জাহাজে ৭খুনে গ্রেফতার ইরফান ৭ দিনের রিমান্ডে
চৌধুরী ইয়াসিন ইকরাম চাঁদপুর।।
চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে সারবোঝাই জাহাজে চঞ্চল্যকর ৭ খুনের ঘটনায় গ্রেফতার আকাশ মন্ডল ওরফে ইরফানকে ৭ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
বুধবার ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ সন্ধ্যায় চাঁদপুরের জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মুহাম্মদ ফারহান সাদিক এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় তাকে
আদালতে হাজির করা হয়। তার বিরুদ্ধে জিআর ১৬৬/২৪ এর মামলায় আদালতে ১০ দিন রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চাঁদপুর সদরের হরিণা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মোঃ কালাম খা।
এ বিষয়ে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ কালাম খা জানান, আদালতে আমি ইরফানের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। আশা করছি তাকে জিজ্ঞাসাবাদেই সব তথ্য বেরিয়ে আসবে।
এসময় জামিন শুনানি কালে রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী হিসেবে ছিলেন চাঁদপুর জেলা জজ কোর্টের এপিপি অ্যাড: শরীফ মাহমুদ সায়েম, এপিপি অ্যাড: মাসুদ প্রধানীয়া, এপিপি অ্যাড: ইয়াসিন আরাফাত ইকরাম, এপিপি অ্যাড: শাহজাহান খান, আইনজীবী অ্যাড: শামিম হোসেন, অ্যাড: মিল্টন, অ্যাড: তোফায়েল।আসামের পক্ষে কোন আইনজীবী ছিলেন না।
এর আগে মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) দিনগত রাতে আসামী আকাশ মন্ডল ইরফানকে র্যাব-৬ এর সহতায় র্যাব-১১ কুমিল্লা অভিযান চালিয়ে বাগেরহাট জেলার চিতলমারী থেকে গ্রেপ্তার করে। পরে দুপুরে আসামীকে র্যাব-১১ কুমিল্লায় নিয়ে আসে। সেখানে তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন র্যাব-১১ এর উপ-অধিনায়ক মেজর সাকিব হোসেন।
গ্রেপ্তার আকাশ মণ্ডল (২৫) বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট এলাকার জগদীশ মণ্ডলের ছেলে।
বিকেলে র্যাব-১১ এর একটি দল আসামী আকাশ মন্ডলকে নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চল এর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে হস্তান্তর করেন। সেখান থেকে তাকে কঠোর নিরাপত্তায় র্যাব, নৌ পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ আদালতে নিয়ে যায়। আদালতে নৌ পুলিশ পরিদর্শক ও তদন্তকারী কর্মকর্তা ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে হাজির করেন। এরপর আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের শুনানি শেষে বিচারক ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট শরীফ মাহমুদ সায়েম গণমাধ্যমকে বলেন, জাহাজে ৭ খুন সারাদেশের আলোচিত ঘটনা। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তাকে আদালতে উপস্থিত করে ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত ব্যাপক শুনানি শেষে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। আমরা আশাকরি এই আসামিকে ব্যাপক জিজ্ঞাসবাদের মাধ্যমে আসামির সাথে অন্য কেউ সংশ্লিষ্ট আছে কিনা এবং রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার জন্য কেউ জড়িত আছে কিনা তা বেরিয়ে আসবে।
গত ২৩ ডিসেম্বর চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার মেঘনা নদীর ইশানবালা মাঝেরচর খালের মুখে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা সিরাজগঞ্জগামী সার বোঝাই জাহাজ এমভি-আল বাখেরা
থেকে পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় রক্তাক্ত অবস্থায় তিনজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও দুজনের মৃত্যু হয়।
একজনকে গলায় মারাত্মক জখমসহ গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে পরে সেখান থেকে ঢাকা রেফার করা হয়।
খুন হওয়া ব্যক্তিরা হলেন-জাহাজের মাস্টার ফরিদপুর সদরের জোয়াইর গ্রামের গোলাম কিবরিয়া (৬৫), তার ভাগনে লস্কর- শেখ সবুজ (৩৫), সুকানি নড়াইলের লোহাগড়ার আমিনুল মুন্সী (৪০), লস্কর মাগুরার মহম্মদপুরের মাজেদুল ইসলাম (১৭), একই এলাকার লস্কর সজিবুল ইসলাম (২৬), ইঞ্জিন চালক নড়াইল লোহাগড়া এলাকার সালাউদ্দিন মোল্লা (৪০) এবং মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থানার বাবুর্চি রানা (২০)। এছাড়া আহত সুকানি জুয়েল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগে চিকিৎসাধীন।
নৌ পথে জাহাজের ভেতর বড় ধরনের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণে এবং রহস্য উন্মোচনে শ্রম মন্ত্রণালয় ৫ সদস্যে, জেলা প্রশাসনে ৪ সদস্যের এবং জেলা পুলিশ ৩ সদস্যের পৃথক তদন্ত টিম গঠন করেছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। আর জাহাজ মালিক মাহবুব মোর্শেদ মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে হাইমচর থানায় মামলাটি দায়ের করেন জাহাজের মালিক মাহাবুব মোর্শেদ।