কুমেক হাসপাতালে দালাল নিয়ন্ত্রণে বদলি-ধরপাকড়

 

মহিউদ্দিন মোল্লা ।।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতাল। কুমিল্লাসহ আশ-পাশের জেলার কোটি মানুষের শেষ ভরসাস্থল। হাসপাতালটিতে বিভিন্ন কথিত ক্লিনিক,অ্যাম্বুলেন্স ও ফার্মেসির দালালদের উৎপাত চরমে। দালালদের সাথে হাসপাতালের কিছু স্টাফও জড়িত আছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি দালাল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে হাসপাতাল প্রশাসন। দালালদের আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হচ্ছে, এছাড়া অভিযুক্ত স্টাফদের বদলি ও শো-কজ করা হচ্ছে।
সূত্রমতে, ১৯৯২ সালে এ হাসপাতালটি ২৫০শয্যার হাসপাতাল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে এটি ৫০০ শয্যায় উন্নীত হয়। কুমেক হাসপাতালে কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলা,চাঁদপুর,ব্রাহ্মণবাড়ি,ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষীপুরের রোগী আসে। এখানে এসে তাদের অধিকাংশ বিভিন্ন কথিত ক্লিনিক,অ্যাম্বুলেন্স ও ফার্মেসির দালালের খপ্পরে পড়েন। কোন একজন রোগী এলে তার সাথে এমন অভিনয় করেন যেন পরম আত্মীয়। দৌড়ে গিয়ে ওষুধ নিয়ে আসবে। টেস্ট না লাগলেও টেস্ট করাতে নিয়ে যাবে। গ্রামের সরল রোগী ও তার স্বজনরা ভাবতে শুরু করেন,এখনও সমাজে এত ভালো মানুষ আছে! তাদের মোহভঙ্গ হয় ওষুধ বা টেস্টের বিল দেখে। ৫০০টাকার ওষুধ দিয়ে ৩০০০টাকার বিল ধরিয়ে দেন। যার সাধারণ এক্স-রে করার দরকার নেই তার হাতে এমআরই রিপোর্ট ধরিয়ে দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দালালরা। তারা নিরক্ষর রোগী ও তাদের স্বজনদের বেশি বেকায়দায় ফেলছেন।
সূত্র আরো জানায়,দালাল চক্রের উৎপাত বেশি হয় বিকাল বেলায়। কারণ তখন ডাক্তারদের ডিউটি কম থাকে। রোগীকে ডাক্তার নেই বলে কথিত ক্লিনিক থেকে পরীক্ষা করিয়ে আনে।
রোগীর স্বজন বরুড়ার নুলয়া চাঁদপুরের কামাল হোসেন বলেন, প্রশাসন ইচ্ছে করলে এখানে দালাল মুক্ত করতে পারে। প্রয়োজনে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করতে পারে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম বলেন,কুমেক হাসপাতাল,কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতাল ও উপজেলার সরকারি হাসপাতাল গুলোতে স্বল্পমূল্য সেবা নিতে আসেন মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্তের পরিবারের লোকজন। সেখানে তাদের ভোগান্তিতে ফেলে দালালরা। বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালের সামনে স্থাপিত বেসরকারি অধিকাংশ হাসপাতাল গুলো মানহীন, তাদের দালালদের তৎপরতা বেশি নজরে পড়ে। এবিষয়ে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে কঠোর নজরদারী করতে হবে।
কুমিল্লা মেডিকেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন,দালালের উৎপাত রয়েছে এটা সত্য। আমরা হয়তো একদিনেই তা নির্মূল করতে পারবো না। এতে আমার চেয়ার নিয়ে টানাটানি লেগে যাবে। নির্মূল করতে সময় লাগবে। আমরা দালাল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। সম্প্রতি ৮৬জনকে ধরে পুলিশে দিয়েছি। তারা ছাড়া পেয়ে এসে আবার শুরু করে। অভিযান চালিয়ে তাদের দৌড়ের ওপর রাখছি। আমাদের কিছু দুষ্ট স্টাফ আছে, তাদের বিরুদ্ধেও বদলিসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের বিষয়ে পুলিশ সুপারের সাথে কথা বলবো।
কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. নাছিমা আকতার বলেন,সরকারি হাসপাতাল গুলোর সামনে কিছু ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। মানহীন গুলোর বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নেয়া শুরু করেছি। দালাল নিয়ন্ত্রণেও আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।