরিদ্র পরিবারের মানুষের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করবো। তাই পড়াশোনা পাশাপাশি আমি বাবার সাথে কাঠমিস্ত্রির জোগালী হিসেবে কাজ করতাম। আমার লেখাপড়ার আগ্রহ দেখে পরিবারে সদস্যরা পড়াশোনার প্রতি যতœশীল ছিলেন। সে সাথে আমার শিক্ষকরাও আমাকে মেডিকেলে পড়ার ক্ষেত্রে অনেক সাহায্যে এবং সহায়তা করেছেন। তাদের এ কোন ঋণ ভুলার মত নয়।
মা হ্যাপি আক্তার জানান, আমার ছেলে ছিলো খুব মেধাবী। যখন সে সময় পেতো তখনই বই নিয়ে বসে যেতো। অভাব অনটনের পরিবার তো, তাই প্রথম প্রথম ওকে অনেক বকাবকি করতাম। যখন আমার ছেলে স্কুলের পরীক্ষা গুলোতে ভালো ফলাফল করে তখন পরিবারের সকল সদস্যরা তাকে সহযোগিতা করতেন। আমাদের স্বপ্ন ছিলো সে একজন ডাক্তার হবে। দোয়া করি আমার ছেলে যেন ডাক্তার হয়ে এলাকার মানুষের উপকার করতে পারে।
রসায়ন বিভাগের প্রদর্শক মোঃ বেলায়েত হোসেন বলেন, আমার ক্লাসের সকল ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে শেখ রেজাউল ছিলেন অন্যরকম। লেখাপড়ার প্রতি ছিলো মনোযোগ। তার সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে জানি যে শেখ রেজাউল ছুটির দিনগুলোতে বাবার সাথে কাঠমিস্ত্রির জোগালী হিসেবে কাজে যেতেন। তা দিয়ে লেখা পড়ার চালাতে খুব কষ্ট হতো। তাই আমরা সকল শিক্ষকরা এবং দরিদ্র ফান্ড থেকে তার পড়লেখার খরচ ব্যবস্থা করে দিতাম। আমার ছাত্র দেশ মাতৃকার সেবায় আত্মনিয়োগ করবে শিক্ষক হিসেবে এটাই বড় প্রাপ্তি।
কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আবু জাফর খান বলেন, এ বছর ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে এখন পর্যন্ত ৮৪ জনের সুযোগ পাওয়ার খবর পেয়েছি। অন্যান্য বছরের হিসেবে এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলে প্রত্যাশা করছি। ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার মান ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অক্লান্ত পরিশ্রমই কলেজের সুনাম ধরে রেখেছে। মেধাবী শিক্ষার্থী শেখ রেজাউলসহ সুযোগ পাওয়া অন্যান্য সকলের প্রতি অভিনন্দন জানাচ্ছি।