চর ঘাট আর সবুজের গালিচায়…

inside post
আল-আমিন কিবরিয়া |
ভ্রমণ এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা। পরিচয় করিয়ে দেয় নতুন নতুন সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ইতিহাসের সাথে। দেখা হয় জানা হয় মানুষের জীবনধারার সম্পর্কে। এবার দুই দিনের ভ্রমণে রাইজিং জার্নালিস্ট ফোরাম কুমিল্লা যায় নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলায়।
ঘুরে দেখা হয় এই দুই জেলার চর আলেকজান্ডার লঞ্চ ঘাট, হাতিয়ার নৌঘাট, ও চেয়ারম্যান ঘাট, সুবর্ণচর পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) উপকেন্দ্র, নোয়াখালী কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) ও এই দুই জেলার বিস্তীর্ণচরের সয়াবিন চাষ। এর আগে দেখা হয় নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। আলেকজান্ডার লঞ্চ ঘাট। লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতির উপজেলায় এর অবস্থান। মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত এ ঘাট এলাকাটি ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে হতে পারে এক বিশেষ দর্শনীয় স্থান। ঘাটের পাশেই সারিসারি ডিঙি নৌকা নোঙ্গর করা। বাতাসে ঢেউ ঢেউয়ের সাথে দুলছে এসব নৌকা। এ ঘাট থেকে থেকে ছেড়ে যায় তিনটি যাত্রীবাহী লঞ্চ। যায় মেঘনার ওপারের চরাঞ্চলে।
হাতিয়ার নৌঘাট। পদ্মা-মেঘনার মিলন ঘটেছে এখানে। এ নৌঘাট দেখতে সুন্দর হলেও ভয়ংকর। ভাঙ্গনে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে মাইলের পর মাইল ফসলি মাঠ, বাড়িঘর ও স্থাপনা। তাও বেঁচে থাকার আশা নিয়ে লড়াই করছে এখানকার মানুষ। হাতিয়ার নৌঘাট থেকে স্পিডবোর্ড যায় হাতিয়ার মূল ভূখণ্ডে।
চেয়ারম্যান ঘাট। বঙ্গোপসাগর ও পদ্মা-মেঘনার মাছঘাট হিসাবে পরিচিত। এ ঘাটে সকাল সন্ধ্যা চলে মাছ ধরা ও কেনা-বেচার উৎসব। জেলেরা মাছ ধরার ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে সাগর ও নদী থেকে মাছ ধরে আসে এ ঘাটে। এ ঘাটের ট্রলারে আমারা আনন্দে গাইতে থাকি সাদা সাদা কালা কালা গান। এছাড়াও গাওয়া হয় আরো বিভিন্ন গান।
সুবর্ণচর পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) উপকেন্দ্র। চরাঞ্চলের কৃষি নিয়ে কাজ করে এই উপকেন্দ্রটি। এ কেন্দ্রের ভিতরে পরিবেশ চারদিকে সবুজের সমারহ। সকাল বিকাল গবেষণামূলক রোপনকৃত কৃষি গাছ গাছালি পরিচর্যা করেন শ্রমিকরা। পরিচর্যার দৃশ্য মন কারবে যে কারোর।
নোয়াখালী কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)। এ যেন ছবির মতন সুন্দর দৃশ্য। সাজানো-গোছানো পরিপাটি বৃক্ষ। কি নেই এখানে, ফুল,ফল, কাঠ, ঔষধিসহ আছে বিভিন্ন গুণ সম্পন্ন গাছতলা। শুনশান পরিবেশ সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলে দুগুণ।
সয়াবিন। লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের চাষ হয় এ তেল ফসল৷ তেল ফসল হলেও তেলের ঘাটতির মেটাতে ভূমিকেই রাখতে পারছেন না। কৃষিবিদ ও চাষিরা বলছেন, সয়াবিন একটি সম্ভাবনাময় ফসল হলেও তেল উৎপাদন ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা না এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার সকাল ৭টায়। কুমিল্লা থেকে নোয়াখালী ও লক্ষীপুরের উদ্দেশ্য রওয়ানা হই। এ ভ্রমণে যায় রাইজিং জার্নালিস্ট ফোরাম কুমিল্লার শুভানুধ্যায়ী গোমেতি সংবাদ সম্পাদক মোবারক হোসেন ও বাংলাদেশ প্রতিদিন কুমিল্লা প্রতিনিধি মহিউদ্দিন মোল্লা, সভাপতি ঢাকা ট্রিবিউনের কুমিল্লা প্রতিনিধি মহসীন কবির, নির্বাহী সদস্য বাংলা নিউজের তৈয়বুর রহমান সোহেল, এখন টিভির মাসুদ আলম, বাংলাদেশ জার্নালের মোহাম্মদ শরীফ, প্রচার সম্পাদক খোলা কাগজের আল-আমিন কিবরিয়া ও সহযোগী সদস্য গোমেতি সংবাদের রাকিব হোসেন।
কান্দিরপাড় থেকে আমাদের বহনকারী মাইক্রোবাস ছেড়ে পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড হয়ে পৌঁছে যায় নোয়াখালীর মাইজদী বাজারে। সেখানে সকালের নাস্তা শেষ করে পৌছে যাই নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ইমরান হোসেন মিয়াজী ও নিয়মিত সদস্য মুস্তাকিম সাদিক ঘুরে দেখায় তাদের ক্যাম্পাস। কথা হয় দুজনে শিক্ষকের সাথেও। এখান থেকে যাই লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চর আলেকজান্ডার ঘাটে। এই লঞ্চ ঘাট ঘুরে চলে যাই সুবর্ণচর পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) উপকেন্দ্রে। এখানে বিকেল পর্যন্ত হয় আমাদের যাত্রা বিরতি। পরে যাই হাতিয়ার নৌঘাট। এর পাশে চেয়ারম্যান ঘাট। এ দুই ঘাটে সন্ধ্যার কাটে আমাদের আনন্দের সময়। গান আড্ডায় মেতে ছিলাম আমরা। পরে আবার আসি বিনা উপকেন্দ্র। রাত্রি যাত্রা বিরতি হয় এখানে। এরপর দিন মঙ্গলবার সকালে ঘুরে দেখা এ হয়ে উপকেন্দ্রের গবেষণামূলক বিভিন্ন গাছ-গাছালি। শেষে পৌঁছে যাই নোয়াখালী কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)। এ বিএডিসি এলাকা ঘুরে  দেখে মন ভরে যায়। এর পর দেখা হয় নোয়াখালীর চলাঞ্চলের সয়াবিন চাষ। এখানে ঘুরে চলে আসি গোলকবাজার গোলক ফিশারী এলাকায়। ঘোরাঘুরি ও দুপুরের খাবার। পরে আবার একই পথে চলে আসি কুমিল্লা শহরে।
 বিনা’র গবেষণা কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের উপ প্রকল্প পরিচালক ড. মো. আশিকুর রহমান  ও সাংবাদিক মোবারক হোসেন ভাইয়ের স্বজনের আতিথেয়তা অনেক দিন মনে থাকবে।
রাইজিং জার্নালিস্ট ফোরাম কুমিল্লার সভাপতি মহসীন কবির বলেন, সব জায়গারই নিজস্ব বিশেষত্ব রয়েছে। ভ্রমণের মাধ্যমে আমরা ঐ স্থানগুলির প্রতি আমাদের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা এবং প্রজ্ঞা অর্জন করি। কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই নয়, ভ্রমণ আমাদের মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে, নতুন নতুন রীতিনীতি জানতে সহায়তা করে।
নির্বাহী সদস্য তৈয়বুর রহমান সোহেল বলেন, ভ্রমণের সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো এটি আমাদের মনকে মুক্ত করে। দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গতিনাশক চাপ থেকে মুক্তি পেয়ে, আমরা নতুন কিছু শিখতে এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সক্ষম হই। এটি আমাদের উদ্যম এবং সৃজনশীলতাকেও উজ্জীবিত করে। সেইসাথে, ভ্রমণ একটি চমৎকার উপায় আত্মসমালোচনা ও আত্মবিশ্লেষণের জন্য।
আরো পড়ুন