টমছমব্রিজে দুর্ভোগ

 

কুমিল্লা নগরীর টমছমব্রিজ মোড়। খানাখন্দ সড়ক, সড়কে বাজার, দিকনির্দেশনাহীন সড়কে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকে। পাশের চার জেলা ও দক্ষিণ কুমিল্লার সাত উপজেলার মানুষের নগরীতে প্রবেশের একমাত্র পথ টমছমব্রিজ মোড়। নগরীর প্রধান প্রবেশ পথে মানুষের ভোগান্তি এখন চরমে। অ্যাম্বুলেন্স, ট্রাক, বাস, বাঁশ প্রবেশে নেই শৃঙ্খলা। সমন্বয়হীনতা আর দায়িত্ব অবহেলার কারণে এটি হচ্ছে মনে করেন নগরবাসী। পরিকল্পিতভাবে নগরীর দক্ষিণাঞ্চলকে না সাজাতে পারলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম তার খেসারত দিকে হবে বলে মনে করেন সচেতনরা। এনিয়ে গত সপ্তাহে সাপ্তাহিক আমোদ পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

গংবাদে উল্লেখ করা হয়, ব্রিটিশ আমলে তৈরি কুমিল্লা-লাকসাম সড়ক। শতবছর পুরনো এ সড়কের কেন্দ্রবিন্দু টমছমব্রিজ মোড়। যানজট থেকে রক্ষায় বাস টার্মিনাল কান্দিরপাড় থেকে সদর হাসপাতাল রোড, সদর হাসপাতাল রোড থেকে টমছমব্রিজ, টমছমব্রিজ থেকে এক যুগ পূর্বে জাঙ্গালিয়া স্থানান্তর করা হয়। তবে টমছমব্রিজ মোড়ের সমস্যা সমাধান হয়নি। কুমিল্লা- নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক, টমছমব্রিজ-কান্দিরপাড় সড়ক, কোটবাড়ি বিশ্বরোড-টমছমব্রিজ সড়ক ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ যাতায়াতের মিলনস্থল টমছমব্রিজ মোড়।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়,মোড়ের সড়কের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ। ইপিজেড রোড উঁচু। গাড়ি উঠতে সময় নিচ্ছে। মোড়ের মধ্যে সিএনজি অটো রিকশা ও ব্যাটারি চালিত অটো রিকশার স্ট্যান্ড। সারা দিন থেমে যানজট। তার উপরে জাঙ্গালিয়া টার্মিনালের বাস টমছম ব্রিজের নিকট এনে ঘুরানো হচ্ছে। গরম ও বিকট হর্নের কবলে পড়ে যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে উঠছে।


টমছমব্রিজ এলাকার বাসিন্দা কুমিল্লা কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ হুমায়ূন কবীর মাসউদ বলেন, আমরা আশির দশক থেকে টমছমব্রিজের যে সড়ক দেখেছি, নগর থেকে মহানগর হওয়ার পর সড়ক প্রশস্ত হয়নি। যানবাহন বেড়েছে, মানুষ বেড়েছে। পরিকল্পিত ভাবে সড়কটি বড় করা দরকার। স্থায়ীভাবে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করাসহ ট্রাফিক বিভাগে জনবল বাড়ানো দরকার।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. মহিউদ্দিন বলেন, টমছমব্রিজের এ সমস্যার কারণে অ্যাম্বুলেন্সে রোগীর ভোগান্তি হয়। চিকিৎসক ও চিকিৎসা সেবা সংশ্লিষ্ট সবার সময় নষ্ট হয়। ইদানিং মেডিকেল রোডে বড় ট্রাকের প্রবেশ বেড়েছে। যার কারণ রড, সিমেন্টের দোকান বাড়ছে। সময় থাকতে এসব নিয়ে ভাবতে হবে।

নগরীর প্রবীণ নাগরিক ছড়াকার জহিরুল হক দুলাল বলেন, ব্রিটিশ আমলের এ রোড কুমিল্লার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সিটির উত্তরে গোমতী, পূর্বপাশে ভারতে, পশ্চিমে ক্যান্টনমেন্ট হওয়ার ফলে নগরী এখন দক্ষিণামুখী। সময় থাকতে পরিকল্পনা করা হয়নি। যারা শহরে প্রবেশ করছে, তারা কোন না কোন কাজেই প্রবেশ করছে। সুতরাং স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, বাজার, বহুতল ভবন পদুয়ারবাজার থেকে ২-৩ কিলো মিটারের মধ্যে করা দরকার। যেন মানুষকে কান্দিরপাড় প্রবেশ করতে না হয়। আর মূল সিটিতে বহুতল ভবনের অনুমোদন বন্ধ করে দেওয়া দরকার। কারণ এটা ছাড়া উপায় নাই।

জেলা ট্রাফিক বিভাগের প্রধান এমদাদুল হক বলেন,টমছমব্রিজে এখন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ৪ জন করে ৮ জন পুলিশ ডিউটি করে। মূল সমস্যা হলো সড়ক। সড়ক সংস্কার করতে হবে। মিড আইলেন্ড করতে হবে। কাঁচাবাজার ও অবৈধ স্থাপনা স্থায়ী উচ্ছেদ করতে হবে। যেহেতু এখানে চারটি সড়ক, মাঝে গোল চত্বর তৈরি করে দেয়া খুবই জরুরি। নাগরিকরা যদি সচেতন হন, চালকরা যদি ট্রাফিক আইন মেনে চলেন তাহলে ট্রাফিক পুলিশের দরকার হবে না।


সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ চলমান। এ কাজ শেষ হলে সাময়িক যে সমস্যা হচ্ছে তা সমাধান হবে।

কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. সফিকুল ইসলাম বলেন, টমছমব্রিজ মোড়ের সড়ক সংস্কার কাজ আমরা দ্রুত শুরু করবো। এটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। চারটি সড়কের দুই পাশে যদি ৮ জন পুলিশ সততার সাথে ডিউটি করেন তবে সমস্যার সমাধান হবে।
আমরা মনে করি, কুমিল্লা নগরীর টমছমব্রিজ মোড়ের সড়কে খানাখন্দ, সড়কে বাজারের কারণে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত যানজট লেগে থাকে। এবিষয়ে সিটি করপোরেশন ও ট্রাফিক বিভাগকে আরো বেশি আন্তরিক হতে হবে। তাদের আন্তরিক ভূমিকাই পারে নগরবাসীকে প্রশান্তি দিতে।