ছাত্রীকে যৌন হয়রানির প্রতিবাদ, ভিক্টোরিয়ার শিক্ষার্থীকে মারধর ছাত্রলীগ নেতার

প্রতিনিধি।।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রী ও থিয়েটার কর্মীকে যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করায় এক ছাত্রকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বুধবার তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আবু জাফর খান।
তিনি জানান, তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার পক্ষ-বিপক্ষের সবাইকে ডাকা হয়েছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের সদ্য সাবেক সভাপতি, কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রলীগ নেতা ও কুমিল্লার বরুড়ার লক্ষীপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম রুবেল থিয়েটারের এক নবীন মেয়ে সদস্যকে নিয়মিত উত্ত্যক্ত করে আসছেন। বিভিন্ন সময়ে মধ্যরাতে ওই ছাত্রীকে ইঙ্গিতমূলক মেসেজ পাঠাতেন রুবেল। মহড়া কক্ষেও ওই ছাত্রীর সাথে দুর্ব্যবহার করতেন তিনি। এছাড়া থিয়েটারের ৫৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগও ওঠে তার বিরুদ্ধে। এসব ঘটনায় ১৮জন থিয়েটার কর্মী পদত্যাগ করে। ওই ছাত্রীকে থিয়েটারের উপদেষ্টা বরাবর অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দেন নাইমুর রহমান ভূঁইয়া নামে এক নাট্যকর্মী। এমন কথা শোনার পর ক্ষিপ্ত হন রুবেল।
মারধরের শিকার নাইমুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, আমাদের এক নারী সদস্যকে দীর্ঘদিন ধরে হয়রানি করে আসছিল সদ্য সাবেক সভাপতি এস এম রুবেল। মেয়েটি আমার নিকট সহযোগিতা চাওয়ায় তাকে উপদেষ্টা বরাবর লিখিত দেয়ার পরামর্শ দিয়েছি, এমন অজুহাত এনে আমাকে গত ২৮ মার্চ রাত সাড়ে ৮টায় ফোন করে ডেকে নিয়ে ১০-১২ জন মিলে প্রচ- মারধর করেন। আমার বুকের ওপর পা তুলে মারে। গায়ের জামা-কাপড় ছিঁড়ে যায়। জিলা স্কুলের সামনে থেকে মারতে মারতে আমাকে প্লানেট এসআর শপিং কমপ্লেক্সের একটি কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে নেয়ার পর এস এম রুবেল আমাকে নানাভাবে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করেন। এখন পড়াশোনা করা ও এই শহরে নিরাপত্তা নিয়ে আমি শঙ্কিত।
ওই ছাত্রী জানান, রুবেল ভাই যেভাবে আমার পিছু নিয়েছেন, তাতে আমি পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে শঙ্কিত। স্বাভাবিক জীবনযাপন করতেও অসুবিধা হচ্ছে। এসবের প্রতিবাদ করায় নাইমের প্রতি নির্মম আচরণ করেন তিনি। আমি এর সঠিক বিচার চাই।
অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা ও নাট্যকর্মী এস এম রুবেল বলেন, আমি নাইমকে মারধর করিনি। তাকে বাঁচাতে সেখানে গিয়েছিলাম। ওই ছাত্রী যে অভিযোগ তুলেছে, সেটি সঠিক নয়। থিয়েটারে আগেও এমন হয়েছে, পুরোনো কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে আসলে একটি পক্ষ নারীঘটিত কেলেঙ্কারির অভিযোগ তুলে নতুন কমিটিতে প্রভাব বিস্তার করতে চায়।
এসব বিষয়ে জানতে কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কাজী সায়েম বলেন, রুবেল ছাত্রলীগের সাথে যুক্ত থাকলেও সমস্যা থিয়েটার নিয়ে। কলেজ প্রশাসন, সিনিয়র থিয়েটার সদস্যরা মিলে সমস্যাটি সমাধান করা উচিত। ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটার বাংলাদেশের নামকরা নাট্য সংগঠন। থিয়েটারের সম্মানের সাথে কলেজের সম্মান জড়িয়ে আছে।
এদিকে নাইমকে মারধরের একদিন পূর্বে কুমিল্লা নগরীর রাণীর বাজার এলাকায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাম্মেল হক নামে এক ছাত্রকে মারধর করে ধর্মপুরের কিশোর গ্যাং সদস্যরা। শিক্ষার্থীদের ধারণা, নাইমকে না পেয়ে ভুলবশত মোজাম্মেলের ওপর হামলা চালানো হয়।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) আহমেদ সনজুর মোর্শেদ বলেন, দুটি ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র আছে কিনা, সে বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।