কারণহীন মন খারাপে গোমতীর সান্নিধ্যে!

ইলিয়াছ হোসাইন।।
আঠারো ফাল্গুন। আজ মন খারাপের দিন! জানিনা কেনো মন খারাপ। আমাদের কারণহীন মন খারাপগুলো খুবই অদ্ভূত। তখন মন শুধু প্রকৃতিকে টানে। মন ভালো করার একটা উপায় হচ্ছে ক্যামেরা হাতে প্রকৃতির খুব নিকটে চলে যাওয়া। আমি তাই করি;নদীর কোল ঘেঁষে হাঁটতে থাকি। জলের কলকল শব্দে মন গলতে থাকে। দুপুরের কড়া রোদও তখন নদীর মৃদু বাতাসে শীতল হয়ে যায়। প্রকৃতিতে বসেছে ভাঁটফুলের মেলা। সাদাসাদা ভাঁটফুলে বসে মৌ মাছির দল মধু সংগ্রহে ব্যস্ত,তার সাথে প্রজাপতিও। আমি সেই অনিন্দ্য দৃশ্য ক্যামেরায় বন্দি করতে ব্যস্ত। কিছু দূর যেতেই শিমুলের টকটকে লাল রঙ আমাকে ডাকছে;খুব কাছে ডাকছে। আমি তার ডাকে সাড়া না দিয়ে থাকতে পারিনি। কাছেই যেতে দেখি শিমুলগাছের শাখায় শাখায় শালিকের কিচিরমিচির গান। আমি সেই গান ধারণ করলাম। ছবির একেকটা প্রেম আমার মনকে ভালো করে দিচ্ছে।

 

inside post

দুপুরের রোদ মাথায় নিয়ে হাঁটতে থাকি অবিরাম। বৃক্ষের ছায়ায় বসে বিস্তৃত সবুজে চোখ জুড়িয়ে যায়। দেখা হয় ফিঙে,শালিক,কোকিলের সাথে। আড্ডা হয় তাদের সাথে। মন ভালো করতে আর কি লাগে! আমার মন ভালো করতে পাখিরা আজ পরিপাটিভাবে বসে আছে বৃক্ষের ডালে। তাদের সাথে কথা হয়েছে, অজানা কথা।
পাড় থেকে নেমেই দেখি আফসোসের সুর! দেখেছি মাটির ক্ষত বিক্ষত চিহ্ন! শুনেছি তার ক্রন্দন। যার কারণে বন্যায় বাঁধ ভেঙেছে। কতো মানুষের স্বপ্ন ভেসে গেছে। এতো কিছুর পরও নদী থেকে মাটি কাটার উৎসব বন্ধ হয়নি! তবে এখন দিনে কাটেনা,লজ্জায় রাতে কাটে। পত্রিকার পাতায় পাতায় বড় বড় শিরোনাম হয়,তবুও তাদের লজ্জা হয়না। আসলেই তারা সীমাহীন নির্লজ্জ।
ক্যামেরা তাক করে আছি শিমুলের ডালে। তার মাঝে কাঠবিড়ালি একডাল থেকে লাফিয়ে অন্য ডালে যাচ্ছে। শিমুল ফুলের মাঝখানে মুখ ঢুকিয়ে খাবার খাচ্ছে। মাঝে মাঝে ড্যাবড্যাব চোখে এদিক-সেদিক তাকাচ্ছে। শিমুলের ডালে কাঠবিড়ালির লুকোচুরি দৃশ্য মনকে আরো আনন্দিত করলো। এ দৃশ্যও আলোকযন্ত্রে বন্দি রাখলাম।
ক্লান্তিহীন হেঁটে চলছি;নির্দিষ্ট কোন গন্তব্য নেই। কেবল ছায়া খুঁজে বেড়াচ্ছি। একটু থামবার ছায়া।
জীবনে কোথাও কোথাও থামতে হয়, থামতে না জানলে জীবনের ছন্দপতন ঘটে! ছন্দপতন ঘটুক আমি চাইনা। তাই বৃক্ষের তলে হাত-পা ছেড়ে মাটির বিছানা পাতার বিরামচিহ্ন খুঁজছি। ফসলি মাঠ অতিক্রম করে অবশেষে পেয়ে গেলাম নির্জন তীর। যেখানে বসলে দূর থেকে বয়ে আসা নদীর বাঁক দেখা যায়।
জেলেদের জাল ছিটানোর দৃশ্য। ছিপ দিয়ে মাছ ধরার দৃশ্য। আর তাদের ধৈর্য মাপার যন্ত্র নিয়ে বিপরীতে আমি বসে আছি। নদীর ওপাশে গরুর পাল ঘাস খাওয়ার নিদারুণ ছবি হৃদয়ে নাড়া দেয়। জলের উপর পাতা বিহীন বৃক্ষের ছায়া যেনো মনের ভেতর চাপা থাকা কষ্ট গুলো ধুয়ে দেয় নিমিষেই।

বসন্তের দখিনা বাতাস। হাওয়ায় দোলা পাতার ফোঁ ফোঁ শব্দ আমাকে মোহিত করছে। নদীর জলে কিশোর দলের ঝাঁপাঝাপি। আমিও তাদের সাথে মেতে উঠেছি। ছেলে বেলাটা প্রাণে বেজে উঠেছে। লাফ মেরে নেমে পড়লাম। সূর্যের কিরণে ঝলমল করছে পানি। সেই চাকচিক্যতায় দু’হাত মেলে আমি ভাসছি,সেই সঙ্গে ভাসছে মনের চাপা কষ্ট। আমি আকাশ দেখছি! কষ্টগুলো প্রবাহমাণ স্রোতে ভেসে যাচ্ছে;একবারের জন্যেও স্রোতের বিপরীতে ফিরে তাকাবার সুযোগ পাচ্ছেনা। শরীর একেবারেই হালকা হয়ে গেছে। শান্তি! কান্তি! কেবল শান্তি। এ যেনো দেহের সুখ,চোখের সুখ,স্বর্গীয় সুখ।
লেখক:আলোকচিত্রী।

আরো পড়ুন