কুমিল্লার মৃৎশিল্প ও মৃৎশিল্পীদের কথা– তাহরিমা ইসলাম

মৃৎশিল্প মানে মাটির গন্ধ,মায়ের অস্তিত্ব ,কাদামাটি নিয়ে খেলা। ঠিক একইভাবে মৃৎশিল্প মানেই কুমিল্লার বিজয়পুর। উঠানজুড়ে কাদামাটির স্তূপ, দুই পাশে দুটি লম্বাটে আধাপাকাঘর। এরপাশের একটি ঘরে চলছে মাটির মণ্ড তৈরির কাজ। তৈরি করা মণ্ড যন্ত্রের ছাঁচে কিংবা হাতের নিখুঁত নকশায় রূপান্তরিত হতে থাকে দৃষ্টিনন্দন মাটির শিল্পকর্মে। শুকানো মৃৎপণ্য আগুনে পুড়ে পোড়ামাটির রূপ নেয়। তারপর রং করা,রঙ্গিন হয়ে ওঠে রংতুলির আঁচড়, দেখে মনেই হয় না যে মাটির তৈরি! আরেকটি ঘরে পণ্য সব থরে থরে সাজিয়ে রাখা। দেশ এবং দেশের বাইরে পৌঁছে যাবে মাটির তৈরি এসব পণ্য।
বিজ্ঞাপন
হরেকরকমের সংগ্রহ নিয়ে আধিপত্য চলছে ১৯৬১ সাল থেকে।দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ ছুটে আসে মাটির তৈরি সামগ্রি সংগ্রহের জন্য।বিজয়পুর ও আশপাশের গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের পাল গোত্রের লোকজন বহু বছর ধরে টিকিয়ে রেখেছেন অতিপ্রাচীন এই মৃৎশিল্প। আর মৃৎশিল্পের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে কাজ করে চলছে বাংলাদেশ সমবায় একাডেমি। মৃৎপণ্য তৈরি থেকে শুরু করে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, সেলাই কাজ ও অন্যান্য উপার্জনক্ষম কার্যক্রমের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে বাংলাদেশ সমবায় একাডেমি। দ্বিজেন্দ্র পাল এর হাত ধরে এই মৃৎশিল্পকেন্দ্রের পথচলা শুরু হয়েছিল,বর্তমানে এর সার্বিক দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন বিপ্লব পাল।বর্তমানে ৫০ জনের একটি দল কাজ করে যাচ্ছে,তাদের মাঝে মহিলা কর্মীর সংখ্যার প্রায় ১০জন।মহিলা কর্মীর একজন নাসিমা বলেন, “এই মৃৎশিল্প তার সংসার চালানোর একমাত্র মাধ্যম।প্রায় একবছরের উপরে তিনি এখানে কাজ করছেন।মাটির সাথে কাজ করতে আনন্দ পান।

বিজ্ঞাপন
প্রদর্শনী ও বিক্রয়কেন্দ্রের পাশেই আছে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মৃৎশিল্প সমিতির সদস্যরা তাঁদের কাজের দক্ষতা ও পরিধি বাড়ান। শুধু তা-ই নয়, প্রতি তিন-চার মাস অন্তর ৫ থেকে ১৫ দিন মেয়াদে দেশের নানা প্রান্তের মৃৎশিল্পীরা এসে এখানে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পান।
বর্তমান পরিচালক বিপ্লব পালের সাথে কথা বলে যানা যায়,বর্তমান পরিস্থিতিতে বেচাকেনা কম।তবে অনলাইন উদ্যেক্তাদের মাধ্যমে ভালো চলছে। আক্ষেপ করে বলেন যে সাধারণ দর্শনার্থী ক্রেতা বর্তমানে নেই বললেই চলে।হারিয়ে যাচ্ছে মানুষের আনাগোনা।তিনি প্রত্যশা রাখেন করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কুমিল্লার বিজয় পুর মৃৎশিল্প আবার দর্শনার্থী এবং মৃৎপণ্য বেচাকেনার পূর্ব গৌরব ফিরে পাবে।

তাহরিমা ইসলাম

শিক্ষার্থী , কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ।