কুমিল্লায় আওয়ামী লীগ ও পুলিশের তাণ্ডব চলছেঃ ড. মোশাররফ

 

 প্রতিনিধি।।
 শনিবার (২৬ নভেম্বর) কুমিল্লা টাউন হল প্রাঙ্গণে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও পুলিশ নারকীয় তাণ্ডব চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার ড. মোশাররফ হোসেন। শুক্রবার কুমিল্লার একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি। 

 

ড. মোশাররফ বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর থানার কনস্টেবল বিশ্বজিৎ শর্টগান ঠেকিয়ে নির্মমভাবে ছাত্রদল নেতা নয়নকে হত্যা করে। অথচ মামলা দেয় বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে। এ মামলায় রফিক ও সাইদুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

 

তিনি বলেন, কুমিল্লার লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। এ উপজেলায় ক্ষমতাসীনরা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। এখানকার বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা হিরু আর হুমায়ুনকে ৯ বছর গুম করে রাখা হয়েছে। এখানে বিএনপি ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হচ্ছে। মনোহরগঞ্জের বিপুলাসার বাজারে ১৭ সেপ্টেম্বর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু সস্ত্রীক হামলার শিকার হয়েছেন। গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে ১০-১২ দিন ধরে নারকীয় তাণ্ডব চালাচ্ছে সরকারি দলের চিহ্নত সন্ত্রাসীরা। সাদা পোশাকে পুলিশ পরিচয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে গিয়ে ভীতি প্রদর্শন করছে। ২১ নভেম্বর মধ্যরাতে লাকসাম পৌরসভা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনির আহমেদের বাড়িতে গিয়ে সাদা পোশাকের পুলিশ পরিচয়ে হামলা ও ভাঙচুর করেছে। লিফলেট বিতরণ করায় চাঁদপুর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সলিম উল্লাহ সেলিমের বাড়িসহ বিভিন্ন নেতাকর্মীদের বাড়িতে পুলিশি তল্লাশি ও ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। ২৩ নভেম্বর হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি উপজেলায় ঘরে ঘরে তল্লাশি ও গণগ্রেপ্তার করা হয়েছে।

 

গত ১৯ নভেম্বর কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের খিলা ইউনিয়নের বাতাবাড়ীয়া গ্রামে গণসমাবেশ উপলক্ষ্যে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের প্রস্তুতি সভায় হামলা চালিয়ে স্থানীয় ছাত্রদল নেতা লিটনের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এতে ছাত্রদল, যুবদলের ৩ নেতাকর্মী আহত হয়। তার আগের দিন সন্ধ্যার পর লাকসাম পৌর এলাকার চাঁদপুর রেলগেট এলাকা থেকে লাকসাম পৌর ১নং ওয়ার্ড যুবদল নেতা আমান উল্লাহকে তুলে লাকসাম রেলক্লাবে নিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে তার মোবাইল ফোন ও টাকা পয়সা রেখে ছেড়ে দেয়া হয়। লাকসাম-মনোহরগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমন ঘটনা এখন প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে।

 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার গোপিনাথপুর গ্রামে বিএনপি নেতা ডা. নাসিরের বাড়িতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত স্থানীয় চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, আমজাদ ও রুবেল মাস্টারের নেতৃত্বে ৭০-৭৫ জনের অস্ত্রধারী বাহিনী নাসিরের ঘরের দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে ডাক্তার নাছিরকে না পেয়ে তার পরিবারের নারী সদস্যদের মধ্যযুগীয় কায়দায় লাঞ্ছিত করেছে। এসময় গর্ভবতী মহিলাও তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। কুমিল্লা বিভাগের প্রায় প্রতিটি জেলা উপজেলায় বিএনপির কুমিল্লা গণ-সমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকারি দল এবং পুলিশ নারকীয় তাণ্ডব চালাচ্ছে। তবে তারা যতই নির্যাতন-নিপীড়ন করুক কুমিল্লা বিভাগবাসীকে আগামীকাল কোন অপশক্তি দমিয়ে রাখতে পারবে না।
ড. মোশাররফ আরও বলেন, এই সরকার ভোট চোর সরকার। প্রধানমন্ত্রী যশোরের একটি সমাবেশে বলেছেন, আপনারা ভোট দিয়ে পলাতক নেতাকে ক্ষমতায় আনতে চান? এর মানে সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে। এ কথা প্রধানমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন।
তিনি বলেন, আপনার দেখেছেন, সমাবেশকে উপলক্ষ করে গোটা কুমিল্লা নগরী উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে। এত বাধাবিপত্তির পরও আগের সাতটি সমাবেশ ব্যাপক শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কথা দিলাম, কুমিল্লার সমাবেশও শান্তিপূর্ণ হবে।

 

মোশাররফ বলেন, সরকারের বিভিন্ন লোকজন বলছেন, খেলা হবে। এটা খেলা নয়, রাজনীতি। এই রাজনীতির মাধ্যমেই আমরা দেশের ভেঙে পড়া অর্থনীতিকে মেরামত করতে চাই।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সমাবেশের প্রধান সমন্বয়ক আমিন-উর-রশিদ ইয়াছিন ও বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া।