দুই বছর নিখোঁজ জেলা ত্রাণ কর্মকর্তার স্ত্রী, স্বামীর বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ

আমোদ প্রতিনিধি।

কুমিল্লায় জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জাহিদ হাসান খানের স্ত্রী হাসনা হেনা রহমান দুই বছর ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। ওই গৃহবধূর মা ও ভাই আনিছুর রহমানসহ পরিবারের দাবি- পরকীয়া প্রেমের কারণে স্বামীসহ তার পরিবারের সদস্যরা হাসনা হেনাকে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলেছে। সোমবার নগরীর মনোহরপুর এলাকার বাসায় আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে তারা এ অভিযোগ করেন। হাসনা হেনার স্বামী জাহিদ হাসান খান কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার গন্ধমতি গ্রামের আবদুল জলিল খানের ছেলে, তারা নগরীর পুলিশ লাইন এলাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন। জাহিদ হাসান খান বর্তমানে নোয়াখালী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা পদে কর্মরত।

সংবাদ সম্মেলনে হাসনা হেনা রহমানের মা মমতাজ বেগম ও তার ভাই আনিছুর রহমান জানান, ২০১২ সালে হাসনার সাথে জাহিদ হাসানের বিয়ে হয়। তাদের ৭ বছর বয়সের ছেলে সন্তান রয়েছে। ২০২০ সালের ২৯ জুলাই সন্ধ্যায় হাসনা হেনা তার স্বামীর কুমিল্লা নগরীর বাসা থেকে নিখোঁজ হয়েছেন বলে তার স্বামী কুমিল্লা কোতয়ালী থানায় জিডি করেন। এছাড়া ওই বছরের ৭ আগস্ট জাহিদ হাসান তার স্ত্রীকে অপহরণ করা হয়েছে মর্মে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেন। সংবাদ সম্মেলনে হাসনা হেনার মা-ভাইসহ পরিবারের সদস্যরা বলেন, জাহিদ হাসানের তার চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রীসহ বিভিন্ন মহিলার সাথে পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করায় তার স্বামী ও পরিবারের লোকজন পরিকল্পিতভাবে হাসনাকে হত্যা করে থানায় নিখোঁজের জিডি ও অপহরণের মামলা করে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে। তারা দেখছি বলে সময় ক্ষেপন করছেন। জাহিদ হাসানের দায়ের করা মামলাটি থানা ও ডিবি পুলিশের পর বর্তমানে তদন্ত করছে র‌্যাব। এদিকে তার স্বামী ও পরিবারের সদস্যদের হাসনাকে উদ্ধারে অবহেলা দেখে আদালতে হাসনার মা মেয়ের স্বামী জাহিদ হাসান খান, তার বাবা-মা, ভাই-বোনসহ ৬ জন ও অজ্ঞাতনামা ৫ জনকে বিবাদী করে আদালতে মামলা দায়ের করেন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে হাসনার মা বলেন, হাসনা তার স্বামীর বাড়িতেই ছিল, সেখান থেকে নিখোঁজ হয়েছে বলা হচ্ছে। ঘটনার দিন তার স্বামী জাহিদ হাসান তাদের আলমারি খুলে নগদ টাকা, এটিএম ও এনআইডি কার্ড, স্বর্ণালঙ্কার ও কাপড়সহ সবকিছু দেখিয়েছে। এছাড়া তার ব্যাংক হিসাবেও টাকা রয়েছে। কোনো কিছু সঙ্গে না নিয়ে হাসনা কেনই-বা নিখোঁজ হবে। বিষয়টি পুলিশ কর্মকর্তা বাবুলের স্ত্রী হত্যার পর তার নাটকীয়তার মতো বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
হাসনা হেনার স্বামী নোয়াখালী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জাহিদ হাসান খান বলেন, তাকে সর্বত্র খোঁজা হয়েছে। তাকে উদ্ধারে মামলা দায়ের করা হয়েছে, যা তদন্তাধীন আছে। আমার বিরুদ্ধে শাশুড়ির দায়ের করা মামলাটি আদালত খারিজ করে দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ মিথ্যা। তারা তার চরিত্র হরণ করছেন বলেও তিনি দাবি করেন।
এ বিষয়ে র‌্যাব-১১ কুমিল্লা ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন বলেন, জাহিদ হাসান খানের মামলা ও ভিকটিম উদ্ধারের বিষয়ে প্রায় এক বছর ধরে আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। যে কোনো সময় আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।