খুন হওয়া নৈশপ্রহরীর পরিবারের করুণ গল্প!

স্টাফ রিপোর্টার।।
চার মেয়ে আর তাদের বাবা-মা। সুখের সংসারে দাদিও ছিল অংশীদার। হাসিখুশির জীবন ছিল পরিবারের। অর্থের শূন্যতা থাকলেও তা হাসি মুখের চাদরে ঢাকা পড়তো। মাত্র একরাতের মধ্যেই তাসের ঘরে মতো ভেঙে গুঁড়িয়ে গেল এই সুখ। ইচ্ছা, ভালোবাসা আর হাসি এখন উঁকিও দেয় না তাদের পরিবারে।  কুমিল্লার বরুড়ায় খুন হওয়া নৈশপ্রহরী আবুল হাশেমের পরিবারের এখন এমন দশা।
‘আব্বা খুন হওয়ার পর থেকে আমরা নিজেরাই আমগো আব্বার কাজটা করতে হয়। আব্বাই একা রুজির মানুষ ছিল। সারাদিন মানুষের কাজ করতেন আর রাতের বেলায় বাজার পাহারা দিতেন।’ আমাদের কুমিল্লার সাথে আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন খুন হওয়া আবুল হাশেমের মেয়েরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, চার মেয়েই এখন চার ছেলের ভূমিকায়। নিজেদের চাষের জমিতে নিজেরাই হাল চাষ দিচ্ছেন। মই কাঁধে নিয়ে ছুটছে পুরো জমিতে। গরু দিয়ে চাষ করানোর সাধ্য নেই বলে নিজেরাই করছেন হাল চাষ। ধানের জমি প্রস্তুত করা শেষ। ধানের চারা রোপণের জন্য বীজতলা থেকে ধানের চারা তুলে আটি করছেন। মাথার ঘাম পায়ে পড়ছে, সাথে নীরবে চোখের পানিও পড়ছে। কাজের ফাঁকে সব ভুললেও বাবাকে তো আর ভোলা হয় না। বাড়ির পাশেই বাবার কবর। বেশি দূরে না থাকতেও এতই দূরে যে আর দেখা হয় না! দেখা হবেও না। তবুও বুঝের মানুষগুলো অবুঝের মতো ছুটে যায় কবরের পাশে। দেখা হবে না জেনেও একটিবার দেখার জন্য। এভাবেই কাটে আধ বেলা। দুপুরে মা রান্না করে রাখছেন আর মেয়েরা কাজ শেষ এসে খেতে বসছেন। এখনকার খাবারটা কিছুটা ভিন্ন। প্রত্যেকটা ভাতের লোকমায় যেন একেকটা পাহাড় সমান কষ্টের ছাপ। একটা শূন্যতা ঘিরে রেখেছে পরিবারটাকে। কেউই যেন কাউকে বুঝতে দিচ্ছে না সে কষ্টে আছে। এমন কঠিন বাস্তবতাই পার করছেন কুমিল্লার বরুড়ার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের নলুয়া চাঁদপুর গ্রামের নৈশ প্রহরী আবুল হাশেমে পরিবার। আবুল হাশেমের মেয়ে আরও জানান, খুনি বাবুল এখনও বাইরে, আর আমরা ধুঁকে ধুঁকে মরি।
মৃত আবুল হাশেমের স্ত্রী মালেকা ভানু জানান, আর চার দিনের ভাতের চাল আছে। এই চাল শেষ হলে কিনতে হবে বাজার থেকে। কিন্তু তার স্বামী আবুল হাশেমের শুধু ঘরের ভিটাটুকুই আছে। জমানো কোন পয়সাকড়ি নেই। কীভাবে মেয়েগুলোকে খাওয়াবেন, কীভাবে নিজে খাবেন- এমন প্রশ্নই তার মুখে লেগে আছে। তিনি আরও জানান, যে আমাদের এই কঠিন বিপদে পালাইছে, ওই খুনি বাবুইল্লা তার বিচার কি আর হবে না? এখনও নাকি হেতে ধরতে পারেনাই।
এদিকে আবুল হাশেমের মেজো ভাইয়ের ছেলে আবু সাঈদ জানান, জেঠা মারা যাওয়ার পর আমরাও দিশেহারা হয়ে আছি। কি না কি করবো তাই বুঝে উঠতে পারছি না। আমরাও আর্থিকভাবে এত বেশি ভালো নেই যে আমাদের বোনেদের নিজেরা খাওয়াবো। যা সাধ্যে কুলাচ্ছে তাই করছি। আমরা সবাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে জেঠার খুনি বাবুলের ফাঁসি চাই।
আবুল হাশেমের ছোট ভাই শফিক জানান, আমরা এক বাড়িতে থাকি দুই ভাই। বড় ভাই আমাদের মোটামুটিভাবে একটু সাহায্য করতো। স্বল্প টাকার বেতন হলেই আত্মীয়স্বজনদের কষ্টে এগিয়ে আসতো। কিন্তু তার ঘরেই এখন চাল নেই। আমরা দেখছি কি করা যায়।
বরুড়া থানার এসআই মেহেদী জানান, এখনও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসেনি। রিপোর্ট আসলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।