ড. মিজানুর রহমান আজহারীর নানা, পীর গোলাম সারোয়ার সাঈদী আর নেই

আমোদ ডেস্ক।।

উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমে দীন, আড়াইবাড়ী কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ ও আড়াইবাড়ী দরবার শরীফের পীর আল্লামা গোলাম সারোয়ার সাঈদী আর নেই। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মরহুমের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তার অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) রাতে তাকে হাসপাতালের আইসিইউতে নেয়া হয়েছে। এপোলো হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকার পর শনিবার ভোর সাড়ে চারটায় তিনি ইন্তেকাল করেন।

মরহুমের জানাজার নামাজ  (শনিবার) ২১ নভেম্বর বাদ আসর আড়াইবাড়ী কামিল মাদরাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হবে।

উল্লেখ্য গোলাম সারোয়ার সাঈদী আড়াইবাড়ীর মরহুম পীর আল্লামা গোলাম হাক্কানীর (রহ.) সাহেবজাদা, আল্লামা কামালুদ্দিন জাফরীর পৌত্রা ও ড. মিজানুর রহমান আজহারীর নানা। তিনি ছিলেন আরো অনেক আলেমের আত্মীয়।

 

ইসলামের খেদমতে তিনি গড়ে তোলেন আড়াইবাড়ী ইসলামিয়া ছায়েদীয়া এতিমখানা, লিল্লাহ বোর্ডিং, আড়াইবাড়ী হাক্কানীয়া হাফেজী মাদরাসা, আড়াইবাড়ী সাইয়েদা সুরাইয়া নূরানী মাদরাসা, ইসলামী বুক ক্লাব। বর্তমানে ইবতেদায়ী, জুনিয়র, দাখিল, আলিম ও ফাযিল কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে।

জেলা সদর ব্রা‏হ্মণবাড়িয়া থেকে উপজেলার সংযোগ পথের গাঁ ঘেঁষে পশ্চিম পাশের্^ মাদরাসা একাডেমিক ভবনসমূহ। উত্তর ভিটিতে রয়েছে দু’তল ও তিনতলা ভবন আর দক্ষিণ ভিটিতে রয়েছে একতল ও দুতল ভবনসমূহ। ইউ প্যাটার্নে ভবনসমূহ নির্মিত। মাঠের পশ্চিম পাশের্^র ঐতিহাসিক তিন গম্বুজবিশিষ্ট সুদর্শন প্রাচীন মসজিদটি মরহুম আল্লামা মুহাম্মদ গোলাম হাক্কানী (র.) সাহেবের চাচাতো ভাই মরহুম আবদুর রহিম (অব.) ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের ছেলে বিশিষ্ট শিল্পপতি একেএম বদিউল আলম সাহেবের আর্থিক সহায়তায় পূণর্নির্মাণের কাজ চলছে। মাদরাসার ভবন সংস্কার ও হাফেজী মাদরাসার ভবন নির্মাণ এবং পরিচালনায় বদিউল আলম সাহেবের আর্থিক সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। ডিসি রোডের পূর্ব পাশের্^ রয়েছে দ্বিতল ভবন ও মাদরাসার বিশাল মাঠ।

আড়াইবাড়ী ইসলামিয়া সাঈদীয়া কামিল মাদরাসাটি এলাকায় শিক্ষা বিস্তার, অনৈসলামিক কার্যকলাপ রোধসহ বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকা- করে থাকে। ২০০৪ সালে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গৌরব অর্জন করে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজ উদ্দিন আহমেদ কর্তৃক ক্রেস্ট ও সনদপত্র লাভ করে। ইসলামী শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক ও তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে কম্পিউটার এবং বিজ্ঞান শিক্ষা এগিয়ে চলছে। পৌর সদরের এ মাদরাসায় প্রায় সহ¯্রাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রতি বছর ভালো ফলাফল অর্জনের মাধ্যমে মেধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে।

মাদরাসায় রয়েছে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার। এতে অনেক দূর্লভ কিতাবাদি আছে যা মরহুম পীর আল্লামা আছগর আহমাদ (র.) ও আল্লামা মুহাম্মদ গোলাম হাক্কানী (র.) সংগ্রহ করেছিলেন। দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, ষান্মাসিক, বার্ষিক পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী এবং বিভিন্ন জার্নাল পাঠ করে পাঠক-লেখক তাদের চাহিদা পূরণ করে থাকে। প্রযুক্তি প্রেমীদের জন্য রয়েছে আধুনিক সুসজ্জিত অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন একটি কম্পিউটার ল্যাব। এতে সুশৃঙ্খলভাবে শিক্ষার্থীরা ব্যবহারিক ক্লাশে অংশ গ্রহণ করে থাকে। শিশু শ্রেণির ক্ষুদে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে কামিল (মাস্টার্স) পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীরা পর্যায়ক্রমে ল্যাবরেটরি ব্যবহার করে  চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শরীক হয়ে দেশ-বিদেশে অনলাইন জব করতে সক্ষম হচ্ছে। ইন্টারনেট ব্যবহার করে দুনিয়ার সকল সুবিধা ভোগ করতেও পিছিয়ে নেই। বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রয়োজনীয় রাসায়নিক পদার্থ বিদ্যমান রয়েছে। এতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও আবিষ্কারের কাজ অনুশীলন করছে।

ছাত্রাবাসে রয়েছে পিতৃ-মাতৃহীন ও অসহায় শতাধিক ছাত্র। এরা মাদরাসার শিক্ষক কর্মচারীদের আদর সোহাগে হেসে খেলে শিক্ষা গ্রহণ করছে। নূরানী মাদরাসায় ছন্দের তালে তালে মাসয়ালা মাসায়েল, কোরআনের সূরা-কিরাত, হাদীস-কালাম, ছড়া-কবিতা, নামতা-শতকিয়া মুখস্থ করছে। হাফেজী মাদরাসায় বিশুদ্ধভাবে কোরআন তিলাওয়াত ও মুখস্থ করছে এক ঝাঁক ক্ষুদে শিক্ষার্থী। প্রতি বছর হিফজ শেষ করে সমাপনী সনদ ও পাগড়ী নিয়ে গৌরবান্বিত হচ্ছে অনেকেই।

শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত কম্পিউটার ও বিজ্ঞান মেলায় অংশ গ্রহণ, সাহিত্য সাময়িকী ও দেয়ালিকা প্রকাশ, ডিবেডিং ক্লাশ, লাইব্রেরী ওয়ার্ক, পত্র-পত্রিকা পাঠ, ইসলামি সাহিত্য ও গল্প-কবিতার পুস্তক অধ্যয়ন, কুইজ প্রতিযোগিতা, স্বাস্থ্য সচেতন হিসেবে খেলাধুলার আয়োজন ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ, স্কাউটিংসহ যাবতীয় সহপাঠক্রমিক কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত করে থাকে। মাদরাসার বর্তমান অধ্যক্ষবিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ হযরত মাওলানা মোহাম্মদ গোলাম সারোয়ার সাঈদী দেশ-বিদেশে বিভিন্ন সেমিনার সিম্পোজিয়ামে অংশ গ্রহণের মাধ্যমে অর্জিত অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রতিফলিত হয়ে থাকে।

 

সূত্র: নয়াদিগন্ত, ইনকিলাব।