কুমিল্লায় বন্যায় মোকাবেলা

 

কুমিল্লা দেবিদ্বার উপজেলার গোমতী নদীর চরের ৫০৯ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলার জাফরগঞ্জ ইউনিয়নের রঘুরামপুর, গঙ্গানগর ও পৌরসভার বড় আলমপুর এলাকা পানিতে ভাসছে। ইতোমধ্যে এসব এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ডুবে গেছে কুমিল্লা সদর,বুড়িচংসহ বিভিন্ন উপজেলার গোমতী চরের বাড়ি-ঘর,তলিয়ে গেছে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের সবজি। বাড়ছে পানি। গোমতী নদীর পানি বিপদ সীমা ছুঁই ছুঁই করছে। কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল গুলো পানিতে ডুবে গেছে। এনিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

দেবিদ্বারে রঘুরামপুর এলাকার বাসিন্দা সোহরাব হোসেন বলেন, গোমতীর পানিতে এলাকার অন্তত ৫০৯টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে গেছে। আমরা চেষ্টা করছি সবাইকে বাড়ি থেকে সরিয়ে নিরাপদ জায়গায় নিতে। আমাদের সাথে উপজেলা প্রশাসন রয়েছে।
পানিবন্দিদের মধ্যে রঘুরামপুরের ৩০০ টি, পৌরসভার বড় আলমপুর এলাকার ১৬২ টি ও গঙ্গানগরের ৪৭টি পরিবার রয়েছে। এছাড়াও পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে একটি টিম পুরো এলাকার কোথাও বেড়িবাধের ক্ষতি হয়েছে কিনা দেখাশোনা করছে।

দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশিক উন নবী তালুকদার জানান, ঝুঁকিপূর্ণ ইউনিয়নগুলোতে সোমবার রাত ৯ থেকে ১১ টা পর্যন্ত মাইকিং করা হয়েছে। যদি গোমতীর বেড়িবাঁধের কোথাও কোনও ইঁদুরের গর্ত দিয়েও পানি ঢোকে সে বিষয়টিও কর্তৃপক্ষকে জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে। এরপর রাতে একটি এলাকায় সংস্কার কাজ করা হয়েছে। উপজেলার লক্ষ্মীপুরের চাঁনপুর অংশ ঝুঁকিপূর্ণ, তাই সেই এলাকার মানুষদের সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। এর বাইরে, আমরা বড় আলমপুর এলাকার শিবনগর দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গঙ্গানগর এলাকার জন্য বিষ্ণুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রঘুরামপুরের একটি মাদ্রাসার ভবন ও জাফরগঞ্জ সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রস্তুত করেছি।
এদিকে টানা কয়েকদিনের বৃষ্টি আর উজানের ঢলে ডুবে গেছে কুমিল্লার গোমতী চরের বাড়ি-ঘর,তলিয়ে গেছে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের সবজি। জেলার বুড়িচং উপজেলার ভান্তি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ডুবে যাওয়া সবজি খেতে মুলা তুলতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন সফিকুল ইসলাম।

তিনি জানান, ৪০ শতক জমিতে মুলা চাষ করেছেন। তার ব্যয় হয়েছে ২০ হাজার টাকা। তার মতো ওই এলাকায় অন্তত ২০ জন কৃষক চরে মুলা, ঢেঁড়শ, পুইশাক, লাউ, চাল কুমড়ো, চিচিঙ্গা, বরবটি চাষ করেছেন।

আদর্শ সদর উপজেলার জালুয়াপাড়া ও সুবর্ণপুর এলাকার কৃষক লালমিয়া ও হোসেন মিয়া বলেন, ২০০ শতক জমিতে শসা চাষ করেছেন। এতে তার বিনিয়োগ ছিলো ৮০ হাজার টাকা। তার মতো নদীর ওই চরে আরো অন্তত কুড়িজন কৃষক শসা চাষ করেছেন। সবার শসার মাচা পানিতে তলিয়ে গেছে।

গোমতী নদী কুমিল্লা জেলার সদর, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, দেবিদ্বার, মুরাদনগর, দাউদকান্দির উপর দিয়ে বয়ে গেছে। এসব উপজেলার অন্তত কুড়ি হাজার সবজি চাষি আছে। তাদের সবার দশা একই রকম। চরের ফসল হারিয়ে বাকরুদ্ধ। তাদের দাবি গোমতীর পানি বৃদ্ধিতে তাদের প্রায় দশ কোটি টাকার ফসল বিনষ্ট হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, জরিপ করে দেখবো কতজন কৃষকের কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করবো।

এদিকে গোমতীর পানি বৃদ্ধি নিয়ে দুপাড়ের বাসিন্দারা ভীষণ দুঃচিন্তায় রয়েছে।

ডুবে গেছে কুমিল্লার গোমতী চরের অনেকের বাড়ি-ঘর। চরের জগন্নাথপুর এলাকার বাসিন্দা জসিমের বসতঘরে কোমর পর্যন্ত পানি। তাকে ঘরের মালামাল সরাতে ব্যস্ত দেখা গেছে।
কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, গোমতীর পানি বিপৎসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বর্তমানে পানির উচ্চতা ৯.৯ মিটার। যেখানে বিপৎসীমা হিসেবে ধরা হয়েছে ১০.৭৫ মিটার। পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি পেতে পারে।

আমরা জানি,দেশের সিলেট,সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির এখনও উন্নতি হয়নি। কুমিল্লার লাাগোয়া ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য। সেখানে বৃষ্টি বাড়লে কুমিল্লার জন্য তা আতংক হয়ে দেখা দেয়। উজানের পানিতে গোমতীর বাঁধ ভাঙলে জান মালের ক্ষতি হবে। গোমতীর বাঁধ সুরক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ জেলা প্রশাসনকে সচেতন থাকতে হবে।