আমদানি পণ্যে স্বস্তি দেশীয় পণ্য চড়া


প্রতিবছর রমজানে কুমিল্লায় আমদানি পণ্যের দাম বেশি থাকলেও । এবার সেই চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। আমদানি পণ্যের চেয়েও দেশে উৎপাদিত ভোগ্যপণ্যের দাম বেশি জানিয়েছে ক্রেতারা।
ক্রেতারা বলছেন, রমজানের চাঁদ রাত থেকে কুমিল্লার বাজারে প্রতিকেজি বেগুনের দাম কেজিপ্রতি ২০-৩০ টাকা বেড়ে বিক্রয় হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়। এমনকি কোন কোন বিক্রেতা ৭০ টাকা দামেও বিক্রয় করছে প্রতিকেজি বেগুন। এছাড়া ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বরবটি, শিমের বিচি, মিষ্টি কুমড়া, পেপেসহ বিভিন্ন সবজির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
বেড়েছে সালাদ পণ্য লেবু, খিরা, শশা, ধনে পাতার দামও। এর মধ্যে ১৫ টাকার নিচে কোনো লেবুই পাওয়া যাচ্ছে না। বড় সাইজের একটি লেবু কিনতে হলে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ১৫-২০ টাকা পর্যন্ত।
বুধবার (৫ মার্চ) কুমিল্লা নগরীর কয়কটি বাজার ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে। এ সময় ক্রেতারা বলেন, এবার আমদানি পণ্যের দাম স্বাভাবিক থাকলেও নিত্যপণ্য বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বরবটি, শিমের বিচি, মিষ্টি কুমড়া, পেপেসহ বিভিন্ন সবজি দামের কিছু টা বেশি । দেশে উৎপাদিত এসব নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে ব্যবসায়ীদের তেলেসমাতি চলছেই।
তবে বিক্রেতাদের দাবি, রমজানে বেগুনসহ সবধরণের সবজি ও সালাদ পণ্যের চাহিদা একটু বেশি থাকে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পাইকারি আড়তেই দাম বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা। ফলে খুচরা পর্যায়ে বেশি দামে বিক্রয় হচ্ছে সালাদ পণ্য।
নগরীর ইপিজেড এলাকার কাঁচা বাজারের সবজি বিক্রেতা সেলিম বলেন, চাঁদ রাতের আগের দিনের তুলনায় ১০-২০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সবজি। বাজারে এখন প্রতিকেজি আলু ১৮-২০ টাকা, ফুলকপি ৩০-৪০ টাকা, বাধাকপি ৩০-৪০ টাকা, টমেটো ২০ টাকা, বেগুন ৫০-৬০ টাকা, বরবটি ৭০- ৮০ টাকা, শিমের বিচি ৮০-৯০ টাকা, কচুর ছড়া ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার পিস ৪০ টাকা, করলা ৮০-৯০ টাকা, পেঁপে ৪০-৫০ টাকা, চিচিঙা ৬০-৭০ টাকা, ধুন্দল ৫০-৬০টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে গত বছর রমজানের তুলনায় এবার সবজির দাম এখনো পর্যন্ত কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে আছে। আবার কখন কি হয় বলা যাচ্ছে না, এর চেয়ে দাম আরও বাড়বে কি না সেই আতঙ্কে আছি। সবজির দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রাখতে তিনি নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানান।
রোজার ইফতারে শরবতের অন্যতম অনুষঙ্গ লেবু। এবার পবিত্র রমজানে সেই লেবুর জন্য গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। বাজারে এখন ১পিস লেবু ১৫-২০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না।
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে লেবুর চড়া মূল্য দেখা গেছে।
লেবু ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন বলেন, ‘কিছুদিন আগেও এক লেবুর দাম ছিলো পাঁচ টাকা। এখন কিনতে হয় ১৩ হাজার টাকায়। প্রতি পিস লেবুতে দাম বৃদ্ধি হয়েছে ৭ টাকা করে। লেবু বেশি দামে কেনা, তাই বিক্রিও বেশি দামে।’
একই কথা বলেছেন ব্যবসায়ী ফারুক মিয়াও। তিনি জানান, বড় লেবু প্রতি হালি ৬০ টাকায় কেনা, আমরা বিক্রি করছি ৮০ টাকায়। ছোটগুলো প্রতি হালি ৫২ টাকায় কেনা ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি। এছাড়া কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ৬০ টাকায় কিনে ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি করছি। ধনেপাতা প্রতি কেজি ২০ টাকায় কিনে ৪০ টাকায় বিক্রি, গাজর ২০ টাকায় কেনা, ৩০ টাকায় বিক্রি এবং খিরা ১৫ টাকা কেনা ৩০ টাকায় বিক্রি করছি।
তিনি বলেন, রমজানে লেবু, খিরা, গাজর, শশা ও কাঁচা মরিচের চাহিদা বেশি থাকে। তবে এবার লেবুর সিজন আসেনি এখনো। এমন সময় রোজার মাস পড়েছে। সিজন ছাড়া দাম কমার সম্ভাবনাও কম। তার মতে, বৃষ্টির সিজনে লেবুর দাম কমে যাবে। তখনই মূল সিজন লেবুর। ফলন বেশি হলে দামও কমে যাবে।
আল আমিন হোসেন জানান, রমজানের আগে লেবুর হালি ক্রয় করেছি ২০ টাকা দরে। এখন কিনতে হচ্ছে ৬০-৮০ দরে প্রতি হালি। অন্য দেশে রমজানের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমতে থাকে। আমাদের দেশে ঠিক তার উল্টো।
বাজারে এখনো কাটেনি সয়াবিন তেলের সংকট। কোনো মুদির দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল সাজানো নেই। শুধু সয়াবিন তেল চাইলেও মিলছে না। যারা নিয়মিত বাজার করেন, কিংবা একসঙ্গে বেশ কয়েকটি মুদি আইটেম কিনছেন, তাদের বাজারের আকার অনুসারে সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন মুদি দোকানিরা। তারপরেও লিটারে ১৫-২৫ টাকা পর্যন্ত বেশি দিতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
বিষয়টি স্বীকার করেছেন বিভিন্ন মুদি দোকানদার । তারা জানান, বাজারে সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে আমরা ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী সয়াবিন তেল বিক্রি করতে পারছি না। অথচ দেশে প্রচুর সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে। সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে সয়াবিন তেল সংকট হয়েছে বলে দাবি করেন।
কুমিল্লার বাজারগুলোতে ইফতারের প্রধান উপাদান ছোলা, চিনি, বেসনের দাম স্বস্তিদায়ক পর্যায়ে রয়েছে। ছোলা বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১১০-১২৫ টাকা দরে, খেসারি ১১০-১২৫, বেসন ১২০, চিনি ১২৫, মুড়ি-চিড়া প্রতিকেজি ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া দেশি পেঁয়াজ ৩৫-৪৫ টাকা, ভারতীয় ৫০-৬০ টাকা, বুটের ডাল ৬৫-৬৮,
মশুরের ডাল ১০৫-১১০এবং রসুন নতুন ১০০,পুরাতন রসুন ২২০, আদা ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ভারত ছাড়াও বিকল্প ছয়টি দেশ থেকে দেশে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। ফলে বাজারে পেঁয়াজের দামে স্বস্তি নেমে এসেছে। তবে পাইকারি বাজারের চেয়ে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দামও বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা।
ক্রেতারা জানান, পাইকারিতে যেই পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৩০ টাকা, সেটি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। পাইকারিতে ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ টাকা হলেও খুচরাতে একই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়।