চৌদ্দগ্রামে সম্পত্তির বিরোধ, দুই দিন ধরে ঘরে পড়ে আছে পিতার লাশ !

 

আমোদ প্রতিনিধি।।

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে দুই পরিবারের সন্তানদের মাঝে পিতার সম্পত্তি সঠিকভাবে বন্টন না করার অভিযোগে বৃদ্ধের লাশ দাফনে বাধা দিয়েছে প্রথম সংসারের ছয় মেয়ে। এদিকে সম্পত্তি দিতে নারাজ ২য় সংসারের সন্তানরাও। মৃত্যুর দুইদিন অতিবাহিত হলেও নিহতের নিথর দেহ এখনো পড়ে আছে নিজগৃহে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার চিওড়া ইউনিয়নের কবরুয়া গ্রামে। নিহতের নাম মোঃ নুরুল হক ভূঁইয়া (৭৮)। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সমস্যা নিরসনের জন্য কাজ করছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত লাশ দাফন করা হয়নি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার ভোরে নুরুল হক ভূঁইয়া তাঁর নিজ ঘরে ব্রেইন স্ট্রোক করলে পরিবারের লোকজন তাকে ঢাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সোমবার সকাল ৯টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানে তার মৃত্যু হয়। পরে লাশ বাড়িতে নিয়ে গেলে তাঁর দুই পরিবারের সন্তানরা সম্পত্তি নিয়ে পূর্ব বিরোধের জেরে লাশ দাফনে জটিলতা তৈরি করে।

নিহতের পরিবার সূত্রে আরো জানা গেছে, নুরুল হক ভূঁইয়া প্রায় পঞ্চাশ বছর পূর্বে উপজেলার কনকাপৈত ইউনিয়নের কাগাইশ গ্রামের মজুমদার বাড়ির আয়েশা আক্তারকে বিয়ে করেন। নুরুল হক-আয়েশা দম্পতির সংসারে ছয় কন্যা সন্তান রয়েছে। চট্টগ্রাম স্টিল মিলে চাকুরীর সুবাধে সুরমা আক্তার নামে সন্দীপের আরেক নারীকে বিয়ে করেন। নুরুল হকের দ্বিতীয় সংসারে দুই ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে। তিনি নতুন বাড়ি করে দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে বসবাস করতে থাকেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তানরা নুরুল হক ভুঁইয়া থেকে ১৪০ শতক জমি কবলা করে তাদের নামে নিয়ে নেন। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে প্রথম স্ত্রী ও তাঁর কন্যাদেরকে হুমকি প্রদর্শন করে দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে-মেয়েরা। পরে নুরুল হক ভুঁইয়ার প্রথম স্ত্রী বাদী হয়ে সম্পত্তির ন্যায্য হিস্যা দাবি কওে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করে। স্থানীয়ভাবে বিষয়টির নিস্পত্তি করা হলেও বাড়িতে এসে ২য় স্ত্রীর সন্তানরা আবারও সম্পত্তি থেকে তাদের বঞ্চিত রাখে। সমস্যা সমাধান করার আগে নুরুল হক ভুঁইয়া সোমবার সকালে মৃত্যু হরে পিতার সম্পত্তির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে গ্রামবাসীকে সাথে নিয়ে লাশ দাফনে বাধা প্রদান করে প্রথম স্ত্রীর ছয় মেয়ে সন্তান। এ সময় দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তানরা প্রথম স্ত্রীর কন্যাদেরকে সম্পত্তি নিতে অস্বীকার করে প্রবাস থেকে ছেলে নুরুল আফছার মোবাইল ফোনে গ্রামবাসীকে বলেন, ‘বাবার লাশ দাফনের দরকার নেই, আমরা কাউকে এক কড়া সম্পত্তিও দেব না’।
স্থানীয় ইউপি সদস্য পেয়ার আহমেদ বলেন, ‘নিহত নুরুল হক ভুঁইয়ার দুই পরিবারের শান্তির জন্য এবং তাঁর লাশ দাফনের ব্যবস্থায় গ্রামবাসীকে সাথে নিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি’।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, ‘সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে পিতার লাশ দাফনে বাধা দেয়ার খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ২য় পক্ষ ছাড় দিলে এতো সমস্যা হতো না। ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই পরিবার ও এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে আলোচনা সাপেক্ষে সমাধান করা হচ্ছে। ’।