গন্তব্য মনপুরা দ্বীপ

inside post

ইমতিয়াজ আহমেদ।।

কুমিল্লা জিলা স্কুলের ১৯৭৮ সালের ব্যাচের ফখরুল ভাইদের জীবনে ০১ নভেম্বর ২০২৫ সালের সকালটি যেন এক অনন্য অধ্যায় হয়ে রইল।একটি সকাল, যা মিশে আছে স্মৃতি, সাগর আর বন্ধুত্বের উচ্ছ্বাসে।
ভোরের শিশিরভেজা হাওয়া, হালকা কুয়াশা আর দূর থেকে ভেসে আসা ঢেউয়ের গর্জনে শুরু হয় তাদের অভিযাত্রা। নোয়াখালীর চেয়ারম্যান ঘাট থেকে স্কুলজীবনের ২৫ জন সহপাঠী একত্রে সামুদ্রিক বড় নৌকায় চড়ে রওনা দিলেন বঙ্গোপসাগরের মোহনার পথে—গন্তব্য মনপুরা দ্বীপ।
নৌকা যখন গভীর জলে প্রবেশ করল, তখন যেন ঢেউয়ের তালে তালে দুলে উঠল তাদের হৃদয়েরও এক টুকরো শৈশব। কেউ হাসতে হাসতে বলছে স্কুলের মাঠে ক্রিকেট খেলার গল্প, কেউ বা স্মরণ করছে সেই ‘ভয়ংকর’ কিন্তু প্রিয় শিক্ষককে (ইংলিশ টিচার মকবুল স্যার), যিনি বকাঝকায় যেমন কঠোর ছিলেন, তেমনি ভালোবাসায়ও অফুরন্ত। উত্তাল জলরাশির কারণে বন্ধুদের মধ্যে দুয়েকজন আতঙ্কিত হয়ে মুখ শুকিয়ে ফেললে, ফখরুল ভাই তাদের ভরসা দিতে হাসলেন।
এক সময় ফখরুল ভাই চোখে দুষ্টুমি ভরা হাসি নিয়ে এক জেলের হাত থেকে জাল তুলে বললেন—
“চল ভাইরা, দেখি আজ আমরাও কেমন জেলে হই!”
সবাই উৎসাহে মেতে উঠল। জাল ছোঁড়ার মুহূর্তে যেন উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ল পুরো নৌকায়। কিছুক্ষণ পর জাল টেনে তুলতেই দেখা গেল রুপালি ঝলমলে ইলিশ—টাটকা, সাগরের ঘ্রাণে ভরা, জীবনের পরিশ্রম ও সৌন্দর্যের প্রতীক যেন। সবাই উচ্ছ্বাসে চিৎকার করে উঠল—“ওই যে, ধরা পড়ছে সোনার ইলিশ!”
জেলে ভাইয়েরা পাশে বসে ধৈর্য ধরে তাদের শেখাচ্ছেন, কীভাবে জাল ছোঁড়া থেকে মাছ তোলা পর্যন্ত একে একে সাগরের নিয়ম মানতে হয়। আর ফখরুল ভাই ও তার বন্ধুরা বুঝে নিচ্ছেন জীবনের গভীর পাঠ—
“মাটি, জল, ঘাম আর পরিশ্রমের মধ্যেই লুকিয়ে আছে মানুষের প্রকৃত আনন্দ।”
বিকেলে যখন সূর্য সাগরের বুক ছুঁয়ে রক্তিম আলো ছড়িয়ে বিদায় নিচ্ছিল, তারা সবাই নৌকার ডেকে বসে একসাথে টাটকা ইলিশ হাতে গান ধরলেন—
🎵 “তুমি বন্ধু কালা পাখি, আমি যেন কী,
বসন্তকালে তোমায় বলতে পারিনি…” 🎵
সেই মুহূর্তে গান, ঢেউ আর ইলিশের ঘ্রাণ মিশে তৈরি হলো এক অনির্বচনীয় আনন্দ। হাসি, নাচ আর গল্পের ফাঁকে তারা বললেন—
“জীবনও ঠিক এরকম—ঢেউয়ের মতো ওঠানামা করলেও শেষ পর্যন্ত হাসিটাই জয়ী হয়।”
সেদিনের সেই মনপুরা সফর কেবল একটি ভ্রমণ নয়—ছিল এক ফিরে দেখা, এক নতুন উপলব্ধি।
বন্ধুত্ব, প্রকৃতি আর জীবনের গভীরতার এক অপূর্ব মিলনমেলা।

আরো পড়ুন