ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৪৪ ধারা জারি : বিএনপির তিন নেতা আটক

 

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরে একই স্থানে বিএনপি ও ছাত্রলীগ সমাবেশ ডাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। শুক্রবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হায়াত-উদ্-দৌলা খান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। শনিবার (৮ জানুয়ারি) সকাল ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত শহরের ফুলবাড়িয়া কনভেনশন সেন্টার ও এর সংলগ্ন বালুর মাঠ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকায় এ আদেশ কার্যকর থাকবে। এর আগে জেলা বিএনপির শীর্ষস্থানীয় তিন নেতাকে আটক করেছে পুলিশ।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবীতে আগামীকাল শনিবার শহরের ফুলবাড়িয়ায় মহাসমাবেশ আহবান করে জেলা বিএনপি। একই স্থানে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্র সমাবেশের ডাক দেয় জেলা ছাত্রলীগ। এতে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ায় পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা থাকে। তাই ফৌজধারী কার্যবিধির ১৮৯৮ এর ১৪৪ ধারায় বিধান মোতাবেক ফুলবাড়িয়া কনভেনশন সেন্টার ও এর সংলগ্ন বালুর মাঠ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকায় শনিবার ভোর ছয়টি থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। একই সাথে চারজনের অধিক ব্যাক্তির জমায়েত, রাজনৈতিক প্রচারণামূলক কর্মকাণ্ড, মাইক বা প্রচারযন্ত্রের ব্যবহারও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর আগে শুক্রবার দুপুরে সমাবেশকে কেন্দ্র করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির তিন নেতাকে আটক করে পুলিশ। আটককৃত নেতারা হচ্ছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. জিল্লুর রহমান, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকন ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ। আটককৃত জহির এবং সিরাজ বর্তমান আহবায়ক কমিটিরও সদস্য।

জানা গেছে,গত সপ্তাহে জেলা বিএনপি সমাবেশ আহবান করে। এর আগেও জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সমাবেশ আহ্বান করা হয়। তবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের কারণে সে সময় সমাবেশ করতে পারেনি। গত ৫ জানুয়ারি পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবী ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবীতে সমাবেশ আহ্বান করে জেলা বিএনপি। আহুত সমাবেশে কেন্দ্রীয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এম.পি, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুইয়াসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে জেলা ছাত্রলীগও একই দিনে, একই স্থানে দুপুর তিনটায় ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা বাষিকী উপলক্ষে ছাত্র সমাবেশের ডাক দেয়। এ নিয়ে শহরে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। জেলা বিএনপি তাদের সমাবেশ সফল করতে বিভিন্ন স্থানে প্রচারণা চালিয়েছে। ছাত্রলীগও সভা করতে মরিয়া। শহরজুড়ে বিরাজ করতে থাকে টান টান উত্তেজনা। এতদসত্ত্বেও জেলা বিএনপি তাদের সমাবেশ সফলে প্রচার-প্রচারণা চালানোসহ সকল প্রস্তুতিও সম্পন্ন করে। জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান, ‘আমাদের সমাবেশের জন্য শহরের তিনটি জায়গা পছন্দ করা হয়। এর মধ্যে পৌর মুক্তমঞ্চ, লোকনাথ ময়দান (ট্যাঙ্কেরপাড়) এবং ফুলবাড়িয়া কনভেনশন সেন্টার। সবদিক বিবেচনা করে ফুলবাড়িয়া কনভেনশন সেন্টার এলাকাকেই নির্ধারণ করা হয়। অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয়া হয় জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে। পুলিশের পক্ষ থেকে ফুলবাড়িয়া কনভেনশন সেন্টার এলাকায় সমাবেশ করার মৌখিক অনুমতিও দেওয়া হয়। এর পরপরই আমরা প্রচার-প্রচারণা চালাই।’ অপরদিকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল বলেন, ‘ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আমরা সেখানে ছাত্র সমাবেশের আহ্বান করেছি।’

একই স্থানে বিএনপির সমাবেশ ও ছাত্রলীগের ছাত্র সমাবেশ আহবানকে কেন্দ্র করে জেলা শহরে বিরাজ করছে টান টান উত্তেজনা। এরই মাঝে শুক্রবার শহরের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের তৎপরতা জোরদার করা হয়। এদিকে বিএনপির সমাবেশের একদিন আগে দলের নেতাদের আটক অভিযান শুরু করে পুলিশ। শুক্রবার দুপুরে সমাবেশকে কেন্দ্র করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির তিন নেতাকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. জিল্লুর রহমান, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকন ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ। আটককৃত জহির এবং সিরাজ বর্তমান আহবায়ক কমিটিরও সদস্য। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি) মো. এমরানুল ইসলাম বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ‘একই দিনে, একই স্থানে উভয় পক্ষ সমাবেশ ডাকায় জেলা প্রশাসন থেকে কোন অনুমতি দেয়নি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জেলা বিএনপির তিন নেতাকে আটক করা হয়েছে। শহরে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।’

 

বিএনপি আহুত সমাবেশস্থলেই ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা ছাত্রলীগও একই জায়গায় একই সময়ে ছাত্র সমাবেশ আহ্বান করে। এতে করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় শনিবার ভোর ছয়টা রাত ১২ টা পর্যন্ত সমাবেশস্থলসহ গোটা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা ম্যাজিষ্টেট। শুক্রবার সন্ধ্যের পর জেলা তথ্য অফিসের উদ্যোগে গোটা শহরে ১৪৪ ধারা জারির বিষয়ে মাইকিং করা হয়।