জুলাই বিপ্লব ও অনিবার্য বাস্তবতা

মিয়া মোহাম্মদ তৌফিক।।

 

inside post

ষোল বছরের একদলীয় শাসনের পতন। এই পতন অনিবার্য বাস্তবতা। ছাত্র ছাত্রীদের কোটা বিরোধী আন্দোলনকে ঠেকাতে গিয়ে পঁচা শামুকে পা কাটার মতো অবস্থা হয়েছে আওয়ামী লীগের।
আওয়ামী সালতানাতের নির্লজ্জ পতন। কিন্তু কেন এমনটি হলো? বাংলাদেশের নির্বাহী বিভাগ থেকে শুরু করে সকল বিভাগ ছিল ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে। সকল রাজনৈতিক দল গুলো কার্যত অচল ছিল। রাজনৈতিক কর্মসূচি দিতে হলে অনুমতি নিতে হবে। সবাই শৃংখলে আবদ্ধ ছিল। মিথ্যা মামলা দিয়ে বাণিজ্য করা, মিথ্যা অজুহাতে থানায় নিয়ে আটকে রাখা,ইলেকট্রিক শক দেয়ার ভয় দেখিয়ে বিশাল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়া -এগুলো ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। আর কেউ অবাধ্য হলে গুম করে টাকা আদায় ও হত্যা করা। বিরোধী দলের ব্যবসা বাণিজ্যে হানা দিয়ে টাকা নেয়া ও পরবর্তীতে দখল করা। ক্রসফায়ারের ভয় দেখানো তো আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্ত ছিল। রাজনৈতিক নেতাদেরকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে হত্যা করে এরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। খুনী শেখ হাসিনা ভারতকে খুশি করানোর জন্য ইসলাম প্রিয় মানুষ গুলোকে জংগী বানিয়ে হত্যা করেছে। দিনের ভোট রাতে নিয়ে বাংলাদেশকে এক তামাশার রাজ্যে পরিণত করেছে। সকলের বাক স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল। ব্যাংক গুলো লুট করে খালি করে ফেলেছিল। দেশের বুদ্ধিজীবী, সাংস্কৃতিক কর্মী, সাংবাদিক, চিকিৎসক, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদেরকে গুম করে ফেলেছিল।

লেখক

চারিদিকে যখন এমনি এক পরিস্থিত ঠিক সে মুহূর্তে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের পুরাতন আন্দোলন নিয়ে মাঠে নামে কিছু তরুণ।
তাদেরকে আওয়ামী লীগ ও তাদের অংগসংগঠনের নেতা কর্মীরা রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ফলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল হতে থাকে।
দেশের আপামর ছাত্র জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমে আসে। কিন্তু ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ পুলিশ বিজিবি দিয়ে নিরস্ত্র ছাত্র জনতার উপর নির্বিচারে গুলিতে হত্যা করে। রংপুরে আবু সাঈদ ও ঢাকায় মুগ্ধকে হত্যা করলে দেশে ও বিদেশে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ঝড় উঠে। বিদেশি সংস্থা গুলো সরকারকে ধিক্কার দিতে থাকে। তারপরও শেখ হাসিনার সরকার আরো বেপরোয়া হয়ে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সব জেলায় আন্দোলনকারীদের উপর গুলি চালিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালায়। মৃত্যুর মুখেও ছাত্র জনতা আন্দোলন চালিয়ে যায়। ফলে লাশের মিছিল বড় হতে থাকে। পুলিশের সাঁজোয়া যান থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হয় ইয়ামিনকে। হেলিকপ্টার থেকে গুলিতে হত্যা করা হয় বাসায় বিছানায় শুয়ে থাকা শিশু সুমাইবাকে। হত্যা করা হয় আট বছরের স্কুলছাত্রী রিয়া গোপকে। জেলায় জেলায় মৃত্যুর মিছিল বাড়তে থাকে আর হসপিটালে গুলি খেয়ে চোখ হারা,পা হারা মানুষের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারী হতে থাকে তারপরও থেমে থাকেনি সরকার বিরোধী আন্দোলন।
চারিদিকে ব্যাপক সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ব্যাপক আকার ধারণ করে। অচল হয়ে পড়ে সারা দেশ। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার বাড়ি ঘেরাওয়ের পূর্ব মুহূর্তে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সে ভারতে পালিয়ে যায়। শেখ হাসিনার মন্ত্রী, আজ্ঞাবহ পুলিশ কর্মকর্তা,আমলা, এমপি সবাই পালিয়ে যায়। আবার কেউ কেউ গ্রেফতারও হয়। এভাবেই স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতন হয়। যা ইতিহাসে জুলাই বিপ্লব নামে লেখা থাকবে। পালিয়ে গিয়েও বসে নেই আওয়ামী লীগ। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে দেশের ইন্টারিম সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চক্রান্ত করছে। সম্প্রতি লুকিয়ে থাকা একজন সেনাবাহিনী কর্মকর্তার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের গেরিলা ট্রেনিংয়ের খবর ছাপা হয়েছে এবং তাকে এরেস্টও করেছে। দেশে আত্মগোপনে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা,আমলা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আবারো দেশে অরাজকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা এনসিপি নামে রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। এদের সাথে গোপালগঞ্জে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির সাথে সংঘর্ষ হয়েছে। ফলে বিপ্লব পরবর্তী সংষ্কার ও রাষ্ট্র মেরামতের কাজ করা কঠিন হয়ে উঠেছে। সবাই নির্বাচনী তফসিল নিয়ে ব্যস্ত।
কোন কোন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির খবর প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি নিয়ে নতুন বিতর্ক ও দল গুলোর মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। সব মিলিয়ে দেশে একটি হযবরল অবস্থা চলছে। পুলিশ ঠিক মতো কাজ করছে না। আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে। পাড়ায় পাড়ায় নীরব চাঁদাবাজি চলছে। দেখার কেউ নেই। লোকজনকে বলতে শোনা যায় আগেই ভাল ছিলাম। আগে একজন টাকা নিত আর এখন কয়েক জনকে দিতে হয়। এই পরিস্থিতিতে সব ভেদাভেদ ভুলে জুলাই বিপ্লবের শহীদ ও পংগু অসহায় লোকদের কথা ভেবে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আসুন আমরা একটি সুন্দর বাংলাদেশের জন্য ঐক্যবদ্ধ হই। নিজেকে ও দেশকে সংষ্কার করি। সকল স্বার্থ ভুলে দেশের মানুষকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের মতো একটি প্লাটফর্মে নিয়ে আসি। সৎ,যোগ্য ও শিক্ষিত মানুষগুলোকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করি। ভবিষ্যত ফ্যাসিস্ট মোকাবেলা করার জন্য যোগ্য প্রজন্ম তৈরি করি।
যোগ্য প্রজন্মই জাতিকে একটি সুন্দর বাংলাদেশ উপহার দিবে। শহীদী রক্তের বিনিময়ে সোনালী ভোর আসবেই।
লেখক:আহ্বায়ক,আমার বাংলাদেশ পার্টি,কুমিল্লা জেলা।

আরো পড়ুন