কুমিল্লার গ্রামে চলছে জাদুর মিশিন!

অফিস রিপোর্টার।।
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম নবীপুর। এখানের জমি মাঝারি উঁচু। বোরো,আউশ ও আমন তিন মৌসুমে ধানের আবাদ হয়। লাগানোর সময় নারীদের কষ্ট কম হলেও মাড়াইয়ের সময় বেশি পরিশ্রম করতে হয়। পায়ে চাপা মেশিন বা হাতে পিটিয়ে ধান সংগ্রহ করতে হয়। রাত-দিন এক করেন। রান্না-গোসল কিংবা সন্তানের যতœ কিছুই করা হয়ে উঠে না। ধুলাবালিতে একাকার। কম্বাইন হার্ভেস্টারে ধান মাড়াই করাতে অনেক কম পরিশ্রম করতে হচ্ছে সেই নারীদের। ধানের জমিতে থাকা মেশিন থেকে বস্তায় ধান নিয়ে নিতে পারছেন কৃষক।
ওই গ্রামের কিষাণী সালমা বেগম ও মাজেদা খাতুন বলেন,একপাশ দিয়া চোখের নিমিশে ধান কাটা শেষ,অন্য পাশে গরগর শব্দে বস্তায় ধান ঢুকছে। দেশে জাদুর মিশিন আইছে। আমরার কষ্টও কমছে।


নবীপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম। প্রবাসে ছিলেন। দেশে এসে নিজের জমি চাষ করেন। তার একটি ধান লাগানোর রাইস ট্রান্সপ্লান্টার রয়েছে। তিনি ট্রেতে চারা লাগান। ট্রেতে থাকা চারা মেশিনে লাগানোর কারণে চাষে সময় কম লাগে। এতে তিন ফসলের স্থলে সরিষাসহ চার ফসল করতে পারছেন। তিনি বলেন,প্রথম দিকে যখন মেশিনে ধান লাগাতে যেতাম, অনেকে হা করে তাকিয়ে থাকতেন। কেউ কেউ মেশিন ছুঁয়েও দেখতেন।
কুমিল্লা সদর উপজেলার যশপুর গ্রামের আবদুল খালেক। তার হার্ভেস্টার রয়েছে। তিনি বলেন, এক একর জমির ধান কেটে মাড়াই করতে এক ঘন্টা সময় লাগে। খরচ লাগে ৭হাজার টাকা। সেখানে শ্রমিক দিয়ে কাটলে একদিন সময় লাগে, খরচ লাগে ১৪হাজার টাকা। তিনি বলেন, তার পাশের শিমপুর,পান্ডানগর,শিমড়া,বামইল ও শ্রীপুরের দুই তৃতীয়াংশ জমি মেশিনের মাধ্যমে কাটা হয়। এতে কৃষকের অর্ধেক খরচ কমে গেছে। কমেছে পরিশ্রম। রোধ হয়েছে ১৫ভাগ ধানের অপচয়।
সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের সূত্র জানায়,উপকূলীয় ও হাওড় এলাকায় ৭০ভাগ ও অন্যান্য এলাকায় ৫০ ভুর্তুকীতে ১২ক্যাটাগরির যন্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশে প্রায় ৩৪হাজার যন্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। কুমিল্লায় ৫৬টি হার্ভেস্টারসহ ৯৬টি যন্ত্র বিতরণ করা হয়েছে।
সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক তারিক মাহমুদুল ইসলাম বলেন,কুমিল্লায় দীর্ঘদিন কাজ করেছি। এখানের কৃষক আধুনিক। কুমিল্লায় দিন দিন কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। এদিকে ৩বছর আগে দেশে মেশিনে ৪ভাগ ধান কাটা হতো। বর্তমানে তা ১৭ভাগে দাঁড়িয়েছে। আমরা আশা করছি ২০৩০সালের মধ্যে শতভাগ জমি যান্ত্রিকভাবে চাষাবাদের আওতায় আসবে।