তেলিকোনার পরিত্যক্ত স্থান এখন রঙিন পার্ক
ইলিয়াস হোসাইন।।
পার্কের প্রবেশপথ। ডান-বামে দাঁড়িয়ে হাত মেলে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে দুটি কংক্রিটের বৃক্ষ। মাঝখানে মুখোমুখি একজোড়া জিরাফ। চারদিকের দেয়ালে সিমেন্টের উপর খোদাই করা লাল-নীল-সবুজ রঙেটানা বানর,হাতি,ছুটে চলা হরিণ,ডাইনোসর,বাঘ,সাপ,মাছসহ শিশুদের আকর্ষণ করা পশু-পাখিসহ বাহারি প্রাণীর চিত্র। যা শিশুমনকে আকর্ষণ করে। কুমিল্লা নগরের তেলিকোনা। চকবাজার থেকে প্রায় ১০০গজ পূর্বে চৌরাস্তার মোড় থেকে একটু উত্তরে গেলে রাস্তার পশ্চিমপাশে দেখা যায় শিশু বিনোদনের জন্য গড়ে উঠা নগরীর নতুন শিশুপার্ক”কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন শিশুপার্ক-২”। ৩৬শতক জায়গা জুড়ে গড়ে উঠা পার্কটিতে বসানো হয়েছে প্রায় ৩০-৪০টি রাইড। যাতে শিশুরা বিনামূল্যে স্বাচ্ছন্দ্যে চড়তে পারবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ক’দিন আগেও এ স্থান ছিলো বাসিন্দাদের ময়লা-আবর্জনা ফেলা পরিত্যক্ত জায়গা। এর পাশ দিয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া শিশুরা পেতো বিকট দুর্গন্ধ। নাক চেপে হাটতো স্থানীয় পথচারী। অথচ মাত্র দু’মাসের ব্যবধানে সাম্প্রতিকচিত্র একেবারেই ভিন্ন!
স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বিকেলে ঘুরতে আসা স্থানীয় উৎপল পাল অভিব্যক্তি জানান, সন্তান নিয়ে বেরুবার সময় পাইনা। বাসার পাশেই নতুন বিনোদন কেন্দ্র, তাই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঘুরতে আসা। আমাদের শিশুরা হাসি-খুশি-হইহুল্লোড় উৎসব মাখা একটি বিকেল অতিবাহিত করার বিনোদ কেন্দ্র পায়না। এর জন্য ছুটে যেতে হয় ধর্মসাগর নগর উদ্যানে। তারমধ্যে সেখানে শিশুদের রাইড চড়তে প্রতিটি রাইডের জন্য ৩০-৫০টাকায় টিকেট ক্রয় করতে হয়। সেই তুলনায় নিজের এলাকায় এমন সুন্দর একটি পার্ক অতিস্বল্পসময়ে গড়ে উঠেছে। কর্তৃপক্ষ বিনামূল্যে রাইড চড়ার সুযোগ করে দিয়েছে। এটা আমাদের স্বল্পআয়ের মানুষের জন্য ভীষণ আনন্দের ব্যাপার।
দশ বছর বয়সী শিশু ইমন,পার্কের পাশেই বাড়ি। কয়েকজন সমবয়সী বন্ধু মিলে পার্কের রাইড চড়তে এসেছে। মুচকি হাসিতে অভিমত জানান, নতুন পার্ক অনেক সুন্দর! এখানে অনেক রাইড আছে। আমরা খুব মজা পাচ্ছি। স্কুল শেষ করে বিকেলে রাইড চড়বো তা ভেবে খুশি লাগে।
আরেক শিশু মিলন বলেন, আমরা আগে মোবাইল ফোনে গেইমস খেলতাম। এখন বিকেলে এখানেই চলে আসি। টাকা ছাড়া রাইড চড়ি। দেয়ালে অনেক সুন্দর সুন্দর প্রাণীর ছবি আঁকা আছে। এগুলো দেখতে ভালো লাগে। তাই স্কুল শেষে ঘরে বই রেখে সেন্ডেল পরে দৌঁড়ে চলে আসি।
পার্কের রূপকার শিল্পী মোহাম্মদ শাহিন জানান-নগর পিতা মনিরুল হোক সাক্কুর নিজ অর্থায়নে
১৬নভেম্বর থেকে পার্কের কাজ সূচনা করি। এতো কম সময়ে এত বড় একটি কাজ সম্পূর্ণ করা আসলেই কঠিন।
তবুও রাত-দিনের পরিশ্রমে আমরা কাজটি সম্পূর্ণ করতে সক্ষম হয়েছি। ৩১ডিসেম্বর মাননীয় এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এবং নগর পিতা মনিরুল হক সাক্কুসহ স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার মিলে পার্কটি উদ্বোধন করেন। একজন শিল্পী অর্থ নয়, শোভা আর তৃপ্তি দিয়েই তার শৈল্পিক কাজের পারিশ্রমিক মূল্য নির্ণয় করে!
আশা ব্যক্ত করি এই বিনোদিত স্থানটি আমাদের শিশুদের চিত্তবিনোদনের অনুপম জায়গা হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে উঠবে। বিশ্বাস করি আমাদের শিশুরা নিয়মিত সুস্থ শিল্পবিনোদে বিচরণ থাকলে ওরা কখনোই হিংস্র হবার সুযোগ পাবেনা। নতুন শিশু পার্কটি অচিরেই কুমিল্লা নগরীর শিশুদের চিত্তবিনোদনের চমকপ্রদ স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে।
পার্ক প্রতিষ্ঠাতা সিটি কর্পোরেশন মেয়র মনিরুল হোক সাক্কু জানান,দীর্ঘদিন তেলিকোনার জায়গাটা ময়লা-আবর্জনার স্তূপে পরিত্যক্ত পড়ে ছিলো। আশপাশের সব ওয়ার্ড মিলে প্রায় ৫০হাজার মানুষের বাস। সেখানের স্বল্প আয়পরিবারের সংখ্যাই বেশি। তাদের সন্তানদের বিবেচনা রেখেই নিজের ফ্ল্যাট বিক্রি করে আমার স্ত্রী আফরোজা জেসমিন সাক্কুর অর্থায়নে এই উদ্যোগ নিয়েছি। অনেক ধরনের রাইড বসিয়েছি। সবগুলো রাইডই বিনামূল্যে উন্মুক্ত করে দিয়েছি।