খাদির জেলায় মসলিনের উৎসব

 

কুমিল্লার চান্দিনা ও দেবিদ্বার উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে চলছে মসলিনের সুতা কাটার উৎসব। গ্রাম গুলো হচ্ছে,চান্দিনার সোনাপুর, দোতলা। দেবিদ্বারের রামপুর। তিন গ্রামের ২২৬জন নারী সাতটি স্থানে সুতা কাটছেন।

মসলিনের ঐতিহ্য ফেরানোর সাথে স্বাবলম্বী হচ্ছেন গ্রামের নারীরা। এনিয়ে গত সপ্তাহে সাপ্তাহিক আমোদ পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
সংবাদে উল্লেখ করা হয়, মসলিন ফুটি কার্পাস তুলা থেকে প্রস্তুত সূতা দিয়ে তৈরি করা সূক্ষ্ম কাপড়। চরকা দিয়ে কাটা, হাতে বোনা মসলিনের জন্য সর্বনিম্ন ৩০০ মেট্রি কাউন্টের সুতা ব্যবহার করা হতো। বলা হয় আংটির ভেতর দিয়ে ঢুকে যায় একটি শাড়ি। নানা কারণে আঠারো শতকের শেষ দিকে বাংলায় মসলিন কাপড় তৈরি বন্ধ হয়ে যায়।
ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে ঊনবিংশ শতাব্দীতে স্থানীয়ভাবে প্রস্তুত করা বস্ত্রের উপরে ৭০ হতে ৮০ শতাংশ কর আরোপ করা হয়। যেখানে ব্রিটেনে প্রস্তুত-করা আমদানিকৃত কাপড়ের উপরে ২ থেকে ৪ শতাংশ কর ছিল। এতে ভারতীয় উপমহাদেশের তাঁতশিল্পে ধস নামে। কথিত আছে, ব্রিটিশ শাসকেরা মসলিন উৎপাদন বন্ধ করার জন্য তাঁতিদের হাতের বুড়ো আঙুল কেটে দেয়।

 

বাংলাদেশের সোনালি ঐতিহ্য মসলিন সুতা তৈরির প্রযুক্তি ও মসলিন কাপড় পুনরুদ্ধার প্রকল্পের আওতায় ছয় বছর গবেষণার পর ২০২০ সালে ছয়টি ঢাকাই মসলিন শাড়ি তৈরি করা হয়। ১৭০ বছর পরে বাংলাদেশে আবার বোনা হয় মসলিন কাপড়ের শাড়ি। ইতিমধ্যে ঢাকাই মসলিনের জিআই স্বত্বের অনুমোদন পাওয়া গেছে। ঢাকাই মসলিন তৈরির জন্য কাজ করেন একদল গবেষক। ছয় বছরের গবেষণায় তৈরি হয় মসলিনের ছয়টি শাড়ি। যার একটি গবেষকেরা প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিয়েছেন। আগামীতে এই শাড়ি সর্বসাধারণের জন্য বাজারে আনা সম্ভব হতে পারে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মাধাইয়া বাস স্ট্যান্ডের পাশের গ্রাম সোনাপুর। এই গ্রামের চারটি বাড়িতে,পাশের রামপুরের ২টি বাড়িতে এবং দোতলায় গ্রামের একটি বাড়িতে মসলিন কাপড়ের সুতা কাটা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে সোনাপুর মুন্সী বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একটি টিনের ঘরের দুইটি কক্ষে চরকায় সুতা কাটছেন ৪৫জন নারী। সবাই সোনাপুর গ্রামের বাসিন্দা। চরকা ঘুরাচ্ছেন এক হাতে অন্য হাতে অল্প তুলা দিয়ে সুতা তৈরি করছেন। গ্রামে বসে আয় করতে পেরে নারীদের চোখে মুখে খুশির আমেজ।
সুপার ভাইজার গ্রামের নারী রোকসানা আক্তার বলেন, সোনাপুর ও আশপাশের গ্রামে আগে মোটা সুতা কাটা হতো। তাঁত বোর্ড থেকে ৬বছর আগে তাদের ৪০জনকে মসলিন কাপড়ের সুতা কাটার প্রশিক্ষণ দেয়। সেখান থেকে তাদের ছয়জনকে বাছাই করা হয়। তারা ৬জন তিন গ্রামের ২২৬জন নারীকে প্রশিক্ষণ দেন। এক বছর সময় ধরে তারা মসলিন সুতা কাটছেন। সকাল ৭টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তারা সুতা কাটেন। প্রতিদিন ২৫০টাকা মজুরি পান।
বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের অধীন বাংলাদেশের সোনালী ঐতিহ্য মসলিন সুতা ও কাপড় তৈরির প্রযুক্তি পুনরুদ্ধার প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোঃ আইয়ুব আলী বলেন, এই প্রকল্প ২০১৮সালে শুরু হয়। কুমিল্লার চান্দিনা, দেবিদ্বার, নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জে ৩২৬জন এই সুতা কটেন। ফুটি কার্পাস তুলা আনা হয় রাজশাহী ও গাজীপুর থেকে। মসলিনের সুতা মেশিনে কাটা সম্ভব নয়। ছিঁড়ে যায়। হাতে ধীরে ধীরে এই সুতা কাটতে হয়। একজন নারী দিনে ১ থেকে ২গ্রাম সুতা কাটতে পারেন। রুপগঞ্জে ২৩জন কাপড় তৈরি করেন। প্রতিটি কাপড়ের মূল্য ৭লাখ টাকা।

 

খাদির জেলায় মসলিনের সুতা কাটার উৎসব উৎসাহব্যঞ্জক বিষয়। তার সাথে খাদিও ঘুরে দাঁড়াক। আবার খাদির সুতা কাটা ও কাপড় বোনার উৎসব শুরু হোক কুমিল্লার গ্রামে গ্রামে। কুমিল্লা তার ব্র্যান্ড নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক।