কান্দিরপাড়ে বছরে একদিন বসে যে আনন্দ হাট!

 

 মাহফুজ নান্টু । 
কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড়। বুধবার ঈদের দিন।  হাতের অনুমানে এখানে গরুর গোশত বিক্রি হয়। যারা কোরবানি দিতে পারেন না তারা এখানে আসেন গোশত কিনতে। আর যারা মানুষের বাড়ি গিয়ে গোশত সংগ্রহ করেন তারা এই হাটের বিক্রেতা। যুগ যুগ ধরে চলছে মাংস বিক্রির এই হাট। হাট বসে বছরে একবারই।
কোলে দু’বছর বয়সী কন্যাকে নিয়ে কান্দিরপাড়ে গোশত কিনতে এসেছেন সুরাইয়া বেগম। বাসায় কাজ করেন। তিনি থাকেন শহরতলীর ধর্মপুর এলাকায়। স্বামী মারা গেছেন বছরখানেক আগে।  যেসব বাসায় কাজ করেন সেখান থেকে মাঝে মধ্যে এক আধটু মাংস দেয়। কিনে খেতে পারেন না। আজ প্রায় তিনকেজি গোশত কিনেছেন। সুরাইয়ার চোখেমুখে আনন্দ।
কুমিল্লা ইপিজেডে কাজ করেন মনোয়ার হোসেন। বাসা ভাড়া, এক ছেলের লেখাপড়ার খরচ দিয়ে হাতে তেমন টাকা থাকে না। সেখানে গরুর গোশত কিনে খাওয়া তার কাছে অলীক স্বপ্ন। সেই  মনোয়ার হোসেন আজ খোশ মেজাজে আছেন। মাত্র দেড় হাজার টাকায় প্রায় সাড়ে ৩ কেজি গোশত কিনেছেন। মনোয়ার বললেন, কান্দিরপাড় আসার সময় তেল মসলা কিনেছি। এখন গোশত নিয়ে বাসায় যাবো। ছেলেটা কয়েকবার ফোন করেছে কখন বাসায় যাবো। স্ত্রীকে বলেছি রান্নার আয়োজন করতে। আজ সবাই মিলে গরুর গোশত দিয়ে ভাত খাবো। হাতে আনন্দের ব্যাগ নিয়ে বাসার পথে পা বাড়ান মনোয়ার।
ঈদের দিন বেলা ১২ টায় একটি ব্যাগ নিয়ে বাসা থেকে বের হন মইদুর মিয়া। তিনি ভ্যান চালক। নগরীর ডুলিপাড়া এলাকায় একটি ছোট টিনের ঘরে ভাড়া থাকেন। আজ কোন কাজ নেই। ঘরে বসে থাকতেও ভালো লাগছে না। সকালে ঘরে পাঙাস মাছ আর ভাত রান্না হয়েছে। দুপুর থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি ঘুরে অন্তত ৮ কেজির মত গোশত সংগ্রহ করেছেন। হাতের ওজনে প্রায় চারকেজি দুই হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। বাকিটা ঘরে নিয়ে যাবেন। তার আগে গোশত বিক্রির টাকায় রাজগঞ্জ বাজারে গিয়ে তেল মসলা কিনবেন।  মইদুর বলেন, ভ্যান চালাইয়া আর কয় টেকা পাই। দুইটা পোলা একটা মাইয়া আছে। এডি স্কুলে পড়ে। পোলা মাইয়ার খরচ, ভাত তরকারির খরচ মিল্লা চলতে বহুত কষ্ট হয়। গোশত কিন্না খায়াম এইডা চিন্তাও করি না। আইজ যেডি পাইছি বউরে কয়াম এডির মধ্যে একটু রানতো। আর একটু রাইখ্খা দিতাম কয়াম।
এই হাটে আসেন নগরীর বিভিন্ন হোটেলের মালিকরা।
ছোট একটি ভাতের হোটেল চালান নোমান মিয়া। সাড়ে ৮ হাজার টাকায় তিনি ১৫ কেজি গোশত কিনেছেন। নোমান বলেন, আমি ব্যবসায়ী মানুষ। কয়ডা টাকা পাওয়ার জন্য গোশত কিনছি। আরেকটু অপেক্ষা করতাছি। দেহি দামে মিললে আরো কয়েক কেজি কিনমু।
অনেক মধ্যবিত্তরাও আসেন এই হাটে। নিজেদেরকে লুকিয়ে গোশত কিনেন। কিছুটা কম দামে পাওয়ার আশায় তারাও অপেক্ষা করেন । দরদাম করেন। গোশত কিনেন। তারপর আনন্দে ভরা ব্যাগ নিয়ে বাসায় ফিরেন।