ধ্বংসের পথে চাঁন্দ নাগেরচর জমিদার বাড়ি

অফিস রিপোর্টার:
ধ্বংসের পথে রয়েছে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার চাঁন্দ নাগেরচর জমিদার বাড়ি। ১২৮ বছরের মুসলিম জমিদার বাড়িটি এখনও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বৃহত্তর দাউদকান্দি উপজেলা থেকে ভাগ হয়ে আসা তিতাস উপজেলায় অবস্থিত এই জমিদার বাড়িটি তিতাস উপজেলা থেকে প্রায় ৩কিলোমিটার দক্ষিণে ও দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর বাজার থেকে দেড় কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
নিঁপূণ কারুকাজ ম-িত তিনটি বাড়ি নির্মাণ করেন জমিদার মাহাতাব ভুইয়া। এতে ২৩ কক্ষ রয়েছে। প্রথম ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয়তলায় তিনটি করে ছয়টি কক্ষ, দ্বিতীয় ভবনের নীচ তলায় পাঁচটি। দ্বিতীয় তলায় তিনটি কক্ষ ও তিনতলা বিশিষ্ট তৃতীয় ভবনের প্রথম তলায় চারটি, দ্বিতীয় তলায় চারটি ও তৃতীয় তলায় রয়েছে একটি বারান্দার মতো খোলা কক্ষ। এই জমিদার বাড়িটির পাশে রয়েছে শৈল্পিক কারুকার্য খচিত কয়েকটি কক্ষ, রয়েছে একটি আন্ধার কোটা। যেখানে রাখা হতো কাঁচা পয়সা ও স্বর্ণ মুদ্রা, একটি মসজিদ যেটি এখন সংস্কার করা হয়েছে মুসল্লিদের নামাজের জন্য, বৈঠকখানা যেখানে বসে জমিদারগণ বিচারকার্য পরিচালনা করতেন। রয়েছে একটি ৬০ ফুট গভীর ইন্দ্রা কূপ। এই কূপের পানি মুসল্লিরা ওযুর কাজে ব্যবহার করতেন। আজও মুসল্লিরা নামাজ পড়তে এসে অজুর কাজে এই কূপের পানি ব্যবহার করেন, যদিও সংস্কারের অভাবে কূপের পানি থেকে দুর্গন্ধ আসে।
দীর্ঘদিন ধরে অযতœ-অবহেলায় ধ্বংস হতে বসেছে জমিদার বাড়িটি। ইতোমধ্যে ভেঙে পড়তে শুরু করেছে এর অবকাঠামো। সংস্কারের মাধ্যমে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারলে বাড়িটি হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি ফুল মেহের বিবি (৯৮) জানান , একশত সাতাশ বছর নয় মাস পূর্বে নির্মিত জমিদার বাড়ির এই তিনটি ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল বাংলা সাল ১২৯৯ তে। নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছিল ১৩০৬ সালে। ভবন তিনটি নির্মাণে সময় লেগেছিল প্রায় ৭ বছর। সেই জমিদার বাড়ির ভবন তিনটি নির্মাণে ইটের যোগান দিতে জমিদার মাহতাব ভুইয়া নিজেই একটি ব্রিক ফিল্ড তৈরি করেছিলেন।
এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি আ. সামাদ ভুইয়া (৮৫) ও জসিম উদ্দিন ভুইয়া (৭৫), বিশিষ্ট সমাজসেবী মো. মহসিন মাস্টার, হাসান মো. ডালিম ভুইয়াসহ এলাকাবাসী জানান, জমিদার মাহতাব ভুইয়া মারা যাওয়ার পর তার দুই ছেলে আশ্রুফ ভুইয়া এবং আরমান ভুইয়া জমিনদারি দেখভাল করতেন। পরবর্তীতে নাতি মুল্লুক চাঁদ ভুইয়া, নজুমদ্দিন ভুইয়া, আলিমুদ্দিন ভুইয়া, উজির ভুইয়া, নজির ভুইয়া, কালাই ভুইয়া, মজু ভুইয়াকে জমিদার বাড়িটিতে বসবাস করতে দেখা গেছে। এক পর্যায়ে তার উত্তরসুরীরা কেউ গ্রামে কেউ শহরে আবার কেউ বিদেশ পাড়ি দেওয়ায় জমিদার বাড়িটি অবহেলায় অযতেœ পড়ে আছে।
মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক সরকার এ প্রসঙ্গে জানান, প্রাচীন এই জমিদার বাড়িটি মজিদপুর ইউনিয়নের ঐতিহ্য। এটি সংরক্ষণ ও দর্শনীয়ভাবে গড়ে তোলা আমাদের দায়িত্ব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসা. রাশেদা আক্তার বলেন, মজিদপুর চাঁন্দ নাগেরচরে অবস্থিত মুসলিম জমিদার বাড়িটি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এ বিষয়ে প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক ড. আতাউর রহমান জানান, বাংলাদেশে মুসলিম জমিদার বাড়ির সংখ্যা খুবই কম। পরির্দশন শেষে জমিদার বাড়িটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করব।